মধ্যপন্থা ইসলামের সৌন্দর্য

মধ্যপন্থা ইসলামের সৌন্দর্য
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ইসলামের প্রতিটি বিধান ও হুকুম পরিমিত ও সহজ, ন্যায়নিষ্ঠ ও ভারসাম্যপূর্ণ। মধ্যপন্থা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। বিশ্বাস, ইবাদত, লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন-কানুন, ভাব ও অনুভূতি, ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়াবলি, বুদ্ধি, আবেগ, অন্তর ও আদর্শ সব কিছুতেই ইসলাম মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে।

কোরআনে মধ্যপন্থা : কোরআনের বহু আয়াত থেকে মধ্যপন্থার ধারণা পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে ‘তুমি তোমার নামাজে স্বর উঁচু কোরো না এবং তাতে মৃদুও কোরো না; বরং এর মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কোরো।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১১০)

অনত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তুমি তোমার হাত তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ রেখো না এবং তা পুরোপুরি প্রসারিত করো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়বে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)

হাদিসে মধ্যপন্থা : আনাস (রা). থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সহজ করো, কঠিন করো না। তোমরা মানুষকে সুসংবাদ দাও, তাদের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করো না।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস: ৬১২৫)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন কোরো, বাড়াবাড়ি কোরো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড়ো এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা করো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৩)

বিশ্বাসে মধ্যপন্থা : আল্লাহ তাআলার জাত ও সত্তা সম্পর্কে মানুষের ভেতর নানা রকম প্রান্তিকতা বিদ্যমান। আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস নিয়ে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে কিছু দল। যেমন কোনো দল আল্লাহকে নিষ্ক্রীয় ও অক্ষমের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা বলে, বান্দার কাজের ওপর আল্লাহর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আবার কোনো কোনো দল বলেছে, পার্থিব জীবনে বান্দার কোনো কর্ম-ইচ্ছা সক্রিয় নয় আর সে যেহেতু সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় করে তাই পরকালে সে কোনো জবাবদিহির মুখোমুখি হবে না। ইসলাম উভয় শ্রেণির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এসবের মধ্যখানে অবস্থান করে। ইসলাম বলে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে পৃথিবীতে বান্দা কিছু স্বাধীনতা ভোগ করে, আল্লাহ তাকে ভালো-মন্দ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন। যদিও আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ও অবধারিত। একত্ববাদের বিশ্বাসই হলো মূল। ইসলামে তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি অািকদা-বিশ্বাসের যত ধারা আছে তার প্রত্যেকটিতেই মধ্যপন্থার বৈশিষ্ট্য পরস্ফুিট।

শরিয়তের বিধি-বিধানে মধ্যপন্থা : ইসলাম একটি স্বভাবজাত সহজ-সরল ধর্ম। এতে কোনো কঠোরতা ও কাঠিন্য নেই। এর প্রতিটি বিধান ন্যায়নিষ্ঠ ও ভারসাম্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য যা সহজ তা করতে চান, তিনি তোমাদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করতে চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)। অনত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৭৮)

ইবাদতে মধ্যপন্থা : ইসলাম কখনো তার অনুসারীকে আদেশ দেয় না শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে জীবন কাটিয়ে দিতে। আখিরাতের চিন্তায় বিভোর হয়ে দুনিয়ার অংশকে ভুলে যেতে কোরআনে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান করো। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ করো। আর জমিনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আল কাসাস: ৭৭ )

ভারসাম্যের স্বরূপ : আনাস (রা.) বলেন, ‘একদা তিন ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর ইবাদত সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর স্ত্রীদের কাছে এলো। তাদের যখন এ ব্যাপারে অবগত করানো হলো, তখন তারা যেন তা কম বলে ভাবল। তারা বলল, ‘আমরা কোথায়, আর রাসুল (সা.) কোথায়! আল্লাহ তো তাঁর সামনের ও পেছনের সব গুনাহই মাফ করে দিয়েছেন।’ তখন তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘আমি আজীবন রাতভর নামাজ পড়ব’, অন্যজন বলল, ‘আমি জীবনভর রোজা রাখব, কখনো রোজা ভাঙব না’, তৃতীয়জন বলল, ‘আমি নারীর সঙ্গ থেকে দূরে থাকব। কখনো বিয়ে করব না।’ রাসুল (সা.) তাদের কাছে এলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা এরূপ এরূপ কথা বলেছ! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে বেশি আল্লাহ ভীরু, বেশি তাকওয়াবান। তবে আমি রোজা রাখি ও রোজা ভঙ্গ করি। নামাজ পড়ি ও ঘুম যাই এবং নারীকে বিবাহ করি। তাই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। (সহিহ বোখারি, হাদিস : ৫০৬৩)

দ্বিন প্রচারে মধ্যপন্থা : সৎ কাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা ইসলামের অন্যতম বিধান। বহু জাতি এই বিধানকে কেন্দ্র করে পথভ্রষ্ট হয়েছে। কেউ এই বিধানকে একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে। কেউ বা এই বিধান পালনে ত্রুটি বা কমতি করেছে। যথাযথভাবে তা পালন করেনি। খুব কমসংখ্যক ব্যক্তিই এই বিধানকে যথাযথভাবে পালন করেছে। কোরআনে এই বিধানের মধ্যপন্থা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদের মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

আল্লাহ সবাইকে ভারসাম্যপূর্ণ উত্তম জীবন দান করুন। সূত্র: কালের কণ্ঠ

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

থার্টিফার্স্ট নাইট নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা কোর্স সম্পন্ন
আল্লাহর সঙ্গে যে কথা বলেছিলেন মূসা আ.
মিশরে বায়তুল মোকাররমের ইমামকে সম্মাননা প্রদান
জুমার দিন গোসল করার সঠিক সময় কোনটি?
জান্নাতিদের যে বিশেষ দানে সন্তুষ্ট করবেন আল্লাহ
নেক আমলের কারণে দুনিয়ায় যে উপকার পাবেন
রমজান শুরুর তারিখ ঘোষণা করলো আরব আমিরাত
একসঙ্গে অনেককে সালাম দিলে উত্তর দেবেন কে?
নবীজীর রওজায় বছরে একবারের বেশি যাওয়া যাবে না