রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় সতর্ক থাকতে হবে ক্রেতাকে

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় সতর্ক থাকতে হবে ক্রেতাকে
একজন ক্রেতা হিসাবে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় অনেকগুলো বিষয় সতর্ক থাকতে হয়। অন্যদিকে প্রত্যকে রিয়েলস্টেট ডেভলপার কে তাদের প্রোসপেক্টাসে বাধ্যাতামূলক ভাবে ডেভলপারের নিবন্ধন নম্বর, নাম -ঠিকানা, যথাযত কর্তৃপক্ষ থেকে প্রকল্পের অনুমোদন ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া ক্রেতাদেরকে যেসব দিকে খেয়াল রাখতে হয়:

রিয়েল এস্টেট ডেভলপার চেক

ক্রেতা হিসাবে আপনার প্রথম কাজ হবে যে রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সাথে আপনি চুক্তি করছেন তার নিবন্ধন সনদ আছে কি না চেক করা, রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের কোন নিদৃষ্ট এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে এবং সারাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সরকারের কাছ থেকে এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন নিতে হয়। এর পর দেখুন ডেভলপার কোম্পানিটি (রিহ্যাব) রিয়েল এস্টেট হাইজিং এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর সদস্য কি না?

এর পর আপনি চেক করবেন যেই প্লটটি বা ফ্লাটটি বা উন্নয়ন প্রকল্পটির জন্য আপনি ডেপলপারের সাথে চুক্তি করতে যাচ্ছেন, নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ঐ প্রকল্পটির অনুমোদ আছে কিনা? যেমন- ধরুন আপনি ঢাকা শহরে একটি ফ্লাট বাড়ি কেনার জন্য ডেভলপারের সাথে চুক্তি করতে চান, এক্ষেত্রে আপনাকে দেখতে হবে যে ঐ বিল্ডিং এর নকশাটিতে রাজুকের অনুমোদন আছে কি না? জেলা শহরের ক্ষেত্রে পৌরসভার অনুমোদন লাগে। প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার পূর্বে একজন ডেভলপার কোন ভাবে ঐ প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি করতে পারবে না। কোনো এজেন্ট বা ডেভলপার কোম্পানী নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করলে বা কোনো ডেভেলপার অনুমোদন ছাড়া প্রকল্পের কাজ শুরু করলে বা বিজ্ঞাপন প্রচার করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ডেভলপারের দায়-দায়িত্ব

প্রত্যকে রিয়েলস্টেট ডেভলপার কে তাদের প্রোসপেক্টাসে বাধ্যাতামূলক ভাবে ডেভলপারের নিবন্ধন নম্বর, নাম -ঠিকানা, যথাযত কর্তৃপক্ষ থেকে প্রকল্পের অনুমোদন ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে, প্রকল্পটির জমির মালিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রেতা হিসাবে আপনার অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত এবং ডেভলপার আপনাকে দেখাতে বাধ্য।

ভূমির মালিক কর্তৃক রিয়েল এস্টেট নির্মাণ:

কোন ডেভেলপার জমি কিনে জমির মালিক হয়ে উক্ত জমির উপর বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রিয়েল এস্টেট নির্মাণ করলেও এই আইনের সকল বিধি-বিধান তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কোন ব্যক্তি এককভাবে বা কয়েকজন ব্যক্তি মিলে যৌথভাবে কোন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান না হয়েও তার বা তাদের নিজস্ব ভূমির উপর ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রিয়েল এস্টেট নির্মাণ করলে, তার বা তাদের ক্ষেত্রেও, যতদূর প্রযোজ্য হয়, এই আইনের বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে। [২০১০ সনের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর ৭ ধারা]

ভূমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে চুক্তি:

ভূমীর মালিককে রিয়েল স্টেস্ট উন্নয়নের লক্ষ্যে ডেভলপারের সাথে লিখিত জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট বা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করতে হয়।

চুক্তিতে কে কত অংশ পাবে তার বিস্তারিত উল্লেখ থাকতে হবে অর্থাৎ রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন বাবদ ডেভেলপারের পাওয়া অংশ ও জমির মালিকের অংশের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। এ ছাড়া ডেভেলপারের পাওয়া অংশ ক্রেতা বরাবর দলিল সম্পাদন ও হস্তান্তরের ক্ষমতা প্রদানের উদ্দেশ্যে ডেভেলপার বরাবর পাওয়ার অফ এটোর্নি দলিল সম্পাদন করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু ও শেষ করার তারিখ উল্লেখ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমির মালিকের অংশ হস্তান্তর না করলে বা দখল বুঝিয়ে না দিলে ডেভেলপারের দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আবার ভূমির মালিক যদি চুক্তিতে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে ডেভেলপারের কাছে জমির দখল হস্তান্তর না করে বা ডেভেলপার বরাবর সম্পাদিত আমমোক্তারনামা কোনো নোটিশ ছাড়াই বাতিল করে তবে সেও দণ্ডিত হবে।

কোন ব্যক্তি ফ্লাট বা প্লট কিনতে চাইলে, তার এবং ডেভলপারের মধ্যে চুক্তি থাকতে হবে, চুক্তি করার সময় দেখতে হবে যথাযত বিল্ডিং কোড মেনে বিল্ডিং টি নির্মান করা হচ্ছে কিনা। ক্রেতার অধিকার আছে বিল্ডিং এর নকশার কপি পাওয়ার। ফ্লাটে কি ধরণের উপকরন ব্যবহার করা হবে,কি ধরণের ফিটিংস ব্যবহার করা হবে তা স্পষ্ট করে চুক্তিতে উল্লেখ করতে হবে। চুক্তিতে যেই টাকার পরিমান উল্লেখ থাকবে তার অতিরিক্ত কোন টাকা ক্রেতার নিকট দাবী করা যাবেনা তবে ক্রেতা চাইলে উভয় পক্ষের সম্মতিতে আরো বেশি উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে পারে। চুক্তিতে যেরূপ উল্লেখ থাকবে সেই অনুযায়ী ফ্লাট, ডেভলপার ক্রেতাকে বুজিয়ে দেবে এবং ক্রেতার সম্মতি ছাড়া তার জন্য বদাদ্দকৃত ফ্লাট অন্য কারোর নিকট বিক্রি করতে পারবেনা। ক্রেতা রিয়েলস্টেটের মূল্য ব্যাংকের মাধ্যমে এককালিন বা কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারে। সমুদয় মূল্য পরিশোধ করা হয়ে গেলে ডেভলাপার ক্রেতাকে তিন মাসের মধ্যে দখল হস্তান্তর, দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রেশনের যাবতীয় কাজ সমাপ্ত করে ফ্লাট বা প্লট বুঝিয়ে দেবে। আবার ক্রেতা কোনো কারণে বরাদ্দ বাতিল করতে চাইলে ডেভেলপার ক্রেতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিশোধিত অর্থের ১০ শতাংশ কেটে রেখে বাকি অর্থ তিন মাসের মধ্যে এককালীন চেক বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফেরত দেবে।

রিয়েল এস্টেটের সুবিধাসমূহ

রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে বেসরকারী আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ অনুযায়ী নাগরিক সুবিধাদি, যতদূর সম্ভব, নিশ্চিত করতে হবে। ডেভেলপার কতৃর্ক নির্মিত সকল প্রকার রিয়েল এস্টেট, আলো-বাতাস চলাচলের উপযোগী হতে হবে। হস্তান্তরের পূর্বে সকল প্রকার ইউটিলিটি সার্ভিস যেমন পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পয়ঃনিস্কাশন, বর্জ্যব্যবস্থাপনা, অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা, ইত্যাদি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সংযোগ থাকতে হবে; এবং হস্তান্তরের পর নির্মাণ সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে মেরামতের প্রয়োজন হইলে হস্তান্তরের তারিখ হইতে অন্যূন ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত ডেভেলপারের নিজ খরচে উক্ত মেরামত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। পক্ষগণের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রত্যেক ডেভেলপারকে রিয়েল এস্টেট হস্তান্তরের পর অন্যূন ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত উহার রক্ষণাবেক্ষণের করতে হবে।

রিয়েল এস্টেট বন্ধক

ক্রেতার সম্মতি ছাড়া বরাদ্দকৃত কোন রিয়েলএস্টেট বা এর অংশবিশেষ কোন ব্যক্তি, ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট বন্ধক রাখা যাবে না। ডেভালপার বন্ধককৃত কোন রিয়েল এস্টেট কোন ভাবে বিক্রয় করতে পারবে না এবং হস্তানর দলিল সম্পাদনের পূর্বে অবশ্যই ডেভলপারকে রিয়েলএস্টেট বন্ধক হতে দায়মুক্ত করতে হবে।

বিচার ও দন্ড

এই আইনের অধীন অপরাধগুলো কম্পাউন্ডেবল/আপস যোগ্য,বেইলেবল/ জামিন যোগ্য ও নন-কগনিজেবল/ অ-আমল যোগ্য এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা বিচার্য। বিচারের সময় ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে সামারি ট্রায়াল হয়। [২০১০ সনের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর ৩২,৩৩ ধারা]

কোন ডেভেলপারের সাথে কোন ভূমির মালিক রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হবার পর চুক্তিতে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ভূমির দখল ডেভেলপারের অনুকূলে হস্তান্তর না করলে অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বৎসর কারাদন্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। [২০১০ সনের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর ২৮ ধারা]

আবার, চুক্তির শর্ত মোতাবেক ডেভেলপারের অনুকূলে সম্পাদিত রেজিষ্ট্রার্ড পাওয়ার অফ এর্টোর্নি অন্যূন ৩০ (ত্রিশ) দিন পূর্বে নোটিশ না দিয়ে বাতিল করলে অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বৎসর কারাদন্ড অথবা অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। [২০১০ সনের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর ২৯ ধারা]

কোন ভুমির মালিকের সাথে কোন ডেভেলপার কোন রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হবার পর চুক্তির শর্ত মোতাবেক রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন যথাযথভাবে সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমির মালিকের অংশ ভূমির মালিকের অনুকূলে হস্তান্তর না করিলে কিংবা ক্ষেত্রমত, দখল বুঝিয়ে না দিলে অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বৎসর কারাদন্ড অথবা ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। [২০১০ সনের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর ৩০ ধারা]

এই আইনের অধীন কোন ডেভেলপার যদি কোন incorporated কোম্পানী হয় তাহলে ঐ কোম্পানীর মালিক, পরিচালক বা কোন কর্মকর্তা যাহার নির্দেশে বা অংশগ্রহণে এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটিত হইবে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হইবেন। [২০১০ সনের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর ৩১ ধারা]

এই অপরাধের বিচার করার পর দোষি সাব্যস্ত ডেভলপার বা ডেভলপার কোম্পানির নিকট থেকে কোন অর্থ দন্ড আদায় হলে, আদালত আদায়কৃত অর্থের অনূর্ধ্ব ৫০% ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক বা ক্রেতার অনুকূলে এবং অবশিষ্ট অংশ সরকারের নিকট জমা দেওয়ার আদেশ দিতে পারবেন [২০১০ সনের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন এর ৩৫ (১) ধারা]।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

পা-বিহীন টিকটিকিসহ শতাধিক নতুন প্রজাতির আবিষ্কারের বছর ২০২৩
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
থার্টিফার্স্টে মেট্রোরেলের আশপাশে ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ
মাশরাফির দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন সোহান
ঢাবির অধীনে এডুকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ
আজ পীরগঞ্জ যাচ্ছেন শেখ হাসিনা
প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে হবে
দুই বাংলাদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো সৌদি
প্রথম দিনেই ‘সালার’ আয় ১৭৫ কোটি
টানা তিন বছর মুনাফা না থাকলে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা নয়