তিন কোম্পানিতে ২০ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বিএসইসি’র

তিন কোম্পানিতে ২০ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বিএসইসি’র
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেড, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস লিমিটেড ও ফ্যামিলিটেক্স (বিডি) লিমিটেডের পর্ষদ পুনর্গঠন করে সেখানে ২০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ধারাবাহিক লোকসান, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়া, উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থতাসহ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণে এই তিন কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানি তিনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পর্ষদের কাছে এ-সংক্রান্ত আদেশের চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত তিনটি চিঠি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিডি, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস ও ফ্যামিলিটেক্স বিডির কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে কমিশন বলছে, এ ধরনের কার্যক্রম অগ্রহণযোগ্য। এ কারণে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানি তিনটির বিদ্যমান পরিচালকরা আর পর্ষদ সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতে কিংবা নির্বাচিত হতে পারবে না এবং উদ্যোক্তা ও পরিচালক কর্তৃক ধারণকৃত শেয়ার কমিশনের পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ব্লক থাকবে। তাছাড়া কমিশনের অনুমোদন ছাড়া এফডিআরসহ কোম্পানির যেকোনো সম্পদ বিক্রি, বন্ধক, স্থানান্তর, হস্তান্তর কিংবা নিষ্পত্তি করা যাবে না।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি চার বছর ধরে জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ১০ বছর ধরে নগদ লভ্যাংশ দিচ্ছে না, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে পারেনি, চার বছর ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকার পাশাপাশি এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে কোম্পানিটির মাত্র ৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটি যথাযথভাবে বিকশিত হচ্ছে না এবং কোম্পানির পরিচালকরা বাদে অন্য বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ পাচ্ছে না। কমিশন কোম্পানিটির নতুন চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে পাক্ষিক বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদ উল আলমকে মনোনীত করেছে। তার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিকুল ইসলাম, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মোহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশ বিমানের সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ নেয়াজ, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সাবেক কোম্পানি সচিব এটিএম নজরুল ইসলাম ও মো. মাকসুদুর রহমান সরকারকে প্রতিষ্ঠানটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের বিষয়ে কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, তিন বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি জেড ক্যাটাগরিতে থাকলেও এর পর্ষদ কোম্পানির অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তালিকাভুক্তির পর থেকেই এর পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এছাড়া কোম্পানিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এজিএম আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে, চার বছর ধরে কোম্পানিটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নিয়মানুযায়ী পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়নি। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা মোরশেদ কমিশনের পূর্ব অনুমোদন ছাড়াই তার কাছে থাকা কোম্পানির সব শেয়ার বেশি দামে বিক্রি করে দিয়েছে এবং এতে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ধারণ করা শেয়ারের পরিমাণ ২২ দশমিক ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া কোম্পানিটি লিস্টিং রেগুলেশনসহ অন্যান্য সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলসের পর্ষদে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা সরকারের অতিরিক্ত সচিব নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথকে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএম আশরাফুজ্জামান, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল হক খান, বিএএসএমের ড. তৌফিক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহসান, এবিএম শহিদুল ইসলাম ও ড. মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহকে কোম্পানিটির পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ফ্যামিলিটেক্সের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসি বলছে, কোম্পানিটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে এবং এর পর্ষদ কোম্পানিটির অবস্থার পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তালিকাভুক্তির পর থেকেই কোম্পানিটির পর্ষদ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি এবং সর্বশেষ ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণার মাধ্যমে কোম্পানিতে তাদের শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে তাদের কাছে থাকা অধিকাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে কোম্পানিটির মুনাফায় বড় উল্লম্ফন ঘটে, যা ২০১৪ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। কিন্তু এরপরেই ২০১৬ সালে কোম্পানিটির মুনাফায় হঠাৎ পতন ঘটে, যখন এর উদ্যোক্তারা তাদের কাছে থাকা বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে বাজার থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোম্পানি তার আর্থিক পারফরম্যান্স অতিরঞ্জিত করেছে বলে মনে করছে কমিশন। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোরশেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা মোরশেদ কোম্পানি থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর থেকেই এর পারফরম্যান্সে ধারাবাহিক অবনতি হতে থাকে। কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা বেশি দামে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা পরিপালন না করে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমানে এর উদ্যোক্তা-পরিচালকরা মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে। এছাড়া কোম্পানি লিস্টিং রেগুলেশনসহ বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির পর্ষদে ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত করেছে কমিশন। এর মধ্যে কাজী আমিনুল ইসলামকে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মোহাম্মদ হাসান জামিল, ড. সমীর কুমার শীল, ড. মো. জামিল শরীফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহসান ও ড. ফরজ আলী কোম্পানিটির পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত