ক্যাটাগরি: সারাদেশ

ভেদরগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন মাঝির সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মরহুম আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন মাঝির সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) উত্তর তারাবুনিয়া চেয়ারম্যান বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে এ উপলক্ষে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণ সভায় বক্তারা মরহুম আনোয়ার হোসেন মাঝির কর্মময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান কিরণ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মরহুমের সুযোগ্য সন্তান সাংবাদিক জাকির হোসেন ও আল-আমিন সুমন মাঝি, সখিপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম সরদার, মানু সরকার যুগ্ম আহ্বায়ক সখিপুর থানা বিএনপি, উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আব্দুল মান্নান মাঝি, থানা যুবদল সভাপতি মাসুম বালা, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান রাজীব সরদার, প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন আসামী, যুগ্ম আহ্বায়ক, সখিপুর থানা বিএনপি আজমল হক নান্টু মালত,বৃহত্তর তারাবুনিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান।

জয়নাল আবেদীন মাঝি, সাবেক সহ-সভাপতি, শরীয়তপুর জেলা ছাত্রদল মিলন মাঝি, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি তোফায়েল আহমেদ সরদার, মনির খাঁন৷ ছাত্রদল সভাপতি নিহাদ মাহমুদ সরদার, জিয়াউর রহমান টিপু মাঝিসহ স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শত বছরে একবার আনোয়ার মাঝিরা জন্ম নেন শফিকুর রহমান কিরণ প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এমপি শফিকুর রহমান কিরণ বলেন, আনোয়ার মাঝির মতো মানুষ যুগে যুগে জন্মায় না, শত বছরেও একবার এমন মানুষ দেখা যায়। তিনি ছিলেন অসহায় মানুষের বন্ধু, গরিবের আশ্রয়। অসহায় কেউ সাহায্য চাইলে পকেটে যা থাকতো, তা-ই দিতেন।

তিনি স্মৃতিচারণ করে আরও বলেন, আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দেখছি তিনি গরিব-অসহায়দের পাশে ছিলেন সবসময়। আজ যারা তার পাশে ছিল, তারা শত কোটি টাকার মালিক কিন্তু আনোয়ার মাঝি নিজের জন্য কিছুই করেননি, করেছেন কেবল জনগণের জন্য।

তিনি আহ্বান জানান, আমরা যেন তার পরিবারের প্রতি কেউ অন্যায় না করি। আল্লাহ যদি আমাকে সংসদে নেওয়ার তৌফিক দেন, আমি আমার সামর্থ্য ও অর্থ দিয়ে হলেও তার পরিবারের খেয়াল রাখবো ইনশাআল্লাহ। তার প্রতিষ্ঠিত স্কুল-মাদ্রাসা-মসজিদগুলোর এক ইঞ্চি জমিও আমি নষ্ট হতে দেব না।

শেষে তিনি বলেন, যে মানুষ সারাজীবন জনগণের জন্য কাজ করেছে, তার জন্য যদি আমরা নামাজের পর দোয়া না করি, তাহলে আমরা অকৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন—আমিন। আল-আমিন সুমন মাঝির আবেগঘন বক্তব্য আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন মাঝির সুযোগ্য সন্তান আল-আমিন সুমন মাঝি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন।

তিনি বলেন, আমার বাবা ৪৪ বছর ইউনিয়ন ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু ৪৪ বছরে ব্যাংকে ৪৪ টাকাও রেখে যাননি। বাবার চিকিৎসা হয়েছিল শফিকুর রহমান কিরণ সাহেব, বিভিন্ন শিল্পপতি, প্রবাসী ভাই ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নে। যেখানে তিনি এখন শুয়ে আছেন, সেই জায়গাটিও অন্যের, কারণ নিজের নামে এক খণ্ড জমিও রেখে জাননি তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাবা নিজের জন্য কিছুই করেননি—সব করেছেন জনগণের জন্য। আজকাল অনেক চেয়ারম্যানের বাড়িতে যেতে পাকা রাস্তা লাগে, কিন্তু আনোয়ার মাঝি সাহেবের বাড়িতে এখনো কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। তার বাড়ির আঙিনায় আজও কুকুর চলাফেরা করে।

আল-আমিন সুমন মাঝি বলেন, যদি ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে কোনো ভোট রিজার্ভ থাকতো, তবে সেটা ছিল আনোয়ার মাঝি সাহেবের। এর প্রমাণ সাত বছর পর আমার মা ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। কেউ হিংসা করেও আমার বাবার মতো সম্মান অর্জন করতে পারবে না কারন সম্মান দেওয়ার মালিক এক মাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন আমিন। শিক্ষা ও সমাজসেবায় অনন্য ভূমিকা শিক্ষাক্ষেত্রে আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন মাঝির অবদান অনস্বীকার্য।

তিনি আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের আমৃত্যু সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বে এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ও উন্নত হয় বহু শিক্ষা ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যেমন ৮৭নং আব্বাস আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়, হাসান সিদ্দিকীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা, শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসা ও সড়ক-ঘাট উন্নয়ন প্রকল্প পরিবার ও সর্বস্তরের মানুষের দোয়া কামনা
তার পরিবার ও অনুরাগীরা বলেন, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন মাঝি ছিলেন এক আদর্শবান, সৎ ও মানবিক নেতা, যিনি আজও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন তার কর্মে ও স্মৃতিতে।

শেষে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে দোয়া চাওয়া হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন মরহুম আনোয়ার হোসেন মাঝির সকল ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মর্যাদা দান করেন।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার