পুঁজিবাজার নিয়ে আমি আশাবাদী

পুঁজিবাজার নিয়ে আমি আশাবাদী
দেশের পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি অর্থসংবাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করেছেন ভার্টেক্স স্টক এন্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ নাদিম হোসেন। অধিকাংশের কাছে তিনি সাজু নামেই পরিচিত। পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িয়ে জীবনের অনেকটা সময় পার করেছেন এ ব্যবসায়ী। তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন আমাদের সঙ্গে। মতামতের চুম্বক অংশ অর্থসংবাদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।ছবি তুলেছেন ফয়সাল ইব্রাহীম

দেশের বর্তমান পুঁজিবাজার নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

আমি আশাবাদী মানুষ এবং চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। তাই আমাদের পুঁজিবাজার নিয়েও আমি আশাবাদী। পুঁজিবাজারে উত্থান পতন থাকবেই, বিশ্বের সব দেশের পুঁজিবাজারেই উত্থান-পতন থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের বিষয়টা একটু ভিন্ন। কারণ আমাদের দেশের বাজার অদক্ষ এবং ইক্যুইটিভিত্তিক। যে কারণে আমাদের সমস্যাগুলোও একটু বেশি। বাজারে ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট না থাকার কারণে এই হতাশাগুলো রয়ে গেছে।

বিনিয়োগ কখন করা উচিৎ? এখন বিনিয়োগ করা কতটুকু নিরাপদ?

বর্তমানে মার্কেটে শেয়ারের প্রাইস অপরচ্যুনিটিও আছে এবং বিনিয়োগকারীও আছে। এখন আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার সময়। কারণ অনেক শেয়ারের দাম তুলনামুলক যৌক্তিক দামে রয়েছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শেয়ারের দাম অনেক কম থাকলেই যে সেই শেয়ার কিনতে হবে বিষয়টা কিন্তু তা নয়, কোম্পানির ইতিহাস পর্যালোচনা করে শেয়ার মূল্য দেখে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে জানতে হলে পড়াশুনা করা উচিৎ, এখন বাজারে অনেক স্মার্ট ইনভেস্টর এসেছে। আগের তুলনায় এখন অন্যের কথায় শেয়ার কেনার প্রবনতা অনেকটা কমেছে।



আমার ক্যারিয়ারের ১৬ থেকে ১৭ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মার্কেট নিস্নমূখী বা পতন হলেই গেইন করার সুযোগ তৈরী হয়। আমি দুইবার এ বাজারের পতন দেখেছি। তাই আমার মনে হচ্ছে আমাদের মার্কেট এই অবস্থায় থাকবে না, এখান থেকে ঘুরে দাড়াবেই। তাই এখনই বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। ১৯৯৬ সালের বাজার পতনের পরও যারা ২০১০ সাল পর্যন্ত ধৈর্য্য নিযে অপেক্ষা করেছিল এবং বুদ্ধি দিয়ে বিনিয়োগ করেছেন তারাই বেশি লাভবান হয়েছেন। আর যারা বাজার ছেড়ে চলে গেছেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশি। গত ২০১০ সালের পুঁজিবাজারে পতনের সময় আমরা যারা হতাশ ছিলাম। তখন অভিজ্ঞরা বলতেন ১৯৯৬ সালের ধস দেখেছি, তাই সে অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। আবার সুসময় আসবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আসলে আমরা সবাই জানি খারাপ সময় শেয়ার কিনতে হয়, আর ভালো সময় বিক্রি করতে হয়। কিন্তু সেটা সবাই করতে পারে না।

পুঁজিবাজারে পতনের কারণ

আমাদের পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে পতনের বিষয়টা ছিল ভিন্ন, কারণ সে সময় বেশি লোন নেয়ার একটা বিষয় ছিল। পুঁজিবাজারের জন্য সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে একটা ভালো পলিসি সাপোর্ট দরকার হয়। ২০১০ সালে এটার একটু অভাব ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টেক হোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কমিউনিকেশনের গ্যাপের কারনেই এই সমস্যাটা তৈরী হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে যে পতন হয়েছে সেটার জন্য কিছুটা গাইডেন্স এর অভাব ছিল্। তার কারনে শেয়ারের দাম ছিল অনেক বেশি। সামগ্রিক কারনেই তখন বড় ধরনের পতন দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে যদি দেখেন প্রায় সব শেয়ারেরই দাম অনেক কম, তাই এখন বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।কিন্তু সঠিক কমিউনিকেশন এবং কনফিডেন্স গ্রো করার জন্য পরিবেশটা না থাকার কারনেই শেয়ারবাজারে স্থায়ীভাবে প্রান ফিরছে না।

মানি মার্কেট এবং শেয়ারবাজার ও জিডিপি গ্রোথ

পুঁজিবাজার একটা খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয়। তাই আমাদের জিডিপির সঙ্গে শেয়ারবাজারকে তুলনা না করে ক্যাপিটাল মার্কেটের গ্রোথের রেশিইও বাড়ানোর জন্য যেখানে ফোকাস করা উচিৎ। সেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা দরকার।সেই জায়গার মধ্যে শেয়ারবাজারে তারল্য একটা বড় বিষয়। তারল্য সংকট থাকলে বাজারকে নির্ভরযোগ্য জায়গায় নেয়া খুবই কঠিন। মানি মার্কেট এবং ক্যাপিটাল মার্কেট একটা অন্যটার সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মানি মার্কেটে বাইব্রেন্ড থাকলে ক্যাপিটাল মার্কেটে এমনিতেই অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। তাই এখানে মানি মার্কেট এর সংকটের প্রভাব ক্যাপিটাল মার্কেটে কিছুটা পড়েছে। সরকার ক্যাপিটাল মার্কেটকে ফোকাস করলে দেশের অর্থনীতিকে বড় করতে এবং জিডিপিতে অন্যান্য খাতের তুলনায় ক্যাপিটাল মার্কেট অনেক বেশি অবদান রাখবে।

স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের প্রভাব পুঁজিবাজারে

আমাদের দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন এর বয়স খুবই অল্প দিনের। যে কোন কিছুতেই পরিবর্তন আনতে হলে একটু সময় দিতে হবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই কিন্তু সব মেগা প্রজেক্টে হাত দেয়নি, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য সময় লেগেছে, তাই টেকসই পুঁজিবাজার গঠনেও একটু সময় দিতে হবে। তাড়াহুড়া করে কোথাও ক্যাপিটাল মার্কেটের উন্নয়ন হয়নি। আমাদের স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টররা কিন্তু পাকিস্তানেও ছিল, সেখানেও সময় লেগেছে। আমাদের বাজারেরও উন্নয়ন হবে। কারন আমাদের সরকারও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে।



পুঁজিবাজারে ক্যারিয়ার

যারা নিজেকে গতানুগতিক চিন্তা ভাবনায় না মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে এবং ডাইনামিক তাদের জন্য অনেক সম্ভাবনাময় এই সেক্টর। এই খাতে এখনও অনেক যোগ্য লোকবলের অভাব রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে অনেক কোয়ালিফাইড লোকজন আসছেন। ক্যারিয়ারে ডেডিকেশন ও পেশন এবং সততা অনেক বড় বিষয়, এটা যাদের আছে তারা আসলে অনেক ভালো করার সুযোগ আছে। কেউ যদি মনে করে এই খাতে প্রতিষ্ঠিত হবে তাও সম্ভব। আবার কেউ যদি চায় যে অনেক অর্থ বা টাকার মালিক হবে তাও সম্ভব।

ভার্টেক্স স্টক এন্ড সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকারীদের জন্য কি কি সুবিধা রয়েছে?

ট্রাস্ট এবং ট্রান্সপারেন্সি আমাদের মূলধন। আমাদের এখানে বিনিয়োগকারীরা কমফোর্ট পাবে। বিনিয়োগকারী বা ক্লায়েন্ট হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউজের প্রান। তাই আমাদের এখানে বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ সেবা পাবে। আমাদের এখানে বিনিয়োগকারীদের সেবার জন্য দক্ষ এবং ডেডিকেটেড জনবল রয়েছে।

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত