ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

শেয়ারবাজারে উল্টো পদচারণা, উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা

দীর্ঘদিন ধরে সংকটে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব আসার পর সংকট উত্তরণের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু হয়েছে এর উল্টো। ধারাবাহিক দরপতনে রয়েছে বাজার। লেনদেনের পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে। ব্যাংক খাতে বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি দৃশ্যমান হলেও শেয়ারবাজার যেন হাঁটছে ভূতের মতো উল্টো পায়ে। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হচ্ছে না।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল চরম সংকটে। আমদানি ব্যয় মেটাতে না পারায় নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে রপ্তানির কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছিল। ডলার সংকটে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। দেশের চলতি হিসাবের ব্যাপক ঘাটতি ছিল। এসব ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। রেমিট্যান্স ব্যাপক বেড়েছে। ব্যাংকগুলোতে সুশাসন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে উন্নতি হয়নি শেয়ারবাজারের।

শেয়ারবাজারের অংশীজনদের অনেকেই বলেছেন, দরপতনের কারণ যাই হোক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্রোকার হাউস ও মর্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কমিশনের কাছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল অতীতে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না; এমন ভরসা তৈরি করা। অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের ঘটনায় জড়িতদেরও আইনের আওতায় আনা। তাঁরা বলেন, সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিতÑ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব বিষয়ে তাদের অস্বস্তি আছে, সেগুলো আপাতত দূরে রাখা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে এ বাজার পরিচালনা করা যাবে না।

বাজারের এই দরপতনের জন্য বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, দরপতনের কারণে সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগ বিনিয়োগ সক্ষমতা হারানোয় লেনদেন ক্রমে কমছে। ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশের কাছে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ নেই। আর বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা নতুন করে বিনিয়োগের সামর্থ্য রাখেন, তাঁরা ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অবস্থা এবং নীতির ধারাবাহিকতা কী হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত নন। ফলে নতুন করে তাঁরা বিনিয়োগে আসছেন না। সহসা এ অবস্থার পরিবর্তনের আশাও কম।

বাজারসংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, অনিশ্চিত পরিবেশে বিনিয়োগ হয় না। বিগত সরকার যে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করে গেছে, তা থেকে উত্তরণে কোনো ‘ম্যাজিক’ বর্তমান সরকারের কাছে নেই। মানুষ যদি বিনিয়োগে আস্থা না পায়, তাহলে শত বলেও বিনিয়োগে আনা যাবে না। তাঁর ধারণা, সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখন শূন্যেরও নিচে। অর্থাৎ, ঋণাত্মক। দর পতনের এ সময় যেখানে শেয়ার কেনার কথা, তখন আরও দর হারানোর ভয়ে অনেকে শেয়ার বিক্রি করছেন। ফলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের শেয়ারবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এতে ৬ মাসের মধ্যে বাজারটিতে সব থেকে কম লেনদেন হয়েছে।

এর আগে, গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে সপ্তাহজুড়ে ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে ৩২৫টির দাম কমে। ফলে ডিএসইর মূলধন কমে ৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। আর প্রধান মূল্য সূচক কমে ১৪১ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট।

এমকে

শেয়ার করুন:-
শেয়ার