মেঘনা গ্রুপের কোম্পানি মেঘনা সুপার রিফাইনারীর উৎপাদিত ব্র্যান্ড ‘ফ্রেশ সুগারে’ চিনির চেয়ে ‘সালফার ডাই অক্সাইড’-এর মাত্রা অনেক পরিমাণ বেশি বলে প্রমাণ পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিরাপদ খাদ্য আদালত। ‘সালফার ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ’ নিম্নমানের চিনি তৈরি ও বাজারজাত করায় মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বীথি গ্রেফতারের আদেশ দেন। মামলার বাদী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক (স্যানিটারী ইন্সপেক্টর) মোহাং কামরুল হাসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চিনি প্রক্রিয়াকরণে সালফার ডাই অক্সাইড একটি ব্লিচিং এবং সংরক্ষণকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা চিনির রঙ উন্নত করে এবং এর স্থায়িত্ব বাড়ায়। এই রাসায়নিকটি ব্যবহার করে তৈরি চিনিকে ‘সালফিটেড চিনি’ বলা হয় এবং এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি, যদিও এতে কিছু পরিমাণ সালফার থাকতে পারে। সালফার-মুক্ত চিনি তৈরি করা হয় সালফার ডাই অক্সাইড ব্যবহার না করে, যা স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।
মামলার বাদী খাদ্য পরিদর্শক কামরুল যাচাই বাছাইয়ে পাওয়া তথ্যের বরাতে বলেন, খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি মেঘনা গ্রুপের মেঘনা রিফাইনারি জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে নিম্নমানের চিনি পণ্য বিক্রি করছে। এ কোম্পানির চিনিতে ‘চিনির মাত্রা কম ও সালফারের উপস্থিতি’ পাওয়া গেছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মেঘনা সুগার মিলের উৎপাদিত চিনির একটি নমুনায় ন্যূনতম অনুমোদিত ৯৯.৭০ শতাংশের বিপরীতে ৭৭.৩৫ শতাংশ সুক্রোজ পাওয়া গেছে। একই চিনির নমুনায় সালফার ডাই-অক্সাইড পরীক্ষায় ০.০৮ পিপিএম পাওয়া যায়। বিএসটিআই মানদণ্ড অনুযায়ী, চিনিতে সালফার ডাই-অক্সাইডের কোনো উপস্থিতি থাকার কথা নয় বলে মামলার আবেদনে বলা হয়েছে।
খাদ্য পরিদর্শক কামরুল বলেন, সালফার ডাই-অক্সাইড হলো একটি প্রিজারভেটিভ এবং এটি কৃত্রিমভাবে চিনি সাদা করতে ব্যবহৃত হয়। আর চিনিতে কমমাত্রার সুক্রোজ থাকার অর্থ এতে চিনির বদলে কৃত্রিম মিষ্টি করার উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, ব্যাখায় বলেন ওই কর্মকর্তা। নিরাপদ খাদ্য আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ১৫ ডিসেম্বর ঠিক করেছে।
উল্লেখ্য, চিনির বাজারে মেঘনা গ্রুপ বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে, যা সিটি গ্রুপের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। মেঘনা গ্রুপ এবং সিটি গ্রুপ বাংলাদেশের চিনির বাজারের শীর্ষস্থানীয় দুটি প্রতিষ্ঠান। গত বছর মেঘনা গ্রুপের বাজার হিস্যা ছিল ১৭%, যা সিটি গ্রুপের ১৫% এর চেয়ে বেশি ছিল।
এমকে