শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট কোম্পানির তুলনায় যে সংখ্যক কোম্পানি সেই দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশে।


শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করছেন, জবাবদিহীতার বাইরে থাকার জন্য অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চাচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনে বলা হয়েছে, কোনো দেশী কোম্পানীর পরিশোধিত মুলধন ৫০ কোটি বা এর বেশি হলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক।


বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানি আছে ভারতে। দেশটির প্রায় ৫ হাজার ৬৫টি কোম্পানি দেশের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত রয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৪ হাজার ৩৯৭টি। এছাড়া জাপানে ৩ হাজার ৬৫২টি, চীনে ৩ হাজার ৫৮৪টি, কানাডায় ৩ হাজার ৩৩০টি, স্পেনে ২ হাজার ৯৭৯টি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২ হাজার ১৮৬টি, হংকংয়ে ২ হাজার ১৬১টি, অস্ট্রেলিয়ায় ২ হাজার ৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা অনেক কম, মাত্র ৬৮৯টি।


রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের (আরজেএসসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বর্তমানে দেড় লাখেরও বেশি। এরমধ্যে ৫০ কোটি টাকার বেশি মূলধনের কোম্পানির সংখ্যা প্রায় এক হাজার। অথচ ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মাত্র ৩৫৮টি।


এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর অর্থসংবাদকে বলেন, ‘সরকারী কোম্পানিগুলো আসতে চায় না কারণ তারা খুব আরামে আছে; কাজ করতে হয় না, বসে বসে বেতন পায়, পেনসন পায়, লোকশান করলে সরকার তা মিটিয়ে দেয়। এসব কোম্পানি সেসরকারি খাতে গেলে কাজ করে খেতে হবে। আর সরকারি কর্মকর্তা ঐখানে বসে বসেই বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়, সরকারি গাড়ি হাঁকায়, এই সুযোগগুলো চলে যাবে। এই জন্যই তারা শেয়ারবাজারে আসতে চায় না।’


এই পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলোকে কিভাবে শেয়ারবাজারে আনা যায় এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার তাদেরকে বাধ্য না করলে কিছুতেই তারা শেয়ারবাজারে আসবে না। সহজে এই কাজ হবে না। এদের ঘাড় ধরে শেয়ারবাজারে আনতে হবে।’বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির মধ্যে যে সব বড় বড় কোম্পানি রয়েছে তা নয়। এসব দেশে অনেক ক্ষুদ্র কোম্পানিও তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ছোট কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ অনেক কম। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছোট কোম্পানীগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য অনেক সুযোগ রাখা হয়েছে।


ছোট কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে জাপান। দ্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জ-এর ২০১৬ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশটির মোট ৮৪.৩৭ শতাংশ ক্ষুদ্র কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। জাপানের পরের স্থানে রয়েছে চীন-৮০.৭৪ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ৭৯.৪৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ৭৬.৬০ শতাংশ, ভারতের প্রায় ৭৪.৫৪ শতাংশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।


বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলেই ওই কোম্পানিকে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হয়। কোনো কোম্পানি ৫০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে তালিকাভুক্তির বিধান রয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা আরোপের পর একযুগ পার হলেও বেশিরভাগ কোম্পানিই তা মানছে না।


শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, শেয়ারবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির জন্য বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা জরুরি। আর বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর বাজার মূলধন অনেক বেশি। তাই এসব কোম্পানি বাজারে আসলে বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার জন্য সরকার দীর্ঘদিন ধরে উৎসাহ দিলেও কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো কোম্পানি বাজারে আসলেও মুলধন বৃদ্ধি করে না। কেবল কর মওকুফ সুবিধা পাওয়ার জন্যই তারা বাজারে আসে।


এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানিগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড হিসেবে ঘোষণা করা অর্থের একটি বড় অংশ মানি-লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়।


ডিএসইতে মোট ৩৫৮টি কাম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১১টি বহুজাতিক কোম্পানি। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনায় বাধা তৈরী হবে- এমন আশঙ্কাতেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে ইচ্ছুক নয় বলে অভিযোগ রয়েছে।


কোম্পানি আইন অনুযায়ী, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি রুপান্তরিত হলে অর্থাৎ, পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হলে কর্পোরেট কর ৫ শতাংশ কম দিতে হয়। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যাবসায়িক অবস্থা ভালো থাকা সত্বেও বাজারে নামেমাত্র শেয়ার ছেড়ে এই কর রেয়াতের সুযোগ নিচ্ছে। একে তো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে চাচ্ছে না, অপরদিকে যেসব কোম্পানি আসছে তারা বেশি শেয়ার না ছেড়ে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রেখে দিচ্ছে।


এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, ‘বিদেশী ও দেশের বেসরকারী কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসলে তাদের জবাবদিহিতা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে নোগোশিয়েট করে আনতে হবে; তাদের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিলে চলবে না।’

আর্কাইভ থেকে

আরও পড়ুন

ফু-ওয়াং সিরামিকের লভ্যাংশ অনুমোদন
এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা
ডিএসইতে মোবাইল গ্রাহক-লেনদেন দুটোই কমেছে
বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়েছে ৯ কোম্পানি
পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ আজ
বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪০ শতাংশ
রবিবার পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলেও চলবে দাপ্তরিক কার্যক্রম
লোকসানে ৮ খাতের বিনিয়োগকারীরা
সাপ্তাহিক রিটার্নে মুনাফায় ১০ খাতের বিনিয়োগকারীরা
খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে প্রকৌশল খাত