স্বায়ত্তশাসিত চারটির পর এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সারাদেশের কলেজগুলোতেও এই সংসদ সচল করার দাবি জানিয়ে আসছেন ছাত্র সংগঠন ও চার সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তবে অতীতে মেডিকেল কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও বর্তমানে এ নিয়ে কোনো সাড়াশব্দ নেই কারো পক্ষেই। অবশ্য কিছুটা প্রস্তুতি এগি নিয়েছে ছাত্রশিবির।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। তবে এরপরেও মেডিকেল কলেজগুলোতে নির্বাচনের ধারাবাহিকতা ছিল। বিশেষ করে ঢাকার ২টিসহ পুরনো ৯টি মেডিকেল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঐতিহ্য ফুরিয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি।
সুস্পষ্ট তথ্য না থাকলেও ছাত্র সংগঠন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বশেষ ২০০৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ এবং ২০০৬ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। ঢাকার তুলনামূলক নতুন মুগদা ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নির্বাচনের পরিবেশ কখনও তৈরি হয়নি। এ ছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজে সর্বশেষ ২০১১ সালের দিকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তথ্য পাওয়া যায়। তবে তুলনামূলক সাম্প্রতিককালে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এই মেডিকেলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়, যদিও প্রায় এক দশক ধরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসছিল তৎকালীন সরকারি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বশেষ ২০১১-২০১২ সালের দিকে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র শিবির ও স্বতন্ত্র একজন চমেকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। ২০১২-২০১৩ সেশনে ছাত্র শিবির নির্বাচনে প্যানেল জমা দিলেও ছাত্রলীগের হুমকির মুখে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে ২০১৯-২০ সেশন পর্যন্ত একক প্যানেল দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চমেকসুতে গঠন করে সংগঠনটি।
ছাত্র সংগঠন ও মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রলীগের আধিপত্যের সময়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে নিপীড়নের নির্মমতায় শিক্ষার্থীরা এখনও এক ধরনের ট্রমায় রয়েছেন। ফলে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধে বেশ সরব তারা। কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধে যতটা সোচ্চার, নিজেদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম ছাত্র সংসদের দাবিতে তেমন একটা উচ্চকণ্ঠ দেখা যায় না তাদের। বেশ কিছু মেডিকেলে ছাত্র রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে কিছুটা ধীরগতিতে চলছে।
উদাসীন কলেজ প্রশাসন
ছাত্র সংগঠনগুলোর নীরবতায় উদাসীন দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর প্রশাসন। ঢাকা, স্যার সলিমুল্লাহ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি দেড় বছরেও। এমনকি মেডিকেলগুলোতে ব্যাচভিত্তিক প্রতিনিধি নির্বাচনের ঐতিহ্য থাকলেও কোনো কোনো মেডিকেল কলেজে এ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সাল আলম বলেন, এই মুহূর্তে ছাত্র সংসদ নিয়ে কোন আলোচনা নেই। কোনো পক্ষেই কেউ আমাদেরকে এ নিয়ে প্রস্তাব দেয়নি। ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, এরকম চিন্তাভাবনা এখনো আসেনি। সংসদ নির্বাচনও খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এই অবস্থায় হয়তো আর কোন কার্যক্রম হচ্ছে না।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাজহারুল শাহীন বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে ছাত্র সংসদের কোন পরিকল্পনা নাই। আর এই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল। বিগত একাডেমিক কাউন্সিলগুলোতে এরকম কোনো এজেন্ডা কেউ প্রস্তাব করেনি।
উদাসীন অন্যরা, প্রস্তুতিতে এগিয়ে ছাত্রশিবির
অপরাপর ছাত্র সংগঠনের তুলনায় ছাত্রশিবির মেডিকেল সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র প্রস্তাবনাও প্রস্তুত করেছে সংগঠনটি। ছাত্রশিবিরের ঢাকার স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত শাখা ‘মেডিকেল জোন’ এর সভাপতি ডা. যায়েদ আহমাদ বলেন, অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের সংসদ থেকেও জাতীয় নেতৃত্ব উঠে এসেছে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ঢাকা মেডিকেলের দু’বারের নির্বাচিত জিএস ছিলেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের থেকে ছাত্র সংসদ বাবদ ফি নেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ছাত্র সংসদগুলো বন্ধ রয়েছে। এমনকি এ নিয়ে আমরা সুস্পষ্টভাবে কোনো গঠনতন্ত্রও পাইনি। সম্প্রতি নিজ উদ্যোগে আমরা একটা গঠনতন্ত্র প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মেডিকেলগুলোতে গিয়ে গিয়ে কলেজ প্রশাসনকে এই প্রস্তাবনা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এই প্রস্তাবনায় ক্যাম্পাস কিভাবে চলবে তার রূপরেখা থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব উদ্দীন রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়ালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তাকেও পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদ আহসান বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজেই ছাত্র সংসদ চাই আমরা। তবে এখন পর্যন্ত বড় চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়েছে। আর কয়েকটিতে নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলমান। এসবে হলে পরবর্তীতে আমরা মেডিকেলের ছাত্র সংসদে জোর দিতে পারব।