ক্যাটাগরি: জাতীয়

বজ্রপাতে ১৫ বছরে ২ হাজার মৃত্যু, নেই পর্যাপ্ত সতর্কতা ও প্রস্তুতি

দেশে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে বজ্রপাতে প্রায় ২ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং এক হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রপাতজনিত ঝুঁকি দ্রুত বাড়লেও আগাম সতর্কতা ও কমিউনিটি প্রস্তুতি এখনো অত্যন্ত সীমিত-এমন তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়। বজ্রপাতজনিত ঝুঁকি কমাতে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরা।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ব্রিজিং সায়েন্স উইদ কমিউনিটিজ: ডেভেলপিং অ্যা কমিউনিটি-বেজড লাইটনিং আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণার জাতীয় শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এ তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে বজ্রপাতে প্রায় ২ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। বজ্রপাতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে গ্রামীণ কৃষক ও জেলে কমিউনিটির ওপর, বিশেষ করে সুনামগঞ্জসহ হাওর অঞ্চলে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। এই গবেষণা বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাসকে কমিউনিটি-কেন্দ্রিক জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপে রূপান্তরের দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

তিনি সতর্কবার্তা দ্রুত মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে আন্তঃসংস্থাগত সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনে (ডব্লিউএমও) বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোমেনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বিএমডির বৈজ্ঞানিক তথ্য উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে সহায়তা করে, তবে শুধু বিজ্ঞানই যথেষ্ট নয়। কমিউনিটির আস্থা, সহজবোধ্য যোগাযোগ ও শক্তিশালী সমন্বয়ের মাধ্যমে সতর্কবার্তাকে কার্যকর করতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বজ্রপাতকে ঝুঁকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রস্তুতি অত্যন্ত কম। জরিপকৃত পরিবারের অর্ধেকের বেশি বজ্রপাতজনিত মৃত্যু বা আঘাতের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। প্রায় ৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা সতর্কবার্তার সময় (লিড টাইম) সম্পর্কে অবগত নন এবং ৯৬ শতাংশ কখনো বজ্রপাত বিষয়ক মহড়ায় অংশ নেননি। এর ফলে নারী, যুব, প্রতিবন্ধী ও স্বল্প-শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এইচ. ই. হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন ও প্রমাণভিত্তিক উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষে ইকো-এর প্রতিনিধি মোকিত বিল্লাহ অন্তর্ভুক্তিমূলক আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় টেকসই বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

পরে অনুষ্ঠিত প্যানেল আলোচনায় বজ্রপাত পূর্বাভাসের স্বল্প সময়, সীমিত রাডার কাভারেজ, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আলোচকরা কমিউনিটি-কেন্দ্রিক সতর্কতা ব্যবস্থা, বহুমুখী যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এবং নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদারের সুপারিশ করেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও পূর্বাভাস, সতর্কবার্তা প্রচার ও কমিউনিটি প্রস্তুতিতে এখনও ঘাটতি রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে গবেষণাটি কমিউনিটি-ভিত্তিক বজ্রপাত আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়, যা বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাসকে স্থানীয় জ্ঞান ও বিশ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করবে।

এমকে 

শেয়ার করুন:-
শেয়ার