ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত, ভুল ক্রেডিট বণ্টন এবং অর্ডিন্যান্স লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এতে একাডেমিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্ণারে এক সংবাদ সম্মেলনে মানোন্নয়ন পরীক্ষার জন্য আবেদনকারী ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১২ জন শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৫ জন শিক্ষার্থী এ–সংক্রান্ত বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরে দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রহমান, বায়েজিদ বোস্তামী, নাহিদ আক্তার নোভা, মাহথির মোহাম্মদ চমন ও রবিউল ইসলাম।
তারা জানান, করোভাইরাস পরিস্থিতি এবং ‘জুলাই বিপ্লব’–পরবর্তী দীর্ঘ সেশনজটের সময়ে তারা বারবার জট নিরসনের দাবি জানালে তৎকালীন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাশিদুজ্জামান জানান, প্রতিটি সেমিস্টারের মান উন্নয়ন পরীক্ষা নিতে সময় বেশি লাগায় সেশনজট কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ কারণ দেখিয়ে তিনি ৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার থেকে সব মান উন্নয়ন পরীক্ষা স্থগিত করে ঘোষণা দেন যে ৪র্থ বর্ষ শেষে একসঙ্গে সব সেমিস্টারের মান উন্নয়ন নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হয়— যে সব কোর্সে ৩.০০–এর নিচে নম্বর পাবে, সেসব কোর্সে পরবর্তীতে মান উন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ থাকবে; সেমিস্টারের গড় সিজিপিএ বিবেচ্য হবে না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী— ধারা ১০.৬: প্রতি একাডেমিক ইয়ারে যেকোনো কোর্সে ৩.০০–এর নিচে গ্রেড পেলে সেমিস্টার শেষে ১৫ দিনের মধ্যে রিটেক দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ধারা ১৩.২: ৪র্থ বর্ষের চূড়ান্ত ফলাফলের পর যাদের যেকোনো কোর্সে গ্রেড ‘বি’–এর নিচে থাকবে, তারা অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে রিটেক দিতে পারবে।
অর্ডিন্যান্সে গড় সিজিপিএ ৩.০০-এর বেশি হলে মান উন্নয়ন দেওয়া যাবে না—এমন কোনো বিধান নেই। এসব নিয়ম অমান্য করে চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে শুধুমাত্র ‘ফেইল করা’ শিক্ষার্থীদের জন্য মান উন্নয়ন পরীক্ষা সীমিত করেন, যা বিভাগীয় প্রতিশ্রুতিভঙ্গ।
শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষে বিভাগীয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী মোট ক্রেডিট হওয়ার কথা ছিল ১৩৬। কিন্তু তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. সালমা সুলতানার ভুল ক্রেডিট বিতরণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ১২৮ ক্রেডিট অনুযায়ী একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ৪র্থ বর্ষের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের সময় ভুল ধরা পড়ে। তখন বিভাগ হঠাৎ করে ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের পুরনো অর্ডিন্যান্স চাপিয়ে ফল প্রকাশ করে। অথচ শিক্ষার্থীরা সেই অর্ডিন্যান্সের অন্তর্ভুক্ত নন। এতে স্পষ্টতই অর্ডিন্যান্স লঙ্ঘন হয়েছে। ২০১৮–১৯ অর্ডিন্যান্স চাপিয়ে দিয়ে শুধু ‘ফেইল করা’ শিক্ষার্থীদের রিটেক ও মান উন্নয়ন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, আর বাকি শিক্ষার্থীদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আমরা কোনো বেআইনি সুবিধা চাইনি। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার—মান উন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ চেয়েছি। কিন্তু বিভাগের ধারাবাহিক ভুলের কারণে আমরা ভুক্তভুগী হয়েছি। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে দৌড়ঝাঁপ করেও সমাধান পাইনি। অর্ডিন্যান্স লঙ্ঘন করে ফল প্রকাশ করে এবং প্রতিশ্রুতি ভেঙে আমাদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের ভুলের দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানো অন্যায়। এই সপ্তাহের মধ্যেই মান উন্নয়ন পরীক্ষার অনুমতি দিতে হবে। অন্যথায় প্রমাণ হবে—ইংরেজি বিভাগ শিক্ষার্থী-বান্ধব নয়। যে বিভাগ শিক্ষার্থী-বান্ধব নয়, সে বিভাগ তার কার্যক্রম চালানোর নৈতিক যোগ্যতা রাখে না। এসময় দাবি না মানলে তারা পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান।
এবিষয়ে বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান বলেন, এবিষয়ে আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি। আমি বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত আছি। আপাতত আমার কোন মন্তব্য নেই।
বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ২০ জন শিক্ষার্থী মান উন্নয়ন পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিল, আমরা একাডেমিক কমিটি থেকে তাদের নাম পাঠিয়েছিলাম। যাদের মধ্যে ৮ জন শিক্ষার্থী যাদের রিটেক ছিল তাদেরকে অনুমোদন দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বাকি ১২ জন পরবর্তীতে আবারো আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে আবারো একাডেমিক কাউন্সিলের একটা মিটিং হয় এবং আমরা সেই ১২ জনের নাম কন্ট্রোলার অফিস পাঠাই। পরবর্তীতে উপাচার্য স্যার এটাকে আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের আশ্বাস দেন। এখন বিষয়টি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম