চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা এলাকার সীমান্ত দিয়ে ভারতের ওডিশা রাজ্যে বসবাসরত একই পরিবারের ১৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। তাদের মধ্যে ছয়জন নারী ও চারজন শিশু।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঠেলে পাঠানোর পর দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয় তাদের।
পরদিন শুক্রবার রাতে খবর পেয়ে কনকনে শীত নিবারণের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ভুক্তভোগীদের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেন। পরে পুলিশ ও বিজিবি তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়।
ভুক্তভোগীদের দাবি, তারা ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা। দেশটির ওডিশা রাজ্যের সাতকুড়া ধনিপুরে ৭০ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন।
তারা সবাই মুসলিম ও ভারতের ওডিশার নাগরিক। সেখানে তাদের বাড়িঘর রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে আব্দুল জব্বার নামের একজন জানান, আড়াই বছর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে তারা ওডিশায় বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তাদের বিয়ে ও সংসার শুরু হয়।
বাংলাদেশের কোন জেলায় তাদের বাড়ি ছিল, তার কিছুই জানেন না তিনি। মাসখানেক আগে এক গভীর রাতে সেখানকার পুলিশ জব্বারসহ তাঁর পরিবারের ১৪ সদস্যকে ধরে নিয়ে যায়। আটগড় জেলখানায় এক মাস পাঁচ দিন হাজতবাস শেষে গত বৃহস্পতিবার সবাই মুক্তি পান। ওইদিন রাত ৩টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা তাদের জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়। ভারতীয় পুলিশ তাদের ‘বাংলাদেশি’ অপবাদ দিয়ে ধরে জেলে পাঠায়।
এ সময় তাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর সীমান্তে এনে কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে তাদের ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দর্শনা নীমতলা সীমান্ত গলিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে তাদের। শুক্রবার ভোরে তারা অবস্থান নেন দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তবে ওইদিন রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন তাা।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, ঠেলে পাঠানো ভুক্তভোগীদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ। তাদের সবাইকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা করানো হবে। চিকিৎসা শেষে জেলা প্রশাসক ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।