পুঁজিবাজারের অস্থিরতা কমাতে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন (আইসিবি) সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১ হাজার কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছে। আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আইসিবি মোট ১৩ হাজার কোটি টাকার সহায়তা চাইলেও সরকার প্রাথমিকভাবে ১ হাজার কোটি টাকা সফট লোন হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। ১০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যার মধ্যে প্রথম বছর থাকবে গ্রেস পিরিয়ড। এরপর প্রতি ছয় মাসে মূলধন ও ৫% সুদসহ কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।
নিরঞ্জন দেবনাথ বলেন, বাজারকে টিকিয়ে রাখতে এবং ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা ধরে রাখতে এই তহবিল অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হবে।
বর্তমানে আইসিবির পুরনো পোর্টফোলিওর ব্যাপক ক্ষতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ কমিটি কেবলমাত্র ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগের অনুমতি পাচ্ছে। গত অর্থবছরে (২০২৪–২৫) সঠিক হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করায় আইসিবি সমন্বিতভাবে ৪ হাজার ৮৫৬ কোটিরও বেশি ক্ষতি দেখায়।
আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, ভুল–সময়ে ভুল শেয়ার কেনার কারণে আইসিবির পোর্টফোলিওর বড় অংশের মূল্য এখন খুবই কমে গেছে। তিনি জানান, অনেক শেয়ার ক্রয়মূল্য থেকে ৯০% পর্যন্ত কমে গেছে। যদিও ব্লু-চিপ শেয়ারগুলোর ঐতিহাসিক বিনিয়োগ কিছুটা ক্ষতি সামলে রাখতে সাহায্য করেছে।
তিনি আরও বলেন, অতীতে কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বড় বিনিয়োগ হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষতি কমাতে দ্রুত কোনো ভুল বিনিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসাকে উৎসাহিত করা হয়নি। এমনকি সৎ কর্মকর্তারাও সময়মতো ক্ষতি স্বীকার করতে ভয় পেতেন, কারণ এতে সরকারি অডিটের ঝামেলা বাড়ার আশঙ্কা থাকত।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন দেবনাথ বলেন, “টিকে থাকতে এবং পুরোনো শক্তি ফিরে পেতে আমাদের তারল্য প্রয়োজন। আমরা নিজেদের সংস্কার করছি আধুনিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য।”
এদিকে সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫,০২৪ পয়েন্টে উঠেছে, যা ১৬ নভেম্বরের সাম্প্রতিক নিম্নস্থান ৪,৬২০ পয়েন্ট থেকে উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এই সহায়তা এসেছে ঠিক সময়েই, যখন বাজারে শেয়ারগুলো তুলনামূলক সস্তা। রয়্যাল ক্যাপিটালের গবেষণা প্রধান আকরামুল আলম টাইমস অব বাংলাদেশ-কে জানান, “এ-ক্যাটাগরির ৭৯% কোম্পানির শেয়ার এখন তাদের ৫২ সপ্তাহের গড় মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। এতে টেকনিক্যাল দিক থেকে বড় বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে সুদের হার কমা এবং করপোরেট আয়ের বৃদ্ধি—যা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
এমকে