করোনা ছড়াতে পারে টাকার মাধ্যমে! কী করবেন?

করোনা ছড়াতে পারে টাকার মাধ্যমে! কী করবেন?
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে কাঁপছে বিশ্ব। করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় মূলত বিশ্বের প্রতিটি দেশ তাদের জনগণকে করোনা থেকে রক্ষার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না করোনার আক্রমণ থেকে।

পাশের দেশ ভারতে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে এখনও করোনাভাইরাস সংক্রমন হয়নি বলে দাবি করছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর)।

আজ বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং করোনা সংক্রমনের বিষয়ে সতর্ক হতে বলেছেন। তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমনের হার কমলেও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। তাই বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সকল বন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার স্থাপনের উপর জোর দেন।



বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেহেতু বাংলাদেশে এখনও এ ভাইরাস সংক্রমনের খবর পাওয়া যায়নি, তাই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের যে সমস্ত দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা রয়েছেন তারা যদি দেশে আসেন তাদের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভারতে যদি এ ভাইরাস জেঁকে বসে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। সীমান্ত স্থলবন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সীমান্ত বন্ধ করে দিতে হবে।

বিভিন্নভাবে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কথা বলছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে কাগজের নোটের লেনদেনের ব্যাপারেও সতর্ক হতে বলেছেন গবেষকরা।

ব্যাংকের টাকায় লেনদেন করার সময় এক ব্যক্তির হাত থেকে আরেক ব্যক্তির হাতে টাকা যায়। ফলে এসব টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে বলে সাবধান করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

আর তাই করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নগদ লেনদেন এড়িয়ে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। খবর দ্য টেলিগ্রাফের

ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরণের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করার ঘটনা নতুন নয়। এমনকি ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সংক্রামক নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, টাকা দিয়ে লেনদেন করার পর ভালোভাবে হাত ধোয়া উচিত। নইলে হাতে লেগে থাকা জীবাণু আরেক ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

ইতোমধ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তাদের গ্রাহকদের নগদ টাকা ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছে। নগদ টাকায় ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস লেগে থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।



করোনাভাইরাস ঠেকাতে গত মাস থেকে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের জনগণকে নগদ লেনদেনে নিরুৎসাহিত করছে।

২০১৫ সালে দিল্লির ইন্সটিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি-র বিজ্ঞানীরা তাদের এক গবেষণার ফলে জানান, ভারতের বাজারে চালু নোটগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে তাতে অন্তত ৭৮ রকম বিপজ্জনক মাইক্রোবের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন - যা থেকে মারাত্মক সব রোগ ছড়াতে পারে।

এমনকি বাংলাদেশের একদল গবেষক গত বছরের অগাস্ট মাসে বলেছিলেন, তারা বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এমন ধরণের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছেন, যা সাধারণত মলমূত্রের মধ্যে থাকে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্রী নিশাত তাসনিম প্রায় ছয় মাস ধরে বাজারে প্রচলিত টাকা ও কয়েন নিয়ে গবেষণা করে বলেন, এসব মুদ্রায় তিনি ই-কোলাই জাতীয় ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন।

১৫টি উৎস থেকে নেয়া কাগজের টাকার নোট ও কয়েনে এক হাজারের চেয়ে আরো অনেক বেশি মাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখেছেন তারা। এক হাজার মাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াকে সহনশীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী টাকা নিয়ে করা ওই গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।

এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, "এ পরীক্ষায় আমরা যা পেয়েছি তা জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়াবহ। কারণ সাধারণ ব্যাকটেরিয়া তো আছেই, সাথে পাওয়া গেছে মানুষের মল মূত্র থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক"।

ফলে এসব মুদ্রার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।

ড. চৌধুরী বলেন, যেহেতু আমরা গবেষণা করে টাকায় বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি যা মানুষের অন্ত্রে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি করে তাই এর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

টাকা বা ডলারের ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক বিনিময়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস শুধু একটি দেশের মধ্যে নয় বরং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
তার মতে, টাকা বা ডলারের ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক বিনিময়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাস শুধু একটি দেশের মধ্যে নয় বরং বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

"যেহেতু এটা সরাসরি মানুষ হাত দিয়ে ধরে, অনেক সময় মুখের থুথু নিয়ে কাউন্ট করে। তাই এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেখান থেকে এটা হতে পারে যদি মানুষ সে হাতে খায়, মুখে দেয়।"

তিনি জানান, ভাইরাস বাহকের শরীরে সক্রিয় হয়, অন্যত্র নিষ্ক্রিয় থাকে। টাকায় থাকলে সে হয়তো নিষ্ক্রিয় থাকে, কিন্তু মানুষের সংস্পর্শে এলে সেটি করোনাভাইরাসের উপসর্গ বা রোগের সৃষ্টি করতে পারে, এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

এমন আশঙ্কায় চলতি বছরের গতমাসে ভাইরাসে উপস্থিতি নিয়ে টাকা বা ব্যাংক নোট জীবাণুমুক্ত করার একটি উদ্যোগ দেখা যায় চীনে।

দেশটিতে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সেখানে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে বাজার থেকে ব্যাংক নোট সরিয়ে নিয়ে তা আবার জীবাণুমুক্ত করে বাজারে ছাড়ে দেশটি।



বাংলাদেশে অবশ্য এখনো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ পর্যন্ত একশোটিরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করলেও তাতে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি।

মুদ্রার মাধ্যমে সংক্রমণ এড়াবেন যেভাবে
বিশ্বজুড়ে এমন আশঙ্কার পর বিশেষজ্ঞরা, ব্যাংক নোট এড়িয়ে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্পর্শবিহীন লেনদেন বা প্রযুক্তি বলতে, ব্যাংক নোট ছাড়া অন্য মাধ্যম যেমন কার্ড, বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ যেমন বিকাশ বা নগদ অথবা অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেনের কথা বোঝানো হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে প্রায় শতভাগ লেনদেন হয় ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সেখানে কিভাবে এই পরামর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা, ব্যাংক নোট এড়িয়ে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরণের পরামর্শ মেনে চলা কঠিন।

তবে এক্ষেত্রে ব্যাংক নোট ব্যবহারের বিষয়ে তারা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

জাতীয় রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু এখনো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি তাই এখনই এ বিষয়ে বলাটা কঠিন।

তবে যদি শনাক্ত করা হয়, সেক্ষেত্রে ভাইরাসটি যাতে অতিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ব্যাংক নোট ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।

এক্ষেত্রে কিছু পরামর্শের কথা বলছেন মাহমুদুর রহমান:

অবশ্যই টাকা গোনার সময় হাত দিয়ে মুখের লালা নেবেন না
ব্যাংক নোট বা টাকা নাড়াচাড়ার পরপরই অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
যারা অত্যধিক মুদ্রা নাড়াচাড়া করেন, যেমন ব্যাংক কর্মী বা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা, তাদেরকে অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। তারা দস্তানা বা গ্লাভস পরে নিতে পারেন।
সতর্কতা হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে পারেন।
টাকা ধরা বা ব্যবহারের পর পরই চোখ, নাক বা মুখে হাত দেয়া যাবে না।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

কাজে লাগান পুরনো টুথব্রাশ
খরচ কমাতে বছরের শুরু থেকেই করুন এই ৫ অভ্যাস
শীতে যে ৪ খাবার বাদ দেবেন না
উৎসবে বাজি-পটকা কতটা ক্ষতিকর?
শীতে কোন সময় গোসল করলে শরীর থাকবে সুস্থ?
গলাব্যথা সারাতে কেন লবণ-পানি পান করবেন
কাঠবাদামের তেল কতটা উপকারী?
সপ্তাহে ১ দিন শ্যাম্পু করলেই দূর হবে খুশকি
সর্দি-কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়
জাল নোট চেনার সাত উপায়