ক্যাটাগরি: জাতীয়

গৃহশ্রমিকের অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের প্রতিক্রিয়া

গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্কভুক্ত জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিগণ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে তাদের বিদ্যমান শ্রম আইনের দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ অধ্যায়ের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি ও সংজ্ঞায়িত করার জন্য গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানানো হয়।

তবে নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সংশোধন অধ্যাদেশের মাধ্যমে গৃহপরিচারককে শ্রম আইনে আংশিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, মজুরি, কর্মঘণ্টা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, সামাজিক সুরক্ষার মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। যদিও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতি অনুসরনীয় কিন্তু গৃহশ্রমিককে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫’-এ বর্ণিত নির্দেশনা এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে গৃহশ্রমিকদের বিষয়ে সুপারিশসমূহ অনুসরণ করা হয়নি। নীতিতে ও কমিশনের প্রতিবেদনে গৃহশ্রমিকের সুরক্ষা, কল্যাণ, মজুরি, নিয়োগচুক্তি, কর্মঘণ্টা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, প্রশিক্ষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উল্লেখ থাকলেও শ্রম আইনের সংশোধনীতে গৃহশ্রমিকের জন্য এসব অধিকার উপেক্ষিত হয়েছে।

শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫’ ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব বরাবর যে সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়েছিল তার অধিকাংশই শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে গৃহীত হয়নি।

নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আরও উল্লেখ করা হয়, গৃহশ্রমিকের শ্রম আইনে আংশিক অন্তর্ভুক্তি তাদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়, উপরন্তু প্রায়োগিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক মনে করে, যে সকল অধ্যায়ের জন্য গৃহশ্রমিককে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার প্রয়োগ যথাযথভাবে নিশ্চিত করার জন্য স্পষ্ট ব্যাখ্যা শ্রম বিধিমালায় যুক্ত করা প্রয়োজন। পাশাপশি শোভন কর্মপরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকল্পে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে শ্রম আইনের যে সকল অধ্যায়ের ক্ষেত্রে গৃহশ্রমিক প্রযোজ্য হয়নি, সে অধ্যায়গুলোতে গৃহশ্রমিককে অন্তুর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। দেশের অন্যান্য শ্রমিকের ন্যায় গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে শ্রম আইনের সকল অধ্যায়ে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে অবিলম্বে পুনরায় অধ্যাদেশ জারি এবং অধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে শ্রম বিধিতেও সংশোধন আনা জরুরি। নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করা হয়, ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫’, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এবং আইএলও কনভেনশন ১৮৯ এর মানদন্ডে আলোকে গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই দেশের চরম অবহেলিত গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।

উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এ ধারা ১ এর উপ-ধারা (৪) এর দফা (ণ) সংশোধন করে ‘গৃহপরিচারক’-কে এই আইনের দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ অধ্যায়ের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপশি ধারা ২-এর উপ-ধারা (৯খ) সন্নিবেশনের মাধ্যমে ‘গৃহপরিচারক’ এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার