প্রবাস
বাংলাদেশি পাসপোর্টে বিদেশে রোহিঙ্গা শ্রমিক

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে শুধু গরিমসিই করছে না কখনো কখনো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিলম্বের জন্য উল্টো বাংলাদেশকেই দুষছে। এদিকে আগে-পরে মিলে কমবেশি ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ বেশি জনসংখ্যার ছোট অর্থনীতির ছোট একটি দেশ। তাই আমাদের মানব সম্পদ ব্যবহারের সুযোগও কম। সেটা দেশে এবং বিদেশেও। আমরা আরো জানি, জনসংখ্যা বাড়ে জ্যামিতিক হারে। রোহিঙ্গাদের মাঝে জন্মহার বেশি।
ফলে, আজকের দশ লাখ রোহিঙ্গা ২০ লাখ, বা কোটি হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ওপর এর যে নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন তা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই।
প্রধানমন্ত্রী অভিমান করে যেমন বলেছেন, ‘আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাবার দেই। সুতরাং বিপদে পড়ে আমাদের দেশে আসা দুই-পাঁচ-সাত লাখ মানুষকে খাবার দেওয়ার ক্ষমতাও আমাদের আছে।’ কিন্তু শুধু খাবারই তো শেষ কথা না। মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপাতত সাত লাখের হিসেব বেড়ে বহুগুণ হয়ে যাবে।
বাড়তি চাপ পড়বে আমাদের সীমিত অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ওপর। ইতোমধ্যে তার ইঙ্গিতও দেখা গেছে।

রোহিঙ্গাদের যে বর্তমান প্রজন্ম তারা আজন্ম একটি নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। এ নির্যাতনের ইতিহাসের শুরু তাদের জন্মেরও আগে। তাই রোহিঙ্গারা জীবনের প্রয়োজনে সব সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক। সে কারণেই শরণার্থীদের জন্য গ্রহণকারী রাষ্ট্রকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
তাদের জন্য পৃথক শরণার্থী ব্যবস্থার বিকল্প নেই। সীমাবদ্ধতার মধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেও। কিন্তু দশ লাখ ছিন্নমূল মানুষের বিপরীতে যেকোনো ব্যবস্থাপনাই ভেঙে পড়তে পারে। তার মধ্যেও সরকার অত্যন্ত সফলভাবে তাদের নিবন্ধনের কাজটি করতে পেরেছে। কিন্তু নিবন্ধন করেও বাংলাদেশ এর সুফল পাচ্ছে না। কারণ মিয়ানমার এখন বলছে যাদের কাছে মিয়ানমারের পাসপোর্ট বা নাগরিকত্বের সনদ আছে তাদেরই শুধু ফেরত নেওয়া হবে (যদি নেওয়া হয়)।
মিয়ানমারের এ যুক্তি বা শর্ত যে কতটা অযৌক্তিক, বেআইনি ও অবাস্তব তা আগের একটি লেখায় বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বও তা জানে। কিন্তু মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসনের কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না।
রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল যাতে তারা এদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যেতে না পারে। অর্থাৎ, যাতে তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধায় ভাগ বসাতে না পারে। একই সঙ্গে শরণার্থী হিসেবে তাদের যে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তাও যেনো অক্ষুণ্ন থাকে। সেখানে আবার দেশীয় সুবিধাভোগীরা ভাগ বসাতে না পারে। কিন্তু এখন রোহিঙ্গারা শরণার্থী হিসেবে যা পাওয়ার তা পাচ্ছে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধার ওপরও ভাগ বসিয়েছে।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এরই মধ্যে চাকরি-ব্যবসা করছে। রোহিঙ্গারা বিদেশে যাক তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হলো যখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে যায় তখন।
কারণ এতে বাংলাদেশি একজন নাগরিকের সুযোগটি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বিদেশে বাংলাদেশের কয়েক লাখ নাগরিক তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে। ভবিষ্যতে এর পরিমাণ আরো বাড়বে। কারণ, বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য কেউ গেলে যদি সুযোগ আসে সে চেষ্টা করে তার পরিবার-পরিজন বা কাছের কাউকে নিতে। রোহিঙ্গারা বিদেশে যাওয়াতে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের জন্যই সুযোগ সৃষ্টি হলো, একই সঙ্গে বাংলাদেশের একজন নাগরিক সেই সুযোগ হারালো। ভবিষ্যতের সুযোগও নষ্ট হলো। এ বিষয়টি আপাতত হয়তো দৃশ্যমান না। কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে এটি প্রকাশ্য রূপ নেবে।
মালয়েশিয়ায় যেমন প্রচুর তামিল বা দক্ষিণ ভারতীয় আজ বিভিন্ন কাজে জড়িত। বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের লোকজনও যেমন কোনো কোনো দেশে বেশি অবস্থান করছেন-এর মূল কারণ এটাই। সুযোগ সুযোগের সৃষ্টি করে আর বঞ্চনা বঞ্চনারই পথ দেখায়। এটি শুধু বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেই সত্য নয়, অন্য অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব।
এমনিতেই বিদেশে প্রবাসীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। এমনকি অভিবাসনের সুযোগও অনেক দেশ বন্ধ করে দিয়েছে বা সীমিত আকারে বহাল রেখেছে। মালয়েশিয়ায় আশির দশকে প্রচুর বাংলাদেশি, ভারতীয়, চৈনিকরা গিয়েছে। তারা কাজ করেছে, নাগরিকও হয়েছে। আজ মালয়েশিয়া সেই সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের অমানবিক কাহিনীতে আমরা উদ্বিগ্ন। সেখানে গিয়ে আমাদের নারী শ্রমিকরা যে অমানবিক ও পাশবিকতার শিকার হন তা গণমাধ্যমে আসছে।
পাশাপাশি বৈধ ও দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে বিদেশি শ্রম বাজারে আমাদের সুনাম নেই। অবৈধভাবে ও বিপথে গিয়ে নানাভাবেই এদেশের শ্রমিকরা জেল-জরিমানার শিকার হন। এটি গ্রহণকারী রাষ্ট্রের জন্য আরো বড় ঝামেলার। সেই সঙ্গে অনেকে সেখানে গিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অনেকে অবৈধ কাজে জড়িয়ে পরে। ফলে, এতে সার্বিকভাবে শ্রম বাজারে আমাদের দুর্নাম হচ্ছে। অনেক জায়গায় আমরা ভালোও করছি। কিন্তু খারাপের আলোচনাটাই বেশি হয়, এটিই স্বাভাবিক।
তারপরও ন্যূনতম যেটুকু সুযোগ আমাদের আছে তার ওপর যদি রোহিঙ্গারা ভাগ বসায় সেটি দুশ্চিন্তারই কথা। কিন্তু তারচেয়েও বেশি ভাবনার বিষয়, রোহিঙ্গারা কীভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পায় ও সেই পাসপোর্ট নিয়ে কীভাবেই বা বিদেশে যায়। শেষ প্রশ্নটির জবাব পরিষ্কার। বিদেশে বৈধ-অবৈধ দু’ভাবেই যাওয়া যায়। টেকনাফ থেকে ট্রলারে করেও মালয়েশিয়া যাওয়া যায়। অনেক বাংলাদেশি এভাবে গিয়েছেন ও যাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার সব ধরনের অবৈধ পথ আমরা বন্ধ করতে পারিনি। এটি করতে না পারলে আমাদেরই ক্ষতি। যার ক্ষতিকর ফল আমরা এরই মধ্যে পেতেও শুরু করেছি। অনেক রাষ্ট্র বৈধ পথও বন্ধ বা সংকুচিত করে ফেলেছে।
কিন্তু প্রথম ও প্রধান প্রশ্নটি হচ্ছে রোহিঙ্গারা কীভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পায়? তারা তো বাংলাদেশের নাগিরক না। তাদের তো বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদ বা এনআইডি নেই। নেই জন্ম সনদও। বসবাস করার কথা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। তাহলে কীভাবে এটি সম্ভব?
যেখানে এদেশের একজন নাগরিককে পাসপোর্ট পেতে আজও অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। যতোই ‘ডিজিটাল’ এর কথা বলি, দালালের দৌরাত্ম তো কমেনি। পাসপোর্ট অফিস অনেকটাই ডিজিটাল একথা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে পয়সা তোলা কমেনি। এদেশে ক’জন পাসপোর্টধারী পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে পুলিশকে পয়সা না দিয়ে পাসপোর্ট পেয়েছেন?
যদি পয়সা না দেন তবে, ‘খুজিয়া পাওয়া যায় নাই’ অথবা অন্য কোনো অবজারভেশন দিয়ে পাঠিয়ে দেবে। ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানির প্রতিবেদন বাংলানিউজেও এসেছে বহুবার। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের মূল উদ্দেশ্যই হলো আবেদনকারী বাংলাদেশের নাগরিক কিনা তা যাচাই করা। সেই সঙ্গে তিনি কোনো অপরাধ কর্মে জড়িত কিনা তাও দেখা। এই যদি কথা হয়, তবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেল কী করে? পুলিশ সেখানে কি ভেরিফিকেশন করলো? এসব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।
আসলে অসাধু একটি দালালচক্র এর সঙ্গে জড়িত আছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভেরিফিকেশন কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী, পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা এবং অন্যান্য দালালদের সঙ্গেও রয়েছে তাদের যোগায়োগ। যেখানে দেশের একজন নাগরিককে পাসপোর্ট পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ আরো নানা তথ্য প্রদান করতে হয়, সেখানে রোহিঙ্গারা কীভাবে এসব জোগার করে পাসপোর্ট পায় তা এক রহস্যই বটে।
বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা তাদের সঙ্গে নগদ টাকা-পয়সা যা আছে সব নিয়ে এসেছেন। সেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন স্বর্ণালংকার। ফলে, সবকিছুর বিনিময়ে নগদ অর্থ দিয়ে তারা সহজেই বিদেশে পাড়ি জমাতে পারছে। সেজন্য আদম পাচারকারী চক্রের কাছেও রোহিঙ্গারা এখন বড় কাস্টমার।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে চলে গেছে। এটি সরকারি হিসাব। দুই-আড়াই লাখ বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে অনেক অঙ্ক। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্য এখন রোহিঙ্গাদের অন্যতম গন্তব্য। ফলে অদূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গারা বিদেশে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সরকারি তথ্য মতে, নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬। তাদের নাম-ঠিকানা, ছবি ও আঙুলের ছাপসহ সব তথ্য সরকারের কাছে আছে। সমস্যা হচ্ছে, নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের তথ্যভাণ্ডার এখনো পাসপোর্টের মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। ফলে, পাসপোর্ট অফিসেরও তেমন কিছু করার নেই। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে আসার আগে মাঠ পর্যায় থেকেই তো রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নেয়ার চেষ্টা প্রতিহত করা যায়। দুই-চার পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট মেলে। মেলে নাগরিকত্বের সনদও।
সেই সঙ্গে বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিক (আদতে রোহিঙ্গা)। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা একটু ভেবে দেখতে পারেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

প্রবাস
মালদ্বীপে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের তালিকায় বাংলাদেশি আহমেদ মোত্তাকি

বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও মালদ্বীপের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ মো. আহমেদ মোত্তাকি মালদ্বীপের শীর্ষ ১০০ ব্যবসায়ীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ মে) মালদ্বীপের ক্রসরোড রিসোর্টে প্রতি বছরের ন্যায় আয়োজিত দেশটির শীর্ষস্থানীয় ১০০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড ১০০ গালা (GOLD 100 Gala) বিজনেস অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
অ্যাওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল এস.এম. আবুল কালাম আজাদ।
মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের প্রশংসা করে বলেন, আগামীতে আরও ভালো করবেন সেই প্রত্যাশা কামনা করি। পরে তিনি গোল্ড ১০০ গালা অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মিয়াঞ্জ গ্রুপ পরপর তিনবার গোল্ড ১০০ পুরস্কার পেয়েছে। শিক্ষা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং কৃষি খামারে অবদানসহ সেরা অনুশীলন, অর্থনীতিতে অবদান, নিয়মিত করদাতা, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদির জন্য মিয়াঞ্জ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. আহমেদ মোত্তাকি এই পুরস্কারটি পান।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
ওএসডি কোন নীতিমালার মধ্যে পড়ে

যারা নীতি নির্ধারক হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে ঢুকেছেন তাদের কাজ মূলত নীতিমালা তৈরি করা। তারা নিজ থেকে দেশের এত বড় একটা গুরুদায়িত্ব পালন করতে সংসদ ভবন দখল করেছেন। বর্তমানে সেই সংসদে বিরোধী দল নেই আছে শুধু একাকীত্ব। বিরোধী দলের নেত্রী কখন জেলে গেলেন, কখন বের হলেন, কবে মামলার শুনানি হবে আর কবে হাসপাতালে চেকআপ করবেন এই খবর ছাড়া অন্য কিছু আমি শুনিনা বা জানিনা। অথচ ৩৫০ জন নীতি নির্ধারকসহ তাদের সহযোগী আমলারা রয়েছেন যারা শপথের বাণী পড়ে নীতিমালা তৈরি এবং তার প্রতিফলন ঘটাবেন বলে ওয়াদা করেছেন কিন্তু হচ্ছে কি সেই কাজগুলো সঠিকভাবে? সংসদ ভবন আছে নেই শুধু সৃজনশীল নীতিমালা!
মাত্র দুটি বিষয় তুলে ধরি তাহলে বুঝতে সহজ হবে কেন আমি হঠাৎ এমন একটি মন্তব্য করলাম।
আচ্ছা ভাবুন তো দেশের এই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের কথা! প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ থাকতে হবে, আছে কি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ বাধ্যতামূলক থাকতে হবে, আছে কি? আবাসিক এলাকাতে পার্ক থাকলেও সেখানে মানুষ কি করে? হাঁটাহাটি করে, সেটাও প্রয়োজন। তা নাহলে আপনি হাঁটবেন কোথায়? বাচ্চারা কি সেখানে খেলতে পারে? না। তারা দেখা যায় রাস্তার মধ্যে ক্রিকেট খেলে।
দেশের শহরগুলোকে শুধু ইট, কাঠ, পাথরের বস্তি না বানিয়ে খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা দরকার নয় কি?দেশের সবার মাথায় একটিই ভাবনা ছেলে মেয়েকে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে হবে। ছেলে বা মেয়ে বিজ্ঞান পড়তে চায় না কিন্তু অভিভাবক তাকে বাধ্য করেছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। ফলাফল রেজাল্ট খারাপ। অনেক ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্ট কিন্তু ডাক্তারি পড়তে চায় না। বাবা মা পড়াবেনই। এরকম ঘটনা ঘরে ঘরে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। যে পড়বে তার ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করতে হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার মানেই সফল জীবন নয়। এটা মাথায় নিতে হবে। আপনার বাচ্চা আপনি তাকে পৃথিবীতে এনেছেন ঠিকই কিন্তু তাকে যা খুশি তাই করতে চেষ্টা করার আগে অগত্যা ভাবুন সে নিজেই একটা আলাদা মানুষ। যা জোড়ালো হতে থাকে বয়:সন্ধিতে। এটা জেনে বুঝেও নিজের ইচ্ছেটা পূরণ করতে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে তার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েন না। কিশোরীদের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের এই সময়টা সত্যিই এই শহরগুলোতে কষ্টদায়ক। নিরাপত্তার অভাবে একা কোথাও যেতে পারে না। ফলে মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যা চিন্তার বিষয়, বিভিন্নভাবে প্রলোভিত হচ্ছে ওইটুকুন একটা যন্ত্রের মাধ্যমে। তাদেরও প্রয়োজন মুক্ত বাতাস যেখানে সে নির্ভয়ে বেড়ে উঠবে। না হলে শারীরিক সমস্যার সাথে সাথে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা বৃদ্ধি পাবে।
যাইহোক, এসব চিন্তাগুলো শুধু বাবা-মার না এসব চিন্তাগুলো সংসদ সদস্যদের এবং আমলাদেরও হওয়া উচিত। শুধু শহর নয় সারা দেশের আনাচে কানাচে রয়েছে লাখো লাখো নতুন প্রজন্ম তাদের কথা ভাবুন! কে জানে দেখবেন, হঠাৎ পৃথিবী সেরা অলরাউন্ডার আমরাই পেয়েছি। এমনটি কিন্তু হতে পারে। আমরা আশা নিয়েই বাঁচি এবং বেঁচে আছি।

এটা গেল একটি বিষয়। এবার আসি আরেকটি বিষয় নিয়ে।
চল্লিশ বছর কাজ করতে এবং কাজ করাতে নিযুক্ত থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে চাকুরিরত কোন কর্মচারিকে ওএসডি করে রাখা হয় শুনিনি। এমনকি চাকুরির ক্ষেত্রে এ যুগে ওএসডি শব্দটি যে ব্যবহৃত হয় তা কেবল বাংলাদেশেই চলমান। তবে ওএসডি শব্দটি মূলত একটি অন-স্ক্রিন ডিসপ্লে (OSD) বা একটি কন্ট্রোল প্যানেল যা একটি কম্পিউটার মনিটর, মোবাইল ডিভাইস, টেলিভিশন স্ক্রীন বা অন্য একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ডিসপ্লেতে তৈরি করা হয় এবং যা ব্যবহারকারীদের দেখার বিকল্পগুলো নির্বাচন করতে এবং/অথবা ডিসপ্লের উপাদানগুলোকে সামঞ্জস্য করতে সক্ষম করে। যেমন উজ্জ্বলতা, বৈসাদৃশ্য, এবং অনুভূমিক ও উল্লম্ব অবস্থান ইত্যাদি। তবে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) অনুশীলনটি ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়কালের একটি প্রথা যা ১৯৩১ সালের দিকে চালু ছিল যেমন যখন একজন কর্মকর্তা তার নিয়োগের মাধ্যমে সরকারকে তার নিয়োগে ব্যয় করার চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা দিত আর যখন বৃহত্তর কল্যাণের জন্য সরকারের উপর একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা করত।
এটি কখনো কখনো ভবিষ্যতে উচ্চস্তরের নিয়োগের জন্য একটি প্রশিক্ষণ পর্যায় হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তবে দায়িত্ব অদৃশ্য হয়ে গেলে নিয়োগকর্তা কি একজন কর্মচারীকে পুনঃনিয়োগ করতে পারতেন বা শর্তগুলি কি আগের মতোই থাকত এবং পেশ করার মতো কোনো কাজ না থাকলে কী করত? এমতবস্থায় কর্মিকে একজন স্পেশাল ডিউটির অফিসার হিসাবে নিয়োগ দিতেন।তৎকালীন ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে এ ধরনের নিয়ম ছিল।
আর আমাদের দেশে ওএসডি বলতে বোঝায় একজন কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। সে কোনো প্রমোশন পাবে না তবে বর্তমান স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা পাবে। এটি জানা মতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। তবে হতে পারে সীমিত সময়ের জন্য কেউ পোস্টিং অর্ডারের অপেক্ষায় আছে সেক্ষেত্রে এই কর্মকর্তারা সচিবালয়ে রিপোর্ট করেন এবং সেখানে তারা তাদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করা ছাড়া কিছুই করেন না।
অন্যান্য দেশে ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি শব্দটির যে অর্থ, বাংলাদেশে সে অর্থ বহন করে না। সেসব দেশের জনপ্রশাসনে কিছু কর্মকর্তার ওপর বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়; যাঁরা অন্য কর্মকর্তাদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে বিবেচিত। সরকারের প্রয়োজনে তাঁদের ওপর সেই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। আবার দায়িত্ব শেষে আগের পদে ফিরিয়ে আনা হয় যাকে বলা হয় ডেপুটেশন।
বাংলাদেশে ওএসডি কর্মকর্তা অর্থটি অত্যন্ত নিন্দাবাচক হয়ে পড়েছে। একজন অফিসারকে ওএসডি হিসেবে মনোনীত করা হলে এটি একটি কলঙ্ক হিসাবে বিবেচিত হয়। এতে বোঝায় যে কর্মকর্তার জন্য সরকারের কোনো উপযুক্ত পদ নেই বা তাদের পরিষেবার আর প্রয়োজন নেই। তারপরও তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ঠিকই তবে সে কোনো প্রমোশন পাবে না তবে বর্তমান স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা পাবে শুয়ে বসে। এতে জনকল্যাণ বা আদৌ কোনো কল্যাণ হয় কি?
আমাদের সুইডেনে অনেক সময় আমরা যদি কর্মচারীর কাজে খুশি না হই বা যদি তার অন্যান্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা দেখা দেয় তখন তাকে পুনঃনিয়োগ (omplacering) করি। যদি বা যখন কোনো উপায় না থাকে তখন কর্মস্থল থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু বাসায় বসিয়ে জামাই আদরে ওএসডি করে রাখা হয়, কখনও শুনিনি। বৃটিশ বা পাকিস্তানী নিয়ম কানুনই যদি দেশে চলবে তাহলে কী দরকার ছিল তাদের তাড়ানোর? বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে শুধু চোরগুলো রেখে গেছে।
এখন দেখছি তাদের আইনকানুনও রেখে গেছে। আমি যতটুকু জানি যুগ যুগ ধরে এই ধরনের ওএসডিধারীরা সকল সুবিধা ভোগ করছে শুধু কাজ করছে না এ ধরনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশে হাতে গুনে শেষ করা যাবে না। সরকার বা রাষ্ট্র কীভাবে এত বছরেও এর রহস্য উদ্ধার করতে পারছে না? তবে আমার জানা মতে সরকার নিজেই এর জন্য দায়ী যেমন প্রতিবারই সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে একদল কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে যান আর পূর্ববর্তী সরকারের আমলের ওএসডিরা উচ্চতর দায়িত্বে নিয়োজিত হন। জনপ্রশাসনের এ দুরারোগ্য রোগটি দূর করা না গেলে জনপ্রশাসন নির্ভয়েকাজ করতে পারবে না। এ ধরনের দলীয়করণের ফলে অনেক সময় নিরীহ ও মেধাবী কর্মকর্তারা পরিস্থিতির শিকারে পরিণত হন। তারপর অনেকে দলকে কাজে লাগিয়ে আবার অনেকে সাতে-পাঁচে না থাকলেও স্বার্থান্বেষী মহল তাঁদের গায়ে বিশেষ দলের রং জুড়ে দিয়ে কোণঠাসা করে রাখে। ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে এ রকম দক্ষ ও নিরীহ কর্মকর্তার সংখ্যা কম নয়।
বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী কর্মকর্তারাই নিয়োগ পান। যাচাই-বাছাইও কম হয় না। সেখানে রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নয়। কিন্তু এ পরীক্ষা-প্রক্রিয়ায়ও গলদ রয়ে গেছে। অনেক সময় সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় থেকেই দলীয় লোকদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা দেখা যায়। এটা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আর বাস্তবতা হলো নিয়োগ-প্রক্রিয়া থেকেই দলীয়করণের শুরু। যদিও খুব কমসংখ্যক কর্মকর্তাই এ ধরনের অনিয়মের সুযোগ পান, কিন্তু এর পরিণাম ভোগ করতে হয় অন্যদেরও। নতুন সরকার এসে সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং আবার জোরেশোরে তাদের দলীয় সমর্থকদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে তৎপর হয়।জনপ্রশাসনের এ অসুস্থ ধারা ভাঙতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা সরকারেরই কর্তব্য। তা না হলে প্রজাতন্ত্রের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে না।
যে দেশে একজন মুমূর্ষ রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে, রোগীকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে দিতে পারছে না হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি না থাকার কারণে, শেষে বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু বরণ করছে সে দেশে কীভাবে ওএসডি প্রথা চলমান? খুব জানতে ইচ্ছা করে!জাগো বাংলাদেশ জাগো, নতুন করে ভাবো।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
আমিরাতের শ্রম বাজারে যুক্ত হবে আরো ১০ হাজার কর্মী

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারে আগামী কয়েক বছরে ১০ হাজারেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
আমিরাতের রাস আল খাইমাহতে দ্রুত গতিতে হোটেল ও পর্যটন খাত বিকশিত হচ্ছে। ফলে অঞ্চলে এ নতুন কর্ম সংস্থানের এ সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড ওয়েন রিসোর্ট রাস আল খাইমাহতে তাদের কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া আরও কিছু নতুন হোটেলও এখানে আসতে যাচ্ছে।
রাস আল খাইমাহ পর্যটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী রাকি ফিলিপস বলেছেন, রাস আল খাইমাহতে ৮ হাজার কক্ষ রয়েছে। আমরা এ বছর আরও ৪৫০টি এবং আগামী বছর আরো ১ হাজার কক্ষ যুক্ত করতে যাচ্ছি। যতগুলো কক্ষ আছে সেটি আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
২০২৩ সালে আমিরাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হ্যাম্পটন এবং মোভেনপিক তাদের সেবার দরজা খুলেছে । এছাড়া এ বছরই মিনাতে অনন্তরা হোটেল এবং আল হামরায় সোফেটিল হোটেলের কার্যক্রম শুরু হবে।
আলদার, আবুধাবি ন্যাশনাল হোটেলস এবং ইমারও রাস আল খাইমাহতে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েন রিসোর্টও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৩৯০ কোটি ডলার খরচ করে ১ হাজারেরও বেশি কক্ষবিশিষ্ট হোটেল চালু করবে। যেখানে গেমিং এরিয়াসহ নানা সুযোগ সুবিধা থাকবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
হুন্ডিতে ঝুঁকছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা, রেমিট্যান্সে ভাটা

মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের বিপরীতে তুলনামূলক কম টাকা পাওয়ায় বৈধ চ্যানেলে দেশে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে করছে রেমিট্যান্স হাউজগুলো। একটু বেশি অর্থ পাওয়ার আশায় অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান অনেক প্রবাসী। সরকারি প্রণোদনা আর নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেও সব প্রবাসীকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর ফলে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোয় একসময় মালয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ৫ম, যা এখন সপ্তমে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়ানোর পাশাপাশি ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার দাবি প্রবাসীদের।
হুন্ডিতে টাকা পাঠানো তুলনামূলক সহজ ও লাভজনক মনে করে অনেক প্রবাসী এই অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। এই সুযোগ লুফে নিচ্ছেন হুন্ডি কারবারি ও টাকা পাচারকারীরা। রিঙ্গিত প্রতি ব্যাংক রেট থেকে এক টাকা বেশি মিলছে হুন্ডিতে। এছাড়াও দেশে টাকা পাঠাতে কর্মস্থল থেকে দূরের ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো লাগছে না। ফলে অবৈধ হুন্ডিতে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা।
চলতি মাস এপ্রিলে রিঙ্গিত প্রতি বিনিময় ২৪ টাকা ৫ পয়সা থেকে ২৩ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে। গত মাসে যা ছিল ২৬ টাকা। ফলে গত মাসে রেট বেশি পাওয়ায় প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে বেশ আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। তাতে আগের তুলনায় মার্চে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স বাড়ে ৪০ শতাংশ।
মার্চ মাসে মালয়েশিয়া থেকে বৈধপথে ৯৮ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমমানের রেমিট্যান্স পাঠানো হয়। তবে এপ্রিলে বাংলাদেশে রিঙ্গিতের দাম কমায় প্রবাসীরা আবারও হুন্ডিতে ঝুঁকেছেন বলে ধারণা করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে ২০ শতাংশ রেমিট্যান্স কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে ডলার বা রিঙ্গিতের বিনিময় মূল্য যা-ই হোক না কেন, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। পাশাপাশি সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠাতে সচেতনতা ও দেশপ্রেমের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এরই মধ্যে প্রবাসী আয় কমার অন্যান্য কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বৈধপথে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এনবিএল, সিবিএল ও অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউজের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার বরাবর ১০ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হলে বিদেশে অবৈধ উপায়ে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় রেমিট্যান্সের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডিসহ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার পাশাপাশি প্রবাসীদের সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। হুন্ডি প্রতিরোধ ও প্রবাসীদের সচেতন করতে কাজ করছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
এ সময় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার আহ্বান জানান হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
প্রবাস
চীনে ব্যবসায়িক বিনিময় সম্মেলন

চীনের হাইনান প্রদেশের মুক্ত বাণিজ্য বন্দরে বিনিয়োগের সুযোগ এবং অনুকূল নীতি, যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ কৌশল বাস্তবায়নের জন্য একটি নতুন পথের পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার প্রচারের জন্য ব্যবসায়িক বিনিময় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে হাইনান প্রদেশের হাইকউ শহরে সানইয়া মিউনিসিপ্যাল পিপলস গভর্নমেন্টের সহায়তায় সানইয়া ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন ব্যুরো আয়োজিত এই ব্যবসায়িক বিনিময় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে বক্তব্য দেন, সানইয়া পৌর সরকারের নির্বাহী ডেপুটি মেয়র ও পৌর পার্টি কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য শাং ইয়ংচুন, চীন ইতালি চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি পাওলো বাজোনি, ফেরারি চায়নার ভাইস জেনারেল ম্যানেজার হান মিয়াও, মাসেরাতি চায়নার ভাইস প্রেসিডেন্ট মিরকো পিয়েত্রো বোর্দিগাসহ আরও অনেকে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তা এবং চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা হাইনান প্রদেশের মুক্ত বাণিজ্য বন্দর নীতি, সানইয়া শহরের সম্পদ এবং শিল্প নীতির উপর দৃষ্টি নিবন্ধন করে এবং নিজ নিজ উদ্যোগের প্রকৃত উন্নয়ন এবং উন্নয়ন সুবিধার দৃষ্টিকোণ থেকে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশসহ ইউরোপ ও এশিয়া দেশগুলোর চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং সানইয়া পৌর সরকারের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।