চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেবেন তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন জবানবন্দির শুরুতেই মামলার আসামিদের ব্যক্তিগত দায় তুলে ধরার কথা রয়েছে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন পর্যায়ক্রমে পুরো ঘটনার বর্ণনা উপস্থাপন করবেন। যদিও গতকাল (রোববার) দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি ১৬ আসামির দায় ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরেছেন। অবশিষ্ট আসামিদের বিষয়ে আজ তার সাক্ষ্য সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এ মামলায় ২৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হচ্ছে।
তদন্তকালে কোথা থেকে, কবে ও কীভাবে কী আলামত জব্দ করা হয়েছে—সব বিষয়ই তিনি নিজের জবানবন্দিতে তুলে ধরছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিদের আইনজীবীরা তাকে জেরা করবেন।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা জবানবন্দি দেন। একই দিনে তদন্ত সংস্থার রেকর্ড সংরক্ষণকারী এসআই মো. কামরুল হোসেনেরও জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সব মিলিয়ে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
এরও আগে, ৯ ডিসেম্বর ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে কোথায় রাখা হয়েছিল, তা বলতে গিয়ে একটি নতুন সেইফ হাউজের কথাও জানান।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সময় টিভি, ডিবিসি, ৭১ টিভিসহ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের ‘নোংরা ভূমিকা’ পালনের অভিযোগ করেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে অভিযোগ করেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদের সামনে বসে স্ক্রল বলতেন এবং সেই কথাই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রচার করত।
এ মামলায় গ্রেপ্তার ছয় আসামি হলেন- এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
চলতি বছরের ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর আগে ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এ মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন এখনও পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে গত ২২ জুলাই সরকারি খরচে চারজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
এরও আগে, ৩০ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল এবং ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এ মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৬২ জন।
এমকে