দক্ষিণ সুদানে প্রশংসিত বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা

দক্ষিণ সুদানে প্রশংসিত বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা
‘কুষ্ঠরোগী হিসাবে পরিবার এবং গ্রাম আমাদেরকে ত্যাগ করে। সবাই আমাদেরকে ভুলেই গিয়েছিল, আমাদের দুর্দশার অন্ত ছিল না। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে দেবদূতের মতো হাজির হলো।’

এ মন্তব্য দক্ষিণ সুদানের আগক কুষ্ঠরোগী নিরাময় কেন্দ্রের একজন নারী কুষ্ঠরোগী মাজেট ভিওলার।

স্থানীয় নারীনেত্রী মিস আলেক্স ভিওলার মন্তব্য, ‘পরিবার-পরিজন রেখে একজন নারী কিভাবে সম্মুখসারিতে যুদ্ধরত থাকতে পারেন, সেটা আমার কাছে কল্পনার অতীত ছিল। বাংলাদেশি নারীদের সংস্পর্শে এসে আমি অভিভূত হয়েছি। দক্ষিণ সুদানের সামর্থ্যবান নারীদের আমরা সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য উদ্ধুদ্ধ করবো।’

সম্প্রতি আনমিস (UNMISS) এর এসআরএসজি (SRSG), ফোর্স কমান্ডার, ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার তাদের পরিদর্শনের সময় নারী শান্তিরক্ষীদের কার্যকর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ দলে রয়েছেন ০৩ জন অফিসার ও ১৬ জন নারী সৈনিক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুগোপযোগী উন্নত প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলার পাশাপাশি দক্ষিণ সুদানে আগমনের পূর্বে (৩২ বীর) ব্যানব্যাট-৩ এবং বিপসট (Bipsot) এর তত্ত্বাবধানে দক্ষতা উন্নয়ন ও শান্তিরক্ষা মিশন সংশ্লিষ্ট বিভিন্নমুখী উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদেরকে পরিপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। মিশন এলাকায় আগমনের পর হতে তারা শান্তিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রম এবং যুদ্ধপীড়িত জনগণকে সহায়তাসহ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। ইতোমধ্যে দক্ষিণ সুদানের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত সদর দপ্তর, সেক্টর সদর দপ্তর ও ফিল্ড অফিসসহ সর্বত্র তাদের তৎপরতা এবং ব্যাপক সাফল্য সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীদেরকে শুধুমাত্র সাদরে গ্রহণ করেনি বরং তাদের নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীদের সম্পৃক্ততায় উদ্ধুদ্ধ হয়েছে। ব্যানব্যাট-৩ এর সকল অপারেশনাল ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে তাদের সুদীপ্ত পদচারণা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের গতি ত্বরান্বিত করেছে। নারী সৈনিকগণ তাদের পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি সকল দায়িত্ব যেমন অস্থায়ী ক্যাম্প (TOB) পরিচালনা, সীমানা নিরাপত্তা, নিরাপত্তা টহলসহ সকল ধরনের অপারেশনাল টহলে অংশগ্রহণ করে থাকেন। স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের প্রাণবন্ত সম্পৃক্ততা সফলতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করছে।

জানা যায়, দক্ষিণ সুদানের বাহার-আল-গাজাল এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন-৩ (ব্যানব্যাট-৩)-এর সাথে নিয়োজিত নারী শান্তিরক্ষীরা তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুদ্ধপীড়িত নারী ও শিশুদের সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁদের প্রশংসিত কর্মকাণ্ডের কথা আনমিস মিডিয়া যেমন- ওয়েবসাইট, ফেসবুক, বেতার এবং সংবাদপত্রে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।

বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীদের স্থানীয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আগক কুষ্ঠরোগী নিরাময় কেন্দ্রের অবহেলিত রোগীদের সহায়তার জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর ক্রিসমাস উদযাপন এবং মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সহায়তার আয়োজন করে। ব্যানব্যাট-৩ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীদের সাথে ওই কেন্দ্রের রোগীরা নেচে-গেয়ে দিনটি আনন্দের সাথে উদযাপন করেন। বাংলাদেশি নারী সেনা সদস্যরা রোগীদের খোঁজখবর এবং মতবিনিময়ের পাশাপাশি চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে মৃতপ্রায় কেন্দ্রটিতে নতুন প্রাণ সঞ্চারে সক্ষম হন।

মাজক নামক স্থানে বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীদের সহায়তায় নারী পশুপালকরা যেভাবে উপকৃত হয়েছেন, তা ক্যাথলিক রেডিও নেটওয়ার্ক (CRN)-এর এক সংবাদে উঠে আসে। এতে একজন স্থানীয় নারী পশুপালককে উদ্ধৃত করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি এত দিন জানতাম না কেন আমাদের অসংখ্য গবাদি পশু মারা যায়। আজ আমাদের চক্ষু উন্মোচিত হয়েছে, আমরা ব্যানব্যাটের নারীদের কাছ থেকে যে ওষুধ এবং পরামর্শ পেয়েছি, সেগুলো আমাদের জন্য অবশ্যই সহায়ক হবে।’

নারীদের সমতা নিয়ে আন্দোলনরত স্থানীয় নারীনেত্রীরা বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীদের কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ। ওয়াও আইনসভার ডেপুটি স্পিকার ও স্থানীয় নারীনেত্রী মিস আলেক্স ভিওলার নেতৃত্বাধীন নারীসংগঠনগুলো বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীদলের সাথে মতবিনিময়সভাসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তারা বাংলাদেশি নারীদের সৈনিক পেশার মতো এমন কঠিন পেশায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দক্ষিণ সুদানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দায়িত্ব পালনে অর্জিত সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত। তারা স্থানীয় নারীদের বাংলাদেশি নারীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। এছাড়াও স্থানীয় নারী নেতৃবৃন্দের উদ্দ্যোগে বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীদের সাথে স্থানীয় নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে এক প্রীতি ভলিবল ম্যাচ আয়োজিত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা আনার নৈতিক অবস্থানের পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীদের ক্রমবর্ধমান হারে সম্পৃক্ত করার জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন-৩-এর সাথে নিয়োজিত নারী শান্তিরক্ষীগণের কর্মতৎপরতা। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ক্রমোন্নতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও সর্বক্ষেত্রে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধক্লান্ত ও বিপর্যস্ত সমাজে যেখানে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষীরা তাদের জন্য আশির্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের সমন্বিত কর্মদক্ষতা দক্ষিণ সুদানের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সার্বিক কৌশল নির্ধারণসহ ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুদের সমস্যা সমাধানের উপায় নির্ধারণে একটি সেতুবন্ধ রচনায় সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বৃহত্তর এবং টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
নির্বাচন ঘিরে সেন্টমার্টিনের পর্যটন বন্ধ ৩ দিন
মেট্রোরেলে মাছ-মাংস-সবজি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু