অব্যাহত ধসে দিশেহারা বিনিয়োগ কারীরা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

অব্যাহত ধসে দিশেহারা বিনিয়োগ কারীরা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে গত সোমবার বিকেলে ব্যাংক মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠক শেষে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়োনো হবে। এমন আশ্বাসের পরও বুধবার শেয়ারবাজারে ধস নামে।

পুঁজিবাজার বন্ধের নানামুখী গুজব এবং করোনা আতঙ্কে পতন অব্যাহত থাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে এবং পুঁজিবাজারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রভাব থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে বড় অর্থনীতির দেশগুলো ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে বুধবার (১৮ মার্চ) এশিয়ার শেয়ারবাজার কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতায় ঘুরতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এমনিতে তলানীতে অবস্থান করলেও সম্পূর্ণ এর বিপরীতে চিত্রে অবস্থান করছে।

বিশ্ব পুঁজিবাজারের দিকে তাকালে দেখা যায়, সাম্প্রতিক করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের এক লাখ কোটি ডলারের প্রণোদনা তহবিলের ঘোষণায় মঙ্গলবার ওয়ালস্ট্রিটের সূচকগুলো ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাবে আজ সকাল থেকেই ইতিবাচক এশিয়ার শেয়ারবাজারও।

এছাড়া এশিয়ার অন্যতম পুঁজিবাজার জাপানের নিকেই লেনদেনের শুরুতেই ২২৫ বেড়েছে ১.৪ শতাংশ। এছাড়া চীনের সাংহাই কম্পোজিট ১.২ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক ০.৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

তলানীতে থাকা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এ ধরণের জরুরি তহবিল সরবরাহের পদক্ষেপ জরুরী মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনের সময় এক ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়েছে। নতুন সময় অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে।

বুধবার (১৮ মার্চ) বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপে বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্ব শেয়ারবাজারে ধস চলছে। যার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও। তবে ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পেলে আতঙ্ক কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

এর প্রভাবে ৯ মার্চ শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স একদিনে রেকর্ড ২৭৯ পয়েন্ট পড়ে যায়। এরপর একে একে আটদিন চলে গেলেও বড় ধসের কবল থেকে বের হতে পারেনি শেয়ারবাজার।

এর মধ্যে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় ধস নামলে দুপুরে বিনিয়োগকারীদের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসইর কার্যালয়ে ছুটে যান। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে যাওয়া এই প্রতিনিধি দল ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক দাবি জানান।

তবে ডিএসইর এমডি তাদের সে দাবি গ্রহণ না করে বলেন, ‘আগামীকাল থেকে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সবাই শেয়ারবাজার ভালো করতে চেষ্টা করছে।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, শেয়ারবাজারে লেনদেন চলমান থাকবে। তবে লেনদেনের সময় এক ঘণ্টা কমিয়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত করা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

নানা মহল থেকে পুঁজিবাজার বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে, ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট রাকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার প্রশ্নই আসে না। বাজার বন্ধ রাখার পদ্ধতি কোন সমাধান হতে পারে না বলেও উল্লেখ করেন রাকিবুর রহমান।

একই প্রসঙ্গে ডিএসই’র সাবেক আরেক সভাপতি শাকিল রিজভী অর্থসংবাদকে বলেন, শেয়ারবাজার বন্ধ করলে সেটা বাজারের জন্য আরও ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, “পুঁজিবাজার বন্ধের গুজবেই কিন্তু বাজারে পতন বেশি হচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমন যদি বেশি হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন তো অনেক কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে সরকার যদি মনে করে পুঁজিবাজারও বন্ধ থাকবে, তাহলে হতে পারে। ”

বৈঠকে অংশ নেয়া ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন অর্থসংবাদকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারের লেনদেনের বিষয় নিয়ে আজ আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠকে লেনদেন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে লেনদেনের সময় এক ঘণ্টা কমানো হয়েছে। আগের মতো সকাল সাড়ে ১০টায় লেনদেন শুরু হবে। তবে আড়াইটার বদলে লেনদেন শেষ হবে দেড়টায়।’

পুঁজিবাজারে ভয়াবহ পতনে আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুঁজিবাজারে লাগাতার ধস ঠেকাতে ইমার্জেন্সি ফান্ড দেয়া। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ফোর্স সেল বন্ধ করা দেয়া।

এশিয়ার অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ালেও বাংলাদেশে সম্পূর্ণ এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বুধবার বড় উত্থান দিয়ে লেনদেন শুরু হলেও মাত্র ৬ মিনিটের মাথায় পতনে রূপ নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। দুপুর দুইটা ২০ মিনিট সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭৮ পয়েন্ট এবং সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৭৫ পয়েন্ট পড়েছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নতুন সুদহার নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে জুয়েলারি শিল্প
বছর ঘুরলেও প্রবাসী আয়ে গতি ফিরেনি