Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

স্বৈরাচার, সংকট বা চাঁদাবাজি নয়, চাই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

বাংলাদেশ আজ এক গভীর রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকাল দেশের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দমননীতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং মানবাধিকারের অবমাননা রাষ্ট্রের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশটি ধীরে ধীরে একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে, সংবাদমাধ্যম শৃঙ্খলিত হয় এবং জনগণের কণ্ঠরোধ করা হয় নির্মমভাবে। এই শাসন কেবল বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাধীনতাকেও বিপন্ন করেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মানুষের মধ্যে ক্ষমতার লালসা একটি প্রাচীন প্রবণতা, কিন্তু যখন তা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে পরিণত হয়, তখন সমাজে নৈতিকতা, ন্যায়বোধ এবং স্থিতিশীলতা ধ্বংস হয়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকারের কর্মকাণ্ডে এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রেখে তারা জনগণের অধিকারকে দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে অবমূল্যায়ন করেছে। গুম, খুন, ভুয়া মামলা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দমন রাষ্ট্রনীতির অংশে পরিণত হয়েছিল। ক্ষমতার প্রতি শেখ পরিবারের অন্ধ আসক্তি দেশকে স্বৈরতন্ত্রের অন্ধগলিতে নিয়ে যায়। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এই শাসনব্যবস্থা জাতির মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। যখন জাতির পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়, তখন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনার পতন ঘটায়। সেই মুহূর্ত জাতির আত্মমর্যাদার পুনর্জন্মের প্রতীক হয়ে ওঠে এবং স্পষ্ট করে দেয় যে শেখ পরিবার বাংলাদেশের জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্পর্ক সন্দেহ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তিস্তা চুক্তি ঝুলে থাকা, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিরীহ নাগরিকদের মৃত্যু এবং বাংলাদেশের বাজারে ভারতের একচেটিয়া বাণিজ্যিক আধিপত্য জনগণের মধ্যে অসন্তোষ গভীর করেছে। ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এ অঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ দেশকে বিভক্ত করেছে এবং সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জনগণ এখন বুঝেছে এই সম্পর্ক পারস্পরিক নয়, বরং একতরফা। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থতা ও প্রতিবেশীর প্রতি অন্ধ আনুগত্যের নীতি আর টেকসই নয়। প্রয়োজন সাহসী, কূটনৈতিক ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব, যা দেশকে আত্মনির্ভর ও স্বাধীন নীতির পথে ফিরিয়ে আনবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

শেখ হাসিনার আমলে রাজনীতি পরিণত হয়েছিল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থরক্ষার যন্ত্রে। সংবিধান বিকৃত করে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এবং প্রশাসনকে দলীয়করণের মাধ্যমে তিনি একদলীয় স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সবকিছু ব্যবহার করা হয়েছিল ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে। এর ফলে গণতন্ত্র ভেঙে পড়ে, নির্বাচন জনগণের মতপ্রকাশ নয় বরং পূর্বনির্ধারিত নাটকে পরিণত হয়। দুর্নীতি ও কালোটাকার প্রবাহে অর্থনীতি দমবন্ধ হয়ে পড়ে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়, ভিন্নমত মানে নিপীড়ন, গুম ও কারাবাস। বিচার বিভাগ ন্যায়ের বদলে ক্ষমতার যন্ত্রে পরিণত হয়। এটি কেবল রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ও সাংবিধানিক সংকটও বটে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চাবিকাঠি তরুণ প্রজন্মের হাতে। তাদের মধ্যেই রয়েছে পরিবর্তনের শক্তি, উদ্ভাবনের ক্ষমতা ও ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকার। এই শক্তিকে সংগঠিত করতেই গড়ে উঠছে ফিউচার ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ—একটি আন্দোলন, একটি স্বপ্ন এবং একটি দায়িত্ববোধ। এই ফাউন্ডেশন তরুণদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ইতিহাসের সত্য শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে পারে, নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারে এবং সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে পারে। ফিউচার ফাউন্ডেশন কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি বাংলাদেশের নতুন সামাজিক চুক্তির ভিত্তি—একটি প্রজন্মের অঙ্গীকার, যে দেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যাবে।

দীর্ঘ দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ফলেই আজ গঠিত হয়েছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। এই সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নৈতিক পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ। এর লক্ষ্য স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা, মৌলিক অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্রের টেকসই ভিত্তি গঠন করা। এই সরকার কেবল একটি সংকটের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং একটি নতুন জাতীয় দিকনির্দেশনা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতি ও মানবিক উন্নয়নের প্রতীক। এখন তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের কেন্দ্রে। তার নেতৃত্ব রাজনৈতিকের চেয়ে বেশি নৈতিক, কারণ তিনি দেশকে মানবিক ও সমতাভিত্তিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে আস্থা অর্জন করছে, তারা বিশ্বাস করছে যে একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব যেখানে মানবিক মূল্যবোধই হবে প্রশাসনের মূলে।

বাংলাদেশ আবারও এক নতুন সূচনার দ্বারপ্রান্তে। দমন ও বিভাজনের অন্ধ অধ্যায় পেরিয়ে দেশ আজ নতুন আলো দেখছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে জাতি প্রমাণ করছে যে সংকট যত গভীরই হোক, ঐক্যবদ্ধ জাতি ও সৎ নেতৃত্বের কাছে তা কখনও অজেয় নয়। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই যাত্রায় নতুন প্রজন্মই হবে নেতৃত্বের মশালবাহক। বাংলাদেশ প্রমাণ করবে, সংকট কখনও পরাজয় নয়, এটি নতুন সূর্যোদয়ের আগমনী বার্তা।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, বর্তমানে যা ঘটছে, তা কি সত্যিই সেই প্রত্যাশিত পরিবর্তনের প্রতিফলন? ড. ইউনূস ও তার অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টারা দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে অনেকের কাছে এই ধারণা জন্মেছে যে, সেখানে এখনো ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থই প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে এই আশার পথেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। হতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো কথা দিয়ে কথা রাখেনি, কিংবা প্রশাসনও তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারেনি।

তবে যে আলোয় আমরা নতুন সূচনা খুঁজছি, সেই আলো তখনই স্থায়ী হবে যখন আত্মসমালোচনার সাহস আমাদের থাকবে, কে কোথায় ভুল করেছে, কেন সেই ভুল পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ তরুণ, কিন্তু বেকারত্বের হারও উদ্বেগজনকভাবে বেশি। ফলে এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর এক অংশ নানা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাবে তাদের শক্তি ব্যবহার করছে ভুল পথে, দলীয় স্বার্থে, এমনকি দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবেও। এই প্রবণতা যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। একদিকে প্রতিবেশী দেশের প্রভাব ও রাজনৈতিক প্ররোচনা, অন্যদিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিভ্রান্তিকর নেতৃত্বের আহ্বান, সব মিলিয়ে তরুণ সমাজ এক জটিল দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে।

বর্তমান প্রজন্মের হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু যদি তাদের মধ্যে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের বোধ গড়ে না ওঠে, তাহলে এই প্রজন্মই হয়ে উঠতে পারে নেতৃত্বের অন্ধকার মশালবাহক, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক ভয়াবহ অধ্যায় রচনা করবে। অথচ তারাই আজ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি শিক্ষিত, প্রযুক্তিসচেতন ও ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার। তাই কেবল ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গায় দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নৈতিকতা, সততা ও দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে। দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিজেদের শক্তি ও বিবেককে কাজে লাগানোই এখন সময়ের দাবি।

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও সুশাসনের সংগ্রাম অব্যাহত, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের জাগরণ ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। যদি তরুণরা দেশপ্রেম, সততা ও সাহসিকতার পথে এগিয়ে যায়, তবে একদিন এই দেশও হবে দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ।

দায়িত্ববান নাগরিক হওয়ার প্রথম শর্ত নৈতিকতা ও সততা। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তার বিবেক বিক্রি করে না, বরং জাতির মঙ্গলের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। ভোট মানে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া, সামান্য অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি মানে নিজের ভবিষ্যৎকে বিক্রি করা। সুবিধা পেতে তোষামোদ নয়, সত্যের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমাজের উন্নয়ন কেবল সৎ মানুষদের হাতেই সম্ভব।

আমাদের সমাজে অন্যায় ও দুর্নীতি নিত্যদিনের বাস্তবতা, কিন্তু এর বিরুদ্ধে নীরব থাকা মানে অন্যায়কে টিকিয়ে রাখা। প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব সত্যের পক্ষে কথা বলা। ভয় নয়, বিবেকের নির্দেশই হোক পথপ্রদর্শক। সৎ নাগরিক কখনও প্রলোভনে পড়ে না, নিজের নৈতিকতা ও দেশের মর্যাদা রক্ষাই তার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট নয়, প্রতিদিনের ন্যায় ও সমতার চর্চা। যেখানে অন্যায় দেখা যাবে, সেখানেই আওয়াজ তুলতে হবে। গণতন্ত্র টিকে থাকে নাগরিকের সাহসের উপর, নীরবতার উপর নয়।

আজকের যুগে সোশ্যাল মিডিয়া এক নতুন গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউব হয়ে উঠেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মাধ্যম। এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য, বিভাজন নয় ঐক্যের জন্য।

দুর্নীতি মানে শুধু অর্থের ক্ষতি নয়, এটি জাতির মর্যাদা ও জনগণের আস্থার ধ্বংস। তাই দরকার দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি, যেখানে নেতৃত্ব আসবে সততা, যোগ্যতা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে। তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটাতে।

আজকের তরুণেরা জানে, প্রকৃত শক্তি সাহস ও বিবেকের সমন্বয়ে। তাদের হাতে যদি থাকে যুক্তি, সততা ও দায়িত্ববোধ, তবে বাংলাদেশ বদলে যাবে। নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিবর্তনের জন্য এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়।

মানুষের জন্ম হয়েছে স্বাধীন বিবেক ও নৈতিক শক্তি নিয়ে বাঁচার জন্য। সামান্য প্রলোভনের কারণে যেন কেউ নিজের আত্মমর্যাদা বিক্রি না করে। দল বা নেতাকে সমর্থন করা মানে কিন্তু নিজেকে বিক্রি করা না। আমরা যেন ভুলে না যাই, পরিবর্তন শুরু হয় নিজের ভেতর থেকেই। সাহস, সততা ও দেশপ্রেম এই তিনেই গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া তৈরি হয়নি আমরা তৈরি করেছি

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষাগুলোর একটি হলো রাষ্ট্র এবং নেতৃত্ব কখনো শূন্যস্থান সহ্য করে না। যে সমাজ যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে ব্যর্থ হয় সেই সমাজকে একসময় পরিবারতন্ত্র, কৃত্রিম জনপ্রিয়তা এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি গ্রাস করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক যাত্রাও তার ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতার পর যে রাজনৈতিক আদর্শ, ত্যাগ এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে দেশটি দাঁড়িয়েছিল তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতার লোভ, দলীয় স্বার্থ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের কারণে ক্রমশ ক্ষয় হতে থাকে। ফলে নেতৃত্বের অভাব পূরণ করতে গিয়েই আমরা এমন দুই নারীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি যারা জন্মসূত্রে নেতৃত্বের ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। আর এখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র, প্রতিহিংসা এবং দলীয় কাঠামোর ভাঙনের দীর্ঘ পর্ব যা আজ পুরো জাতিকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে দুই মহীয়সী নারী নেত্রী রাজনীতিতে এসেছিলেন। একজন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আর অন্যজন ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তারা জন্মসূত্রে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যুক্ত হলেও নিজেরা ছিলেন মূলত রাজনৈতিক বা সামরিক ব্যক্তিত্বের পরিবারের প্রতিনিধি এবং তাদের দুজনকেই দলীয় স্বার্থে সামনে ঠেলে এনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাকে ধরে রেখেছিল। একই উপমহাদেশে ইন্দিরা গান্ধি বা বেনজির ভুট্টো বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন ঠিকই কিন্তু তারা রাজনীতির বাস্তবতায় সক্রিয়ভাবে শামিল হয়েই নেতৃত্বে উঠে এসেছিলেন। পার্থক্য ছিল এখানেই। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেই সরাসরি রাজনৈতিক প্রস্তুতি ছিল না কারণ তৎকালীন দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বঙ্গবন্ধু এবং জিয়ার জনপ্রিয়তার উত্তরাধিকার ধরে রাখতে পরিবারতন্ত্রকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। আর সেই লালসাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসা পরায়ণতার বীজ বপন করে এবং পরবর্তী সময়ে পুরো দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার জন্য যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সত্য হলো শেখ মুজিব এবং জিয়ার রাজনৈতিক জীবনে দীর্ঘ সময় ছিল না। হয়তো যুদ্ধোত্তর সংকট বা সামরিক বাস্তবতা তাদেরকে সঠিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার সুযোগ দেয়নি অথবা এক নায়কতন্ত্র তাদেরকে গ্রাস করেছিল যেখানে তাদের চারপাশে এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল যে তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন এবং নেতৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণ নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। অথচ তখনই দেশে শত শত যোগ্য আইনজীবী রাজনৈতিক বিজ্ঞানী অর্থনীতিবিদ এবং তরুণ নেতৃত্ব ছিল। তবুও দলীয় সংগঠন যে ভুল রাজনীতির চর্চা বেছে নিয়েছিল তা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় এবং সেই আগুনে দগ্ধ হয়েছে পুরো জাতি এবং দগ্ধ হয়েছেন এই দুই নেত্রীও।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবু শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার মধ্যে যেমন মিল রয়েছে তেমনি রয়েছে বিস্তর অমিল। যদি তখন দলীয় নেতারা বাবার বা স্বামীর প্রভাবকে ব্যবহার করে শুধু ক্ষমতা দখলের পরিবর্তে রাজনীতির ধারাকে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতেন তাহলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি পরিবারতন্ত্রের আবরণে আবদ্ধ হতে পারত না। যদি দলীয় নেতৃত্ব সাহস করে একজন দক্ষ সৎ এবং শিক্ষিত নেতৃত্বকে সামনে আনত তাহলে তাদের দল আরও শক্তিশালী হত সংগঠিত হত এবং ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ভিত্তি পেত। নেতৃত্ব ঘর থেকে নয় বরং জনগণের ভিতর থেকে উঠে আসা উচিত ছিল এবং নির্বাসন বা দূরত্ব থেকে নয় সরাসরি রাজনৈতিক মাঠ থেকে উঠে আসাই হতো শেখ মুজিব এবং জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক স্পিরিট এবং ডিসকোর্সের প্রকৃত ধারাবাহিকতা। কিন্তু সেই ভুলের মাশুল আমরা আজও দিচ্ছি।

আজ আমরা অনেকেই শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বলছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাকে স্বৈরাচার বানিয়েছে কে? একইভাবে যদি হাওয়া ভবন আরও কয়েক বছর রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেত তবে কি খালেদা জিয়া স্বৈরাচারী হতেন না? ইতিহাস বলে ক্ষমতার কাঠামো ব্যক্তিকে পাল্টে দেয়। তাই দুই দলই দায়ী দুই দলই এই অনুশোচনার বোঝা বহন করে।

তবু এখনও দেরি হয়নি। প্রয়োজন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আলাদা করে অনুশোচনা করা জনগণের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া এবং ভুলের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি করা। আজও এই দুই দল নতুন করে দাঁড়াতে পারে যদি তারা আত্মসমালোচনার পথ বেছে নেয় যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করে জনগণের সঙ্গে নতুন আস্থার বন্ধন গড়ে তোলে এবং নেতৃত্ব নির্বাচনের ভিত্তি হিসেবে সাহস যোগ্যতা নৈতিকতা এবং সততাকে সামনে আনে। তাহলেই শেখ হাসিনা স্বৈরাচারের খেতাব থেকে একদিন মুক্তি পেতে পারেন। তাহলেই বেগম জিয়ার ত্যাগের মর্যাদা রক্ষা পাবে এবং জিয়াউর রহমানের আদর্শের একজন প্রকৃত ধারক বাহক তৈরি হবে।

আমি মনে করি তাদের ব্যক্তিগত দুঃখ কেবল তাদের একার নয়। এটা রাষ্ট্রীয় নির্যাতন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতির দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। যদি এই ইতিহাস নতুন নেতৃত্বকে অনুপ্রাণিত করে তাহলে তাদের জীবনসংগ্রামই ভবিষ্যতের নতুন আলোর পথ তৈরি করবে বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া। কারণ তিনি এখনও আমাদের মাঝে আছেন এবং তাঁর উপস্থিতি স্বয়ং এক দৃঢ়তার উৎস। আজকের তরুণেরা দেখছে এই দেশে একজন নারী আছেন যিনি প্রতিহিংসাপূর্ণ রাজনীতিকে নীরব শক্তি দিয়ে পরাজিত করে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর জীবন নক্ষত্রের মতো দীপ্ত এবং যতদিন তিনি থাকবেন ততদিন সেই দীপ্তি প্রজন্মকে পথ দেখাবে। একদিন তাঁর প্রস্থান আসবে সেটি হবে একটি যুগের অবসান কিন্তু আজ তিনি জীবনের সঙ্গে লড়াই করা এক অদম্য শক্তির প্রতীক।

একই সাথে আমি এটাও বিশ্বাস করি শেখ হাসিনা যে ভুল করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলে আমরা কী ফিরে পাবো? কিছুই না। রাষ্ট্রীয় ক্ষতি পূরণ হবে না। বরং যদি শেখ পরিবারের মধ্যে ন্যূনতম মানবিকতা অবশিষ্ট থাকে তাহলে তাদের উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। কারণ ক্ষমা করার অধিকার একমাত্র আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের।

বাংলাদেশ একটি নদীবেষ্টিত দেশ যেখানে প্রতিদিন নদী বদলায়, ভাঙে, গড়ে। এই ভাঙন এবং নতুন সৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে যে দেশে টিকে থাকা যায় সেখানে নেতৃত্বও হতে হয় পরিবর্তনের সক্ষম ধারক। কিন্তু পরিবারতন্ত্র সেই পরিবর্তনকে আটকে দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার ভূগোল দেখলে দেখা যায় যে এই অঞ্চলে নেতৃত্ব যত বেশি গণমুখী হয়েছে দেশ তত বেশি স্থিতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশও সেই বাস্তবতা থেকে আলাদা নয়। আজকের বিশ্বব্যবস্থা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ইন্দোপ্যাসিফিক কৌশল, নতুন আঞ্চলিক জোট, বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক করিডোর এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য রুট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে নতুন মাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করছে। এমন এক সময়ে পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং প্রতিহিংসার চর্চা কেবল দেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয় না বরং আমাদের ভূরাজনৈতিক সুবিধাগুলোকেও বিপন্ন করে। বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি তার মানুষ। নেতৃত্ব যদি এই জনশক্তিকে সৎভাবে কাজে লাগাতে পারে এবং রাজনীতিকে নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে পারে তবে এই দেশ দক্ষিণ এশিয়ার নতুন শক্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। তাই নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা, জনগণের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া শুধু রাজনৈতিক প্রয়োজন নয় বরং বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতা এবং বৈশ্বিক ভবিষ্যতের জন্য একটি অপরিহার্য জাতীয় দায়িত্ব।

রহমান মৃধা, গবেষক এবং লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

খালেদা জিয়ার প্রতি আমাদের আকুলতা এবং নীরব শক্তির প্রতিচ্ছবি

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

উপমহাদেশের সমৃদ্ধ কিন্তু উত্তাল ইতিহাসে খালেদা জিয়ার নাম এক আলাদা অধ্যায়। ব্যক্তিগত বেদনা এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক অদম্য পরিচয় যা তাকে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনন্য মর্যাদা অর্জন করেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একটি সাধারণ সংসারে বড় হয়ে জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া, স্বামীর হত্যার পর আকস্মিকভাবে রাজনীতিতে উঠে আসা এবং দলকে নেতৃত্ব দেওয়া তাকে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরে। তাঁর আদর্শ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রভাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতি মনোযোগ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর দৃঢ়তা তাকে সমর্থক ও সমালোচকের আলোচনায় রাখে। ২০০৮ সালের মামলায় তোলা বিভ্রান্তিকর অভিযোগ এবং দীর্ঘ আইনি লড়াই তাঁর রাজনৈতিক যাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শীর্ষ আদালত তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলে তাঁর প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গত এক বছরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে মানুষের উদ্বেগ বেড়েছে। এই বছরের মে মাসে লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর হঠাৎ অবস্থার আরও অবনতি ঘটে এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন যে অনুকূল নয় এমন শ্বাসনালী সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার কারণে তিনি কোরোনারি কেয়ার ইউনিটে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। দল মত নির্বিশেষে মানুষ তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন।

চিকিৎসায় দেশি বিদেশি বিশেষজ্ঞরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছেন। কয়েকটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ উন্নত চিকিৎসা সহায়তার আগ্রহও প্রকাশ করেছে। এই মানবিক সহযোগিতা এবং সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা জনগণের উদ্বেগ কিছুটা প্রশমিত করেছে। জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে এবং দোয়া অব্যাহত রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা চিকিৎসায় পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ব্যথা এখন একটি জাতির বেদনায় রূপ নিয়েছে। একজন নারী হিসেবে রাজনৈতিক শিখরে ওঠা, পরিবার বিচ্ছিন্নতার অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান শারীরিক দুর্বলতা মিলিয়ে তাঁর জীবন একটি গভীর মানবগল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর সংগ্রাম, উত্থান পতন এবং বর্তমান সংগ্রাম মানুষের মনে আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা জাগিয়েছে।

দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিহিংসাপূর্ণ রাজনীতি বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে। সেখানে খালেদা জিয়ার নীরব ধৈর্য, সংযমী আচরণ এবং আধ্যাত্মিক শক্তি অনেকের চোখে অন্যরকম এক প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আজ দেশজুড়ে যেভাবে সমবেদনা ছড়িয়ে পড়েছে তা কেবল একজন রাজনৈতিক নেত্রীর প্রতি নয়, বরং একজন মা, একজন বোন এবং একজন রাষ্ট্রনেত্রীর প্রতি মানুষের গভীর মানবিক সাড়া।

এই সময় আমরা যে প্রার্থনায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছি তা কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটি এক মানবিক আবেদন জীবনের বহু ঝড় অতিক্রম করা এক নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। জিয়া পরিবারের প্রতি দোয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই এবং চিকিৎসা সেবায় যুক্ত সকলকে ধন্যবাদ জানাই যারা নিরলসভাবে কাজ করছেন।

উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কখনো কখনো এমন একটি চরিত্র আসে যার উপস্থিতি সময়কে বদলে দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেই চরিত্র ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি ছিলেন এমন এক নারী যাঁর দৃঢ়তা অসংখ্য মানুষকে আত্মমর্যাদার শিক্ষা দিয়েছে এবং যাঁর সাহস রাষ্ট্রক্ষমতার অর্থকে নতুনভাবে বুঝিয়েছে। তাঁর পথচলা ছিল সাহসে ভরা দীর্ঘ যাত্রা যেখানে প্রতিটি অগ্রগতি প্রতিহিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে নীরব অথচ শক্তিশালী ঘোষণা ছিল।

তাঁর জীবন ছিল নিরন্তর সংগ্রামের গল্প। ব্যক্তিগত ক্ষতি, অপবাদ, রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসা এবং ষড়যন্ত্রের বহু অধ্যায় তিনি বরণ করেছেন। স্বামী ও সন্তানকে হারানোর বেদনা এবং অন্য সন্তানদের থেকে দূরে থাকার কষ্ট তিনি মর্যাদার সঙ্গে বহন করেছেন। তবুও তিনি ঘৃণার উত্তরে ঘৃণা দেখাননি। তাঁর নীরবতা ছিল তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ।

দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার নৈতিক দৃঢ়তা এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রত্যাখ্যান করার যে উদাহরণ তিনি সৃষ্টি করেছেন তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল। তাঁর দল আজও তাঁর সমতুল নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি কারণ দলটি দাঁড়িয়ে আছে তাঁর নীতি, বিচক্ষণতা এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বের ভিত্তিতে।

একসময় তাঁকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে দেখার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তিনি যদি সেই পদে যেতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশ রাজনৈতিক শিষ্টাচার এবং দৃঢ় নেতৃত্বের এক নতুন অধ্যায় দেখতে পেত। কিন্তু প্রতিহিংসাপূর্ণ রাজনৈতিক বাস্তবতা সেই সম্ভাবনাকে থামিয়ে দেয়।

আজ তিনি জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নিবিড় পরিচর্যায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সারা দেশ দোয়া করছে। প্রধান উপদেষ্টাও তাঁর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন এবং চিকিৎসায় পূর্ণ সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন।

দেশ বিদেশের চিকিৎসকরা নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করছেন এবং কয়েকটি বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র উন্নত চিকিৎসার আগ্রহ জানিয়েছে। জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর ভালোবাসা ও দোয়ার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে এবং সকলকে দোয়া চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
এই সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার আকাঙ্ক্ষা একজন সন্তানের কাছে খুবই স্বাভাবিক তবুও রাজনৈতিক পরিস্থিতির সংবেদনশীলতার কারণে হয়তো সব কিছু সম্ভব হচ্ছে না, তবে বিশ্বাস করি পরিস্থিতি শান্ত হলে বহু দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে এবং স্বদেশে ফিরে মায়ের পাশে দাঁড়ানোর দিন একদিন অবশ্যই আসবে।

তিনি এখনও আমাদের মাঝে আছেন এবং তাঁর উপস্থিতি নিজেই এক দৃঢ়তার উৎস। বর্তমানের তরুণেরা দেখছে যে এই দেশে এক নারী আছেন যিনি প্রতিহিংসাপূর্ণ রাজনীতিকে নীরব সাহস দিয়ে পরাজিত করেছেন। তাঁর জীবন এখনো নক্ষত্রের মতো দীপ্ত এবং যতদিন তিনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন ততদিন সেই দীপ্তি প্রজন্মকে পথ দেখাবে। এক দিন তাঁর প্রস্থান যখনই আসবে তা হবে একটি যুগের সমাপ্তি, কিন্তু আজ তিনি জীবনের সঙ্গে লড়াই করা এক অবিনাশী শক্তির প্রতীক।

রহমান মৃধা, গবেষক এবং লেখক, প্রাক্তন পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার: কার স্বার্থে ‘নিরাপত্তা’র ভয়

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান প্রবেশদ্বার। দেশের মোট আমদানি এবং রপ্তানার প্রায় নব্বই শতাংশ এখান দিয়ে সম্পন্ন হয়। তাই বন্দর কেবল একটি স্থাপনা নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির হৃদস্পন্দন। প্রতিদিন হাজার হাজার কন্টেইনার ওঠানামা করে, জাহাজের হর্ন বাজে, শ্রমিকরা ব্যস্ত থাকে, আর ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করে তাদের পণ্যের মুক্তির জন্য। এই জায়গাই বাংলাদেশের অর্থনীতির নীরব নাড়ি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু বছরের পর বছর দুর্নীতি, অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের লুটপাটের কারণে এই নাড়ির গতি ক্রমশ কমে এসেছে। যন্ত্রপাতির অভাব, সমন্বয়ের ঘাটতি, কাগজপত্রের জট এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বন্দরের দক্ষতা বিশ্বের মানদণ্ডের তুলনায় অনেক নিচে নেমে গেছে। ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বলেন, “পণ্য আনতে যত খরচ হয়, তার থেকেও বেশি খরচ পড়ে বন্দরের অদক্ষতা সামলাতে।” প্রশ্ন আসে, একটি দেশের অর্থনৈতিক স্বপ্ন কি বন্দরেই আটকে থাকবে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই সমস্যার মোকাবিলায় বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের পুরনো দুর্নীতিগ্রস্ত অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ভেঙে আধুনিক, দক্ষ ও স্বচ্ছ কাঠামো গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ অপারেটরদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে উন্নত প্রযুক্তি, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা, গতি এবং বৈশ্বিক মান বজায় রাখা সম্ভব হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু এখানে বাধা সৃষ্টি করেছে দীর্ঘদিনের সুবিধাভোগী দুর্নীতিগ্রস্ত চক্র। তারা “জাতীয় নিরাপত্তা”র নামে ভয় দেখাচ্ছে, প্রকৃত বিষয়টি নিরাপত্তা নয় বরং তাদের নিজের স্বার্থের নিরাপত্তা। নতুন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনায় তাদের অবৈধ আয় এবং প্রভাবের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে।

দূরদর্শিতা দেখানো দরকার। ব্যক্তিগত জীবনে বিদেশি প্রযুক্তির প্রতি তাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে একদিনও দেরি করে না, বিদেশি ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করে, বিদেশি গাড়ি চালায়, আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসে ভ্রমণ করে, বিদেশি ওষুধ এবং পানীয় ব্যবহার করে। কিন্তু রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ এলে হঠাৎ দেশপ্রেম জেগে ওঠে। এই দ্বিচারিতা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়।

বাস্তবতা হলো, উন্নত বিশ্বে আউটসোর্সিংই দক্ষতার পথ। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের বড় অংশই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। উদাহরণ হিসেবে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অংশ, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিতরণ, সমুদ্রবন্দর, রেলওয়ের নিরাপত্তা এবং বড় শিল্প কারখানার প্রডাকশন লাইন উল্লেখযোগ্য। এগুলো প্রায় সবই পেশাদার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, যা লং রেঞ্জ প্ল্যানিং এবং দীর্ঘমেয়াদী দক্ষতা নিশ্চিত করে।

সৌদি আরবের ব্যস্ততম বিমানবন্দর বিদেশি কোম্পানি দিয়ে চলে, সিঙ্গাপুরের PSA বন্দর বিশ্বের সেরা বন্দরের একটি, দুবাইয়ের জেবেল আলি বন্দরও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। সেখানে দুর্নীতি নেই, অপদক্ষতা নেই, স্বচ্ছতা আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে এপিএম (বিশ্বসেরা ডেনিশ কোম্পানি) কাজ করতে চাইলে হঠাৎ দেশপ্রেম জেগে ওঠে। এটি দেশপ্রেম নয়, এটি চোরদের আয় বন্ধ হওয়ার কান্না।

বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো এতটাই দুর্বল যে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর আজ দুর্নীতি এবং অদক্ষতায় ভরা। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্বাস করা যায় না, প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা নেই, কোনো প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার সংস্কৃতি নেই, জবাবদিহি দুর্বল এবং স্বচ্ছতা অনুপস্থিত। এই অবস্থায় দক্ষতা আনার সবচেয়ে যৌক্তিক পথ হলো আউটসোর্সিং।

চট্টগ্রাম বন্দরের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ মানেই স্বাধীনতা হারানো নয়। বরং এটি দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি কমানো এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সবচেয়ে শক্তিশালী পথ। ডিজিটাল সিস্টেম এলে প্রক্রিয়া দ্রুত হবে, দুর্নীতি কমবে, এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।

যারা এতদিন খেয়ে এসেছে, তারা চিৎকার করবে “দেশ বিক্রি হয়ে গেলো।” এটা দেশপ্রেম নয়, এটি চোরদের আয় বন্ধ হওয়ার কান্না।

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দুর্নীতি মুক্ত করা যেত, হাসপাতালগুলোতে জবাবদিহি জন্মাত, ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তি কমত, রাজস্ব সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতো, তাহলে আজ দেশের জন্য আউটসোর্সিংয়ের প্রয়োজন হতো না। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং অদক্ষতা রাষ্ট্রকে এমন এক অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে যেখানে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দ্রুত সমাধানের বাইরে।

চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনা মানে উন্নয়নকে বাধাহীন করা, দক্ষতা ফিরিয়ে আনা, এবং রাষ্ট্রকে রক্ষা করা। উন্নয়ন মানে শুধু ভবন নয়, গতি, স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং মানুষের স্বার্থ রক্ষা।

সারমর্ম
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতিকে পরাজিত করতেই হবে। রাজনৈতিক শক্তি এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে আজ দেশে আউটসোর্সিংয়ের পথ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এটি আমাদের দুর্বলতার প্রমাণ নয়, বরং বাস্তবতার স্বীকারোক্তি। রাষ্ট্রকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে পুরো দেশকেই নতুন করে আউটসোর্সিং করে দক্ষতার পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা আর সময় নষ্ট করার অবস্থায় নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর সংস্কার একটি সাধারণ অবকাঠামো প্রকল্প নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ। ডিজিটাল সিস্টেম এলে দুর্নীতি কমে, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায় এবং কার্যকারিতা দ্রুত হয়। যারা এতদিন খেয়ে এসেছে তারা চিৎকার করে বলবে “দেশ বিক্রি হয়ে গেলো।” এটি দেশপ্রেম নয়, এটি চোরদের আয় বন্ধ হওয়ার কান্না। চট্টগ্রাম বন্দরের স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন রুখে দাঁড়ানো মানে দেশের ভবিষ্যৎ রুখে দাঁড়ানো।

রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে চাইলে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আউটসোর্সিং হলো দেশের একমাত্র যৌক্তিক পথ, যা দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে দক্ষতা ফিরিয়ে আনবে, এবং বাংলাদেশকে আধুনিক, স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক রাষ্ট্র হিসেবে স্থাপন করবে।

রহমান মৃধা, গবেষক এবং লেখক, প্রাক্তন পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

গণতন্ত্রের অপমৃত্যু এবং জনগণের নবজাগরণের অনিবার্য ডাক

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

বিশ্বে যে উদ্দেশ্যে গণতন্ত্রের জাগরণ হয়েছিলো কোনো এক সময় সেই উদ্দেশ্য আজও সফল হয়নি। দুই হাজার চব্বিশ সালে যে গভীর উদ্বেগ আমাকে আঘাত করেছিলো সেই একই উদ্বেগ আজ আরও তীব্র হয়েছে যদি বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতাকে দেখি। পৃথিবী আজ প্রযুক্তির অসীম অগ্রগতিতে বদলে গেছে, ডিজিটালায়ন মানুষের জীবনযাত্রাকে নতুন রূপ দিয়েছে, তথ্যপ্রবাহের গতি আশ্চর্য দ্রুততায় ছুটছে কিন্তু গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি যে প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে কোনো অগ্রগতি নেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এখনও বহু দেশে স্বৈরাচারী শাসন টিকে আছে, পরিবারতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্র আরও জমাট বেঁধে আছে। শাসন এবং শোষণ যেন একই স্রোতে বইছে, ভাষণের স্বাধীনতা প্রতিদিনই আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে, মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

অথচ রয়েছে জাতি সংঘের মতো অচল এবং নিষ্ক্রিয় এক সংগঠন, যার অবস্থান আজ বিশ্বের সামনে এক অবিশ্বাস্য লজ্জা। কোথাও কোনো সাড়া নেই, কোনো দায় নেই, কোনো জবাব নেই। যেন গোটা মানবজাতির দুর্দশা আর অস্থিরতা তাদের বিবেক স্পর্শই করে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজ দিনমজুর মানুষ তার সবকিছু বিসর্জন দিয়ে নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন পর্যন্ত দিচ্ছে। আর সেই একই সময়ে যাদের আমরা এলিট শ্রেণি বলি তারা বিলাসবহুল জীবনে অন্য দেশে সুরক্ষিতভাবে অবস্থান করছে কিংবা তাদের পরিবারকে বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। ওদিকে সাধারণ মানুষ পেটে ক্ষুধা হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে মাতৃভূমির জন্য। এই কি সেই গণতন্ত্র যার স্বপ্ন একদিন মানবজাতিকে আলোড়িত করেছিলো। এ লজ্জা এবং এ ঘৃণা কোথায় রাখি।

আজ যুদ্ধ চলছে গাজায় ইউক্রেনে আরও বহু দেশে। অথচ সদ্য আমি এসেছি সিশরে আর দেখছি যে বহু দেশের এলিট মানুষ এখানে নিশ্চিন্তে ছুটি কাটাচ্ছে। তাদের দেশের মানুষ যখন মরছে তখন তারা সমুদ্রের নীল জলে আনন্দে ভাসছে। আমরা খবর দেখছি সাহায্য পাঠাচ্ছি অর্থ দিচ্ছি। কিন্তু সেই অর্থ কতটা যায় সাধারণ মানুষের কাছে আর কতটা চলে যায় দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের পরিবারে যারা দূরদেশে লাক্সারি জীবন কাটায়। বহুদিন ভাবতাম এমন জঘন্যতা শুধু বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখন দেখছি এ ভণ্ডামি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু কেন। কোথায় সেই জাতি সংঘ। তারা কী কাজ করছে আর কীই বা করতে পারছে।

বাংলাদেশের স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে তবে সেই স্বৈরাচার পরিবারের কেউ দেশে নেই। তারা বিশ্বের নানা দেশে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নাগরিকত্ব কিনে নিয়েছে। অথচ দেশের মানুষের পেটে ভাত নেই দেখার কেউ নেই। যখন দেশে আইন স্বচ্ছ হলো বিচারিক ব্যবস্থা নিজেদের কাজ করতে শুরু করলো তখনই তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করছে। বাহ কি আশ্চর্য অভিনয়। আর সব কিছুর ওপরে আছে জাতি সংঘের নিশ্চুপ অবস্থান।

যে দেশে দিনের নব্বই শতাংশ মানুষ দিনমজুর সেখানে কীভাবে এলিট শ্রেণির মানুষ নেতার আসনে বসে। তারা কি কোনোদিন বুঝতে চেয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন কতটা কঠিন। না তারা তা বুঝবে কেন। তাদের বোঝার দরকার নেই কারণ বোঝার চেষ্টা করলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা যাবে না। এবারের এনসিপির নোমিনেশন ফর্ম বিক্রির দৃশ্য দেখে হঠাৎ মনে হলো তারা অবশেষে এক সত্য উপলব্ধি করেছে। বাংলাদেশের পরিচয় শুধু দুর্নীতি স্বৈরাচার পরিবার তন্ত্রের রাজনীতি সীমাবদ্ধ নয় এদেশে সতেরো কোটি মানুষের মধ্যে রয়েছে বিশাল জনগোষ্ঠী যারা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে দেশের উন্নয়নে। এ দেশ রিকশাওয়ালার দেশ অতএব রিকশাচালকের ভোট তার কণ্ঠস্বর তার প্রতিনিধিত্বই হওয়া উচিত দেশের সরকার গঠনের ভিত্তি। বাংলাদেশ পঞ্চান্ন বছর পার করেছে কিন্তু শাসিত হয়েছে এলিট শ্রেণির হাতে। এটা আর চলতে দেওয়া যায় না।

যে রিকশাওয়ালা দেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে ছুটে এসেছিলো যে সাধারণ মানুষ দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষায় জীবন দিতে দ্বিধা করেনি সেই মানুষই প্রকৃত নায়ক। সুতরাং এবারের জাতীয় নির্বাচন তারই প্রাপ্য। কারণ সেই মানুষই স্বৈরাচার দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির দুষ্টচক্র থেকে সতেরো কোটি মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে পারবে।

আমি দেখতে চাই বাংলাদেশ হোক বিশ্বের প্রথম দেশ যেখানে জনগণ নতুন বিপ্লবের মাধ্যমে প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। আর বিশ্ব সেখান থেকে শিখবে কীভাবে শত বছরের প্রতিজ্ঞা যার নাম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা যায়। জাগো বাংলাদেশ জাগো।

রহমান মৃধা, গবেষক এবং লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com

এমকে

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার

Published

on

শেয়ারহোল্ডার

একটি নতুন সময়ের চিত্র
বিশ্ব এখন এমন এক বিনিয়োগ সময়ের মুখোমুখি যেখানে পুরনো স্থিতিশীলতা আর নেই। গত কয়েক দশকের পরিচিত অর্থনৈতিক গতিশীলতা, বাজারের নিয়ম ও নিশ্চিত বিনিয়োগ প্রবাহ ভেঙে পড়েছে। অর্থনীতি, ভূরাজনীতি এবং প্রযুক্তির পরিবর্তনের জটিলতায় বিশ্বব্যাপী পুঁজির গতিপথ নতুন রূপ নিচ্ছে। এই পরিবর্তনের ঢেউ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রবণতা
গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে ক্রমাগত ধীরগতি দেখা গেছে। United Nations Conference on Trade and Development জানিয়েছে যে ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং ২০২৫ সাল এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এর অর্থ, উন্নয়নশীল দেশগুলো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।
এশিয়া অঞ্চলে পুঁজিবাজার কিছু অগ্রগতির ইঙ্গিত দিলেও বাজারের গভীরতা, দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার অভাব এখনো প্রকট। উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনও ঝুঁকি এবং মানবসম্পদ সংকটে ভুগছে। ফলে অতিরিক্ত বিনিয়োগের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাজার স্থিতিশীল নয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বেসরকারি মৌলধন বা প্রাইভেট ইকুইটি বাজার কিছুটা পুনরুদ্ধার করলেও আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি। বড় লেনদেন ধীর এবং বিনিয়োগকারীরা অত্যন্ত সতর্ক। এর ফলে উদ্ভাবন এবং উদ্যোগে অর্থায়নের গতি কমে যাচ্ছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি চাপ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি মূল্যায়নে বাধ্য করছে। এসব প্রবণতা মিলিয়ে বিশ্ব এখন নতুন বিনিয়োগ যুগের মুখোমুখি, যেখানে পুরনো নিশ্চয়তা আর নেই এবং বাজারকে নতুন চোখে দেখা ছাড়া বিকল্প নেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান চিত্র
“একটি দেশের জিডিপির একটি বড় অংশ হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার, কিন্তু বাংলাদেশে সবচেয়ে অবহেলিত পুঁজিবাজার।” বাংলাদেশে পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরযোগ্যতা ও স্বচ্ছতার অভাবে দুর্বল। নীচে মূল বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হলো। ব্যাংক একীভূতকরণ: নীতি, সংকট ও ঝুঁকি কিছু দুর্বল ব্যাংককে অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের জন্য তিনটি বড় সংকট তৈরি হয়েছে।

১. তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। বিনিয়োগকারীরা জানে না তাদের অর্থের ফলাফল কী হবে।
২. বিনিয়োগকারীর মতামত উপেক্ষিত। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারের ভোট, স্বাধীন মূল্যায়ন এবং ন্যায্য বিনিময় অনুপাত নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে এগুলো কার্যকরভাবে হয় না।
৩. নৈতিক সংকট। যদি অডিট অনুযায়ী ব্যাংক স্থিতিশীল ছিল তাহলে হঠাৎ পতন কেন। আর যদি দুর্বল ছিল তাহলে অডিটে ধরা পড়েনি কেন। এটি বিনিয়োগকারীর আস্থা ভেঙে দেয় এবং বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ করে।
শেয়ারহোল্ডারের অধিকার
শেয়ারহোল্ডারের মৌলিক অধিকারগুলো কার্যকর না হলে বাজার টেকসই হয় না। এই অধিকারগুলো হলো:
১. ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা
২. স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশ করা যেমন নন-পেরফর্মিং লোন, ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি এবং অডিট রিপোর্ট
৩. শেয়ারহোল্ডারের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা
৪. ক্ষতির ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর ক্ষতিপূরণের অধিকার
বাংলাদেশে এই অধিকারগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত। ফলে বিনিয়োগকারীর আস্থা দুর্বল হয়ে গেছে এবং বাজার অনিরাপদ স্থানে আটকে আছে।
পুঁজিবাজার পতনের মূল কারণ
বাংলাদেশে বাজার পতন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। বরং এটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংকটের ফল।
১. নীতির অস্থিরতা: হঠাৎ নতুন নীতি যেমন সার্কিট ব্রেকার, মার্কেট মেকার নীতি বা মার্জিন লোন নীতি বাজারকে অনিশ্চিত করে।
২. স্বচ্ছতার অভাব: ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জনসমক্ষে আসে না।
৩. গোষ্ঠী স্বার্থে বাজার নিয়ন্ত্রণ: দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু কার্যকর সমাধান নেই।
৪. সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিশ্বাসহীনতা: মানুষ বিশ্বাস করে না যে তাদের টাকা নিরাপদ, নীতি ন্যায্য এবং রেগুলেটর নিরপেক্ষ।
নির্দিষ্ট পথ নির্দেশনা: নতুন আলো কীভাবে দেওয়া সম্ভব
বাংলাদেশ চাইলে এই সংকট কাটিয়ে পুঁজিবাজারে নতুন আলো দিতে পারে। এর জন্য ধাপমূলক রোডম্যাপ প্রস্তাব করা হলো।
১. নীতি ধারাবাহিকতা এবং পূর্বঘোষণা
নতুন নীতি হঠাৎ পরিবর্তন না করে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে। সার্কিট ব্রেকার, মার্কেট মেকার এবং মার্জিন লোন নীতিকে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে স্থির করতে হবে।
২. বিনিয়োগকারীর অধিকার রক্ষা
মার্জার বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারের ভোট বাধ্যতামূলক করতে হবে।
রেগুলেটর ব্যর্থ হলে ক্ষতিপূরণের স্বচ্ছ নীতি থাকা জরুরি।
৩. সুশাসন প্রতিষ্ঠা
কর্পোরেট গভর্ন্যান্স শক্তিশালী করতে হবে।
ইন্সাইডার ট্রেডিং কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে হবে।
৪. নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতা ও স্বাধীনতা
BSEC এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আন্তর্জাতিক মানের অডিট পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. বিনিয়োগকারীর তথ্যপ্রবাহ ও শিক্ষার উন্নয়ন
সহজ ভাষায় তথ্য প্রকাশ, বিনিয়োগ-ঝুঁকি সচেতনতা বৃদ্ধি, মিডিয়া ও রেগুলেটরের যৌথ উদ্যোগে বাজার-সচেতনতা তৈরি।
৬. উদ্ভাবনী খাতে পুঁজিবাজারের সম্পৃক্ততা
প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট ইত্যাদিতে পুঁজিবাজারের শক্তি ব্যবহার।
৭. ধাপভিত্তিক রূপান্তর রোডম্যাপ
প্রথম বছর: নীতি রিভিউ ও আইন সংস্কার।
দ্বিতীয় বছর: তদারকি শক্তিশালী করা ও শেয়ারহোল্ডারের অধিকার নিশ্চিত।
তৃতীয় বছর: উদ্ভাবনী বাজার ব্যবস্থা চালু করা এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরিয়ে আনা।

শেষ আহ্বান
বিশ্বের ধনী দেশ, ক্ষমতাধারী ব্যক্তি এবং কর্পোরেট নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে একটি স্পষ্ট বার্তা। বিশ্বের অর্থনীতির সংকটের মূল প্রভাবগুলো হচ্ছে বিশ্বরাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা, সামরিক সংঘাত, রোবটিক ও প্রযুক্তিগত দ্বন্দ্ব, কুটনৈতিক কুচক্র এবং যুদ্ধ। এই বাস্তবতায় যদি কাগজে কলমে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এলন মাস্কের মতো একজনের ভোটের মতো আমারও একটি ভোট। এখন ভাবুন যদি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ সত্ত্বেও নেতৃস্থানীয় মানুষকে হারানো সম্ভব হয়নি, তাহলে অর্থ দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা কতটা কার্যকর হবে।
এখন বিশ্বের কাছে প্রশ্ন: আমরা চাই অবিচার ও বিশৃঙ্খলা নাকি ন্যায্যতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা?

Rahman Mridha, গবেষক এবং লেখক, প্রাক্তন পরিচালক, Pfizer, Sweden
rahman.mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার2 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ঢাকা ডাইং

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার3 hours ago

সিএসই শরিয়াহ্ ইনডেক্স থেকে বাদ ১০ কোম্পানি

সিএসইর তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোর পারফরমেন্স পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিএসই শরিয়াহ্ ইনডেক্স চুড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে ১টি কেম্পানি এবং...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার5 hours ago

সিএসই ৩০ সূচক সমন্বয়, ১৮ ডিসেম্বর কার্যকর

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্স পর্যালোচনার ভিত্তিতে সিএসই ৩০ সূচক সমন্বয় করা হয়েছে। এতে নতুন করে ৩টি কোম্পানিকে...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার6 hours ago

বিআইসিএম’র রিসার্চ সেমিনার

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) রিসার্চ সেমিনার-৫০ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ইন্সটিটিউটের মাল্টিপারপাস হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার7 hours ago

বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলসের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার8 hours ago

জিপিএইচ ইস্পাতের পর্ষদ সভা তারিখ নির্ধারণ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা...

শেয়ারহোল্ডার শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার8 hours ago

লুব-রেফের পর্ষদ সভা তারিখ নির্ধারণ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা...

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি37 minutes ago

ডিসেম্বরের ৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার

শেয়ারহোল্ডার
রাজনীতি53 minutes ago

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে মঙ্গলবার সকালে

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি1 hour ago

ভারত থেকে এলো ৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি2 hours ago

ব্যাংকে কোটিপতিদের অ্যাকাউন্ট এক লাখ ২৮ হাজার

শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার2 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ঢাকা ডাইং

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

ব্র্যাক ব্যাংককে আবারও দেশসেরা ক্রেডিট রেটিং দিলো এসঅ্যান্ডপি

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

নানান সেবা নিয়ে এসএমই মেলায় ইসলামী ব্যাংক

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিআইসিএম’র বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার3 hours ago

সিএসই শরিয়াহ্ ইনডেক্স থেকে বাদ ১০ কোম্পানি

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়4 hours ago

দুর্নীতি আছে, দখল-চাঁদাবাজিও চলছে: টিআইবি

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি37 minutes ago

ডিসেম্বরের ৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার

শেয়ারহোল্ডার
রাজনীতি53 minutes ago

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে মঙ্গলবার সকালে

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি1 hour ago

ভারত থেকে এলো ৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি2 hours ago

ব্যাংকে কোটিপতিদের অ্যাকাউন্ট এক লাখ ২৮ হাজার

শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার2 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ঢাকা ডাইং

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

ব্র্যাক ব্যাংককে আবারও দেশসেরা ক্রেডিট রেটিং দিলো এসঅ্যান্ডপি

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

নানান সেবা নিয়ে এসএমই মেলায় ইসলামী ব্যাংক

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিআইসিএম’র বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার3 hours ago

সিএসই শরিয়াহ্ ইনডেক্স থেকে বাদ ১০ কোম্পানি

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়4 hours ago

দুর্নীতি আছে, দখল-চাঁদাবাজিও চলছে: টিআইবি

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি37 minutes ago

ডিসেম্বরের ৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার

শেয়ারহোল্ডার
রাজনীতি53 minutes ago

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে মঙ্গলবার সকালে

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি1 hour ago

ভারত থেকে এলো ৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ

শেয়ারহোল্ডার
অর্থনীতি2 hours ago

ব্যাংকে কোটিপতিদের অ্যাকাউন্ট এক লাখ ২৮ হাজার

শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার2 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ঢাকা ডাইং

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

ব্র্যাক ব্যাংককে আবারও দেশসেরা ক্রেডিট রেটিং দিলো এসঅ্যান্ডপি

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

নানান সেবা নিয়ে এসএমই মেলায় ইসলামী ব্যাংক

শেয়ারহোল্ডার
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিআইসিএম’র বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

শেয়ারহোল্ডার
পুঁজিবাজার3 hours ago

সিএসই শরিয়াহ্ ইনডেক্স থেকে বাদ ১০ কোম্পানি

শেয়ারহোল্ডার
জাতীয়4 hours ago

দুর্নীতি আছে, দখল-চাঁদাবাজিও চলছে: টিআইবি