মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ও হাইকোর্ট এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, এপিবিএন ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। পুরো এলাকাজুড়ে নজরদারি, টহল ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ হিসেবে আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। রায় ঘোষণার আগে রাজধানীতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
আওয়ামী লীগের শাটডাউন কর্মসূচি ও সহিংসতার প্রেক্ষাপট
এর আগে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই দিনের (১৬–১৭ নভেম্বর) ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ। ঘোষণার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে থাকে। গত কয়েকদিনে শুধু ঢাকাতেই ঘটে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার চেষ্টা। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আইসিটি ও হাইকোর্ট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা—সাজোয়া যান মোতায়েন
রবিবার বিকালে আইসিটি ও হাইকোর্ট এলাকা ঘুরে দেখা যায়- পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, এপিবিএন, সিআইডি ও ডিবি সদস্যরা পুরো এলাকাজুড়ে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন। হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের সাজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ভবনের ছাদেও অতিরিক্ত নজরদারি পোস্ট বসানো হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট ও মুভমেন্ট কন্ট্রোল জোরদার করা হয়েছে।
‘কোনও নিরাপত্তা শঙ্কা নেই’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘১৭ নভেম্বরকে ঘিরে কোনও নিরাপত্তা শঙ্কা নেই। তবে নিষিদ্ধ দলের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে সর্বাত্মক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইসিটি ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন আছে।’
বিজিবির ১৪ প্লাটুন মোতায়েন
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, ঢাকা মহানগর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে দায়িত্ব পালন করছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ‘র্যাব-২ ও র্যাব-৩ আইসিটি এলাকায় কড়া নিরাপত্তা বজায় রেখেছে। নিয়মিত টহল ও চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে। অনলাইনে যেসব নিরাপত্তা হুমকি রয়েছে, সেগুলো আমাদের সাইবার মনিটরিং টিম পর্যবেক্ষণ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ কোনও সংগঠন রায়কে ঘিরে নাশকতার চেষ্টা করলে র্যাব তা নস্যাৎ করতে প্রস্তুত। জনমনে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।’
রায় ঘোষণার আগের দিন পুরো রাজধানীজুড়েই সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে সব ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।