জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও এমসিসিআই প্রতিনিধি দলের আলোচনা সভা্

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও এমসিসিআই প্রতিনিধি দলের আলোচনা সভা্
মেট্রপলিট্যান চেম্বার অফ কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রী ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি মিজ নিহাদ কবিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সদস্যদের সাথে বাজেট প্রস্তাবনা বিষয়ে এনবিআর’র সভা কক্ষে একটি সভায় যোগ দেন।

আলোচনা সভার শুরুতে সৌহার্দ্য বিনিময়ের পরে এনবিআর’র চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এমসিসিআই’র সভাপতি মিজ নিহাদ কবিরকে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেন।

এমসিসিআই’র সভাপতি একটি সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য রাখেন এবং বাজেট প্রস্তাবনার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে তার সহকর্মী চেম্বারের ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশন সাব-কমিটির চেয়ারম্যান আদিব এইচ. খানকে বিস্তারিত আলোচনার জন্যে আহ্বান জানান।

এসময় এমসিসিআই’র সভাপতি তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, এবারের বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা করোনা পরবর্তী বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন। তাছাড়া ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হতে যাচ্ছে। সেই হিসেবে এবারের বাজেট একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট হিসেবেও গণ্য হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা মতে, সামগ্রিক জাতীয় রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশী আসে এমসিআিই’র সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প গ্রুপ যারা প্রতিবছরই সর্বাধিক পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব প্রদান করে থাকে। যেমন- বৃটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, স্কয়ার গ্রুপ, এসিআই গ্রুপ ও ট্রান্সকম গ্রুপসহ অন্যরাও এমসিসিআই’র সম্মানিত সদস্য। সেই হিসেবে এমসিসিআই ও এর সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় রাজস্ব সংগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।

এছাড়াও তিনি বলেন, এমসিসিআই সবসময়ই একটি উন্নত রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালুকরণে গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলছে এবং সকল ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করছে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বর্তমান সরকারের সুনেতৃত্বে এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় এনবিআরও দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।

এমসিসিআই বাজেট প্রস্তাবনার মধ্যে সবসময়ই বাজেট ব্যবস্থাপনা অধিকতর গতিশীল করার দিকে জোর দিয়ে থাকে। এমসিসিআই বিশ্বাস করে, বাজেট ব্যবস্থাপনা গতিশীল ও স্বচ্ছ হলে ব্যবসায়ীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজস্ব প্রদান করবে। এমসিসিআই তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় সামগ্রিক কল্যাণ তথা দেশের কল্যাণ ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণ চিন্তা করে থাকে। এতে একদিকে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হয়, অন্যদিকে দেশের রাজস্ব আয়েও ঘাটতি হয় না। বিগত অর্থবছরে যদিও করোনাভাইরাসের কারণে রাজস্ব আয় চাপের মধ্যে ছিল। তবুও এনবিআর চেষ্টা করে যাচ্ছে রাজস্ব আহরণের গতিকে স্বাভাবিক রাখতে।

এমসিসিআই’র সভাপতি নিন্মলিখিত সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলির প্রতি চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন-

১। তিনি বলেন- ভূমি (স্থাবর সম্পত্তি) রেজিস্ট্রেশন ফি এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট হারে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা আসলে প্রকৃত বাজার মূল্যের থেকে অনেক কম। সেক্ষেত্রে যিনি ভূমি বিক্রি করছেন তার বৈধ উপার্জনের কিছু অংশ অবৈধ হয়ে যায়। কারণ তাকে বাজার মূল্যের চেয়ে কম হারে নির্ধারিত হার অনুযায়ী দেখাতে হয়। এক্ষেত্রে এমসিসিআই’র প্রস্থাবনা হলো- এনবিআর অংশীজনের সাথে আলাপ-আলোচনা করে যদি রেজিস্ট্রেশন ফির হার কমায়, তাহলে দেখা যাবে রাজস্ব আহরণে কোনো ঘাটতি হবে না। এতে করে বৈধ টাকা অর্থনীতিতে থাকবে। সেই সাথে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ হবে।

২।এমসিসিআই’র সভাপতি বলেন- ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে বর্তমান করপোরেট করহার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। সে জন্য এমসিসিআই এনবিআরের প্রশংসা করছে। এখানে একটি বিষয়ে চেয়ারম্যান মহোদয়সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, দেশে কার্যকরী করপোরেট করহার আরও অনেক বেশী। দেশে বর্তমানে আমদানিতে কর দিতে হয়, মধ্যবর্তী বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কর দিতে হয় এবং সর্বোপরি ফিনিশ্ড প্রোডাক্টেও কর দিতে হয়। এসব কিছু হিসাব করলে দেখা যায়, এই করহার ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ আর থাকে না, তা ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হয়ে যায়। এ বিষয়টি ব্যবসাকে মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুসাহিত করছে। সুতরাং এ বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করা অত্যন্ত জরুরী।

৩।বর্তমানে মূল্য সংযোজন কর বিষয়ক কোনো বিরোধের ক্ষেত্রে রিভিশনের বিধান যোগ করা হয়েছে। যেক্ষেত্রে আগে আপীল করার ব্যবস্থা ছিল। সেক্ষেত্রে সমস্যা হলো রিভিশনের যথাযথ ফলাফল লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং আগের ব্যবস্থা অর্থাৎ আপীলের বিধান পুনর্বহাল করার জন্য এমসিসিআই’র সভাপতি বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। কেননা সকলের আইনী প্রতিকার পাওয়ার অধিকার দেশের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত।

৪।সবশেষে এমসিআিই’র সভাপতি বলেন, বর্তমান আইনে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের জন্য কর আদায়ের ভিত্তিতে অর্থাৎ যারা বেশী রাজস্ব আদায় করতে পারবে, তাদেরকে প্রণোদনার বিধান আছে। এ কারণে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। যার ভুক্তভোগী হতে হয় ব্যবসায়ীদের। কেননা কোনো কোনো সার্কেলে ট্যাক্সের পরিমাণ কম, আবার কোনো কোনো সার্কেলে বেশী। তখন আইনের মধ্যে থেকেই বিভিন্ন চাপের সৃষ্টি হয়, যার ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। অবশ্যই কর্মকর্তাদের প্রণোদনার প্রয়োজন আছে, তবে সেটি যারা বেশী রাজস্ব আদায় করতে পারবে, তার ভিত্তিতে হওয়া উচিত নয়। এর নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুতরাং সরকার এই বিষয়ে বিকল্প কোনো চিন্তা করতে পারে।

পরবর্তীতে এমসিসিআই’র সভাপতি ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশন সাব-কমিটির চেয়ারম্যান আদিব এইচ. খানকে বিস্তারিত বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বাজেট বিষয়ে আরো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেন। এমসিসিআই সার্বিক বাজেট প্রস্তাবনায় আয়কর অধ্যাদেশ বিষয়ে ৩২টি, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শূল্ক আইন বিষয়ে ৬৭টি এবং কাস্টমস্ আইন বিষয়ে ১১টি প্রস্তাব পেশ করে।

ফলপ্রসূ আলোচনার পর এনবিআরের চেয়ারম্যান সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

এনআরবি ডে অ্যাওয়ার্ড পেল বিকাশ
পাবনার সুজানগরে স্বপ্ন’র নতুন আউটলেট
জেসিআই বাংলাদেশ ২০২৪ লোকাল অফিসার্স ট্রেনিং সম্পন্ন
সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স ও প্রবাসী সেবায় সম্মাননা পেলো ইসলামী ব্যাংক
ব্র্যাক ব্যাংক ও মেটলাইফের মধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি
এসবিএসি ব্যাংকের ৮৯তম শাখা উদ্বোধন
ব্র্যাক ব্যাংক রিডিং ক্যাফেতে ‘বানিয়ালুলু’ নিয়ে আলোচনা
তিন জেলায় বিকাশের পেমেন্ট মেলা
সাফা ‘ওভারঅল উইনার’ ও ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করলো ওয়ালটন
আইএফআইসি ব্যাংকের কম্বল বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন