ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

আট তথ্য চেয়ে বিএসইসির চিঠি, বেক্সিমকোর ফ্লোর তুলে নেওয়ার গুঞ্জন

দেশের পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে পতন চলছে। এতে প্রতিদিনই পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘদিন ধরে দরপতনের এই প্রবণতায় বাজারে চরম আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) ইস্যু। ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যসীমা বহাল থাকা বেক্সিমকোর শেয়ারে ফ্লোর তুলে নেওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। এতে গতকাল মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শেষ পর্যন্ত দিন শেষ হয়েছে পতনের মধ্য দিয়ে।

সূত্র মতে, গত ২২ ডিসেম্বর বিএসইর সহকারী পরিচালক ফয়সাল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে বেক্সিমকোর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়। এর পরদিন ২৩ ডিসেম্বর ডিএসইর এজিএম রবিউল ইসলামের সই করা আরেকটি চিঠি ডিএসইর সব ট্রেকহোল্ডারের কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পোর্টফোলিও ও গ্রাহকদের পোর্টফোলিওতে থাকা বেক্সিমকোর শেয়ারের পরিমাণ, মার্জিন হিসাব, ক্রয়মূল্য, বাজারমূল্যসহ মোট আটটি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়।

এই চিঠিকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ধারণা করছেন, বেক্সিমকোর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এসব তথ্য সংগ্রহ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমন গুঞ্জন বাজারে ছড়িয়ে পড়ার পরই পুঁজিবাজার নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৬০ পয়েন্টে।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২০ সাল থেকে কয়েক দফায় ‘ফ্লোর প্রাইস’ বা শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যসীমা আরোপ করে। তবে কৃত্রিমভাবে বাজার ধরে রাখার এই ব্যবস্থাটি শুরু থেকেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

২০২৪ সালে এসে ধাপে ধাপে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয় বিএসইসি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৯১৬তম জরুরি কমিশন সভায় চারটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। এতে মাত্র দুটি কোম্পানির শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস অবশিষ্ট থাকে। এর একটি বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) এবং অন্যটি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

উল্লেখ্য, সাবেক স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ, যারা ২০১৭ সালে বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বাড়তে থাকে। ডিএসইতে নিয়ম ভেঙে পরিচালক নিয়োগ, আইপিও প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ থাকা, বিএসইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ এবং বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে পুঁজিবাজার ক্রমাগত পতনের মুখে পড়ে।

যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শক্ত অবস্থান বাজারকে স্থিতিশীল রাখার কথা, সেই বিএসইসিতেই শুরু হয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল। কমিশনের হঠকারী সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর প্রতিবাদে গত ৫ মার্চ চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরদিন ৬ মার্চ চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান আশিকুর রহমান ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এর পর থেকেই বিএসইসিতে কার্যত এক ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় ২২ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দুজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এতে কমিশনের ভেতরে আরও ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিএসইসির বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য কোনোভাবেই সহায়ক নয়। চলমান সংকট থেকে উত্তরণে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্বে আনার দাবি জোরালোভাবে তুলছেন বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার