ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

পরিচালন লোকসানেও পরিচালক-চেয়ারম্যানের ভাতা বাড়ালো ডিএসই

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল ব্যবসায় বড় লোকসান করেছে। লেনদেন খরায় ডিএসইর পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। এক্সচেঞ্জটির রাজস্ব আয় কমেছে। এমন মন্দা অবস্থায় পরিচালনা পর্ষদ পরিচালক ও চেয়ারম্যানের যেকোনো সভায় উপস্থিতির ভাতা বাড়িয়েছে ডিএসই। যা অযৌক্তিক ও অবিবেচিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে ডিএসইর ১১০২তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মনোনয়ন ও পারিশ্রমিক কমিটির (এনআরসি) সুপারিশের ভিত্তিতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় এবং বোর্ড কর্তৃক গঠিত যেকোনো কমিটির সভায় উপস্থিত প্রতিটি পরিচালকের জন্য সম্মানী ভাতা ২০ হাজার টাকা (ভ্যাট এবং কর বাদে) করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের জন্য মাসিক সম্মানী ভাতা ৫০ হাজার টাকা (ভ্যাট এবং কর বাদে) করার সিদ্ধান্ত নেয়।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছে, নিয়মিত পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের হাহাকার বাড়ছে। প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর লেনদেন খরায় পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে ডিএসইর লেনদেন কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। এক্সচেঞ্জটির রাজস্ব আয় কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। ব্যবসা মন্দা চরমে থাকা অবস্থায় ডিএসইর পরিচালক ও চেয়ারম্যানের ভাতা বাড়ানোর অযৌক্তিক ও অবিবেচিত সিদ্ধান্ত।

এদিকে গত ২ নভেম্বর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে দেড় লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। সেই হিসাবে বছরের ব্যবধানে ডিএসইর লেনদেন কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। আলোচিত অর্থবছরে এক্সচেঞ্জটিতে প্রতিদিন গড় লেনদেন হয়েছে ৪৭২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে যা হয়েছিল ৬২২ কোটি টাকা। সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে ডিএসইতে একদিনের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১০ কোটি টাকা এবং সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে ১৫৯ কোটি টাকা।

এছাড়াও, আলোচ্য হিসাববছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে ডিএসইর রাজস্ব আয়। লেনদেনে বড় ভাটা পড়ায় আলোচ্য অর্থবছরে এক্সচেঞ্জটির রাজস্ব আয় কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিএসইর মোট রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে যা হয়েছিল ১২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির রাজস্ব আয় কমেছে ২৭ কোটি টাকা বা প্রায় ২১ শতাংশ।

আলোচিত অর্থবছরে ডিএসইর পরিচালন লোকসান হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এক্সচেঞ্জটির পরিচালন লোকসান হয়েছিল ২১ কোটি টাকা কম। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ডিএসইর পরিচালন লোকসান বেড়েছে ২৮ কোটি টাকা বা ১৩৩ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিএসইর অপরিচালন খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এফডিআরের সুদ ও বন্ডের বিনিয়োগ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা এবং ভবন ভাড়া দিয়ে আরও ১০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। এই আয়ের সুবাদে আলোচিত অর্থবছরে এক্সচেঞ্জটি ৩৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আগের অর্থবছরে যেখানে ডিএসইর নিট মুনাফা হয়েছিল ৬১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মুনাফা কমেছে ৪৭ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমছে ডিএসইর মুনাফা। করোনাকালীন মহামারির পরিস্থিতির মধ্যেও এক্সচেঞ্জটির ১২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছিল। পরের অর্থবছরে এই মুনাফা কমে ৮০ কোটি ৬০ লাখ হয়। সর্বশেষ দুই অর্থবছরে ডিএসইর মুনাফা আরও কমলো।

এদিকে, সামান্য মুনাফা করায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে ডিএসই। এ হিসাবে এক্সচেঞ্জটির মোট ১৮০ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ারের বিপরীতে ৩৬ কোটি ৮ লাখ টাকা নগদ লভ্যাংশ হিসেবে বণ্টন করতে হবে।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার