জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারি। আমরা যদি আমাদের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২৪ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এমন আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ৮ম দিন আজ। এ দিনের থিম- ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই শুভ মুহূর্তে আমি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতা এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলে যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। আমাদের এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অসম্ভব প্রাণশক্তি, উদ্ভাবন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জয় করে টিকে থাকার দক্ষতা।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই লড়াই করেননি। তিনি বিশ্বের সব নিপীড়িতবঞ্চিত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।’

ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুটান আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বন্ধু-রাষ্ট্র। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন। দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বহু প্রাচীন। ১০ম শতাব্দীতে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণকারী বৌদ্ধ ধর্মগুরু মহাসিদ্ধ তিলোপা তিব্বত-ভুটানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের প্রয়াত মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুক এবং সে দেশের জনগণ স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের শুধু সমর্থনই দেননি, সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভুটানের তরুণরা ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আহত এবং অসুস্থ বাঙালি শরণার্থীদের সেবা করেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, “ভুটানই প্রথম দেশ যে নাকি স্বাধীন বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভের আগেই ৬ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা ভুটানের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য আমরা ২০১২ সালে ভুটানের মহামান্য তৃতীয় রাজা জিগমে দোর্জি ওয়াংচুককে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ সম্মাননায় ভূষিত করেছি।”

দুই দেশের ব্যবসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন, শিক্ষা খাতে সহযোগিতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভুটানি ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। আজকের সম্মানিত অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করেছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। ভুটানের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগী হতে পেরে আমরা গর্বিত।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বক্তব্য রাখেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধু রাষ্ট্র ভুটানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।

 

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকা‌বিলায় র‌্যাব প্রস্তুত
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়
জানুয়ারি থেকে ১০ ডলার করে রেশন পবে রোহিঙ্গারা
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল গঠন ইসির
ইনানী–সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দেশের ২১ শতাংশ মানুষ
ভোটের দিন ঘিরে নাশকতার তথ্য নেই
নির্বাচন ঘিরে সেন্টমার্টিনের পর্যটন বন্ধ ৩ দিন
মেট্রোরেলে মাছ-মাংস-সবজি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেড়েছে বজ্রপাত-মৃত্যু