ক্যাটাগরি: আন্তর্জাতিক

ক্রিপ্টো বাজারে অস্থিরতা, মূলধন হারিয়েছে সোয়া ট্রিলিয়ন ডলার

বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগ কমায় ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে আবারো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কমে যাওয়া ও প্রযুক্তি খাতের অতিমূল্যায়ন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ায় বিটকয়েনসহ প্রধান ডিজিটাল মুদ্রার দাম টানা ছয় সপ্তাহ ধরে কমছে। এ সময় ক্রিপ্টো বাজার প্রায় সোয়া ট্রিলিয়ন ডলার মূলধন হারিয়েছে। খবর রয়টার্স ও দ্য ন্যাশনাল।

এশিয়ার বাজারে লেনদেন চলাকালে বিটকয়েনের দাম গতকাল ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে নেমে আসে প্রায় ৮৫ হাজার ৩৫০ ডলারে। এটি গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ইথারের দামও ২ শতাংশের বেশি কমে পৌঁছেছে চার মাসের সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭৭৭ ডলারে। সপ্তাহজুড়ে বিটকয়েন ও ইথার উভয়েরই দাম কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সিকে এখন বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি পরিমাপক সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ডিজিটাল মুদ্রার দাম দ্রুত নিচে নামছে। এ পরিস্থিতিতে ‘খুবই নাজুক বাজার মনোভাবের প্রতিফলন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আইজির বাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর। তিনি বলেন, ‘যদি বিটকয়েন সামগ্রিক ঝুঁকি মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। এটাই এখন বড় উদ্বেগের বিষয়।’

বিটকয়েনের দাম কমার প্রভাব পড়েছে ক্রিপ্টোভিত্তিক ইটিএফগুলোয়ও। চায়না এএমসি, হারভেস্ট ও বোসেরা পরিচালিত হংকংয়ে তালিকাভুক্ত স্পট বিটকয়েন ইটিএফের দাম গতকাল কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। বাজার পর্যবেক্ষক কয়েনগেকোর তথ্য অনুযায়ী গত ছয় সপ্তাহে পুরো ক্রিপ্টো বাজার প্রায় ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার মূলধন হারিয়েছে।

অক্টোবরের শুরুর দিকে বিটকয়েন ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অতিক্রম করে রেকর্ড গড়ে। এর পর থেকেই এর দাম দ্রুত কমতে শুরু করে। গত মাসে হঠাৎ বড় ধরনের বিক্রি শুরু হলে বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। এ সময় ধারের অর্থ (লিভারেজ) বিনিয়োগ করা অনেক ট্রেডারের লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ একবারেই বাজার থেকে হারিয়ে যায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নতুনভাবে উল্লম্ফন দেখে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম। কারণ নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে ক্রিপ্টোবান্ধব নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রিপ্টোবান্ধব নীতি ঘোষণা পরে ডিজিটাল মুদ্রার বাজারে নতুন গতি সঞ্চার করে।

কিন্তু বিটকয়েন এখন চলতি বছরের শুরু থেকে অর্জিত সব লাভ হারিয়ে ফেলেছে। বার্ষিক ভিত্তিতে এর দাম ৮ শতাংশ কমেছে। একই সময় ইথারের দাম কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

টানা পতনে বিটকয়েন আবার ৯০ হাজার ডলারের নিচে নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদহার কমানো নিয়ে ফেডের অনিশ্চিত অবস্থান ও প্রযুক্তি খাতের অতিমূল্যায়ন নিয়ে উদ্বেগ, সব মিলেই ক্রিপ্টো বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।

ওয়ান্ডার বাজার বিশ্লেষক ক্রিজস্টফ কামিনস্কি বলেন, ‘বিটকয়েন-ভিত্তিক ইটিএফ থেকে বড় অংকের মূলধন বের হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক পতনের অন্যতম কারণ। এতে ইটিএফ ও অন্যান্য ক্রিপ্টো-সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিতে থাকা বিনিয়োগকারীরা তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।’

সুইসকোট ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইপেক ওজকারদেস্কায়া বলেন, ‘চলমান অনিশ্চয়তার মধ্যে এখনো স্পষ্ট নয়, বিটকয়েনের পতন স্বল্পমেয়াদি সংশোধন নাকি দীর্ঘমেয়াদি নিম্নমুখী প্রবণতার শুরু।’

তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী কয়েক সপ্তাহেই ক্রিপ্টো বাজারের পরবর্তী গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সময় হতে যাচ্ছে।

এমকে

শেয়ার করুন:-
শেয়ার