ক্যাটাগরি: পুঁজিবাজার

তালিকাভুক্তির জন্য মাকসুদ কমিশনে আবেদন একমাত্র লিও আইসিটি ক্যাবলসের

দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ পুঁজিবাজার। জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতে নানামুখী সংস্কার ও পদক্ষেপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও আর্থিকখাতের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি পুঁজিবাজারে বিপরীত অবস্থা বিরাজমান। ক্রমান্বয়ে পুঁজিবাজার ডুবতে বসেছে। স্পর্শকাতর এই খাতটির সঙ্গে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের সরাসরি বিনিয়োগ জড়িত, প্রতিদিনের লেনেদেনের প্রতিফলন ঘটে সূচক উঠা-নামার মাধ্যমে, ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়াটিও সূচকের সমান্তরাল রেখায় প্রতিফলিত হয়। সূচক ও লেনদেন তলানিতে নামছে, যেন দেখার কেউ নেই। অবশ্য এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ শীর্ষ ব্যক্তিদের খামখেয়ালীপনা, বাজার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব, নানা হঠকারী সিদ্বান্ত, ব্যক্তিগত অভিপ্রয়াস, পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে অবমূল্যায়ন, কমিশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানাবিধ কারণে দেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে ধ্বংসের দারপ্রান্তে। এছাড়াও খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের সময়ে একটি নতুন আইপিও অনুমোদন পায়নি। যা নতুন মূলধন প্রবাহকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে বর্তমান অকার্যকর কমিশন। ফলে অর্থনীতিবিদদের সমালোচনার মুখে পড়েছে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন।

এমন সময়ে চলতি বছরের জুন ক্লোজিংয়ের হিসাবে শুধু মাত্র একটি কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন জমা দিয়েছে। তাও আবার এসএমই খাতে তালিকভূক্তির জন্য দেশীয় প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠান লিও আইসিটি ক্যাবলস পিএলসি নিন্ত্রক সংস্থায় আবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে এসএমই প্লাটফর্ম থেকে ৭০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ৭ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করতে চায়। কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) প্রতিষ্ঠানটি আবেদনপত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসই’র নিকট জমা দিয়েছে। লিও আইসিটি ক্যাবলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোমিনুল হক মোমিন স্বাক্ষরিত এ আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কিউআইওর আওতায় কোম্পানিটি ৭০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে প্রায় ৭ কোটি টাকা উত্তোলনের পরিকল্পনা করেছে। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে কিউআইওর মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ইস্যু করা হবে। এই অর্থ মূলত উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মূলধন ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য এবং আইকিউআইও ব্যয় করা হবে।

লিও আইসিটি ক্যাবলস কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক, গাজীপুরে অবস্থিত এবং উৎপাদন করে ফাইবার অপটিক ক্যাবল, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ও অপটিক্যাল নেটওয়ার্কিং ইউনিট। আধুনিক প্রযুক্তি ও মানসম্মত কাঁচামাল ব্যবহার করে দেশের ডিজিটাল ও ইনার্জি অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাদের ফাইবার অপটিক কেবল আন্তর্জাতিক মানের এবং বুয়েট সার্টিফায়েড, যা স্থায়িত্ব ও কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করে।

কোম্পানির পণ্য বর্তমানে ব্র্যাক নেট লিমিটেড, লিঙ্ক৩ টেকনোলজিস, অগ্নি সিস্টেমস, ইন্টারক্লাউড কানেকটিভিটি সলিউশনস সহ বিভিন্ন শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে। লিও আইসিটি কেবলস পিএলসি আশা করছে শেয়ারবাজারে প্রবেশের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে এবং দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে।

বিএসইসি ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতে, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি দেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনবে। লিও আইসিটি ক্যাবলসের এই উদ্যোগ বিএসইসির ‘এসএমই মার্কেট ও শিল্প-খাত উন্নয়ন কর্মসূচি’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এর ফলে উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

দেশীয় টেলিকম, বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামো খাতে ফাইবার ও কেবলের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই চাহিদার প্রেক্ষিতে লিও আইসিটি ক্যাবলস মূলধন বৃদ্ধি করে উৎপাদন সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। কিউআইও থেকে সংগৃহীত তহবিল উৎপাদন ক্ষমতা ও মূলধন ব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি এবং কোম্পানিকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীতকরণ, দেশীয় বাজারে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস, রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য টেকসই মুনাফা নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হবে।

কিউআইওর আবেদনে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, লিও আইসিটি ক্যাবলস একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি যার পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং প্রতি বছর আমরা প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আয় করি। এখন, প্রাথমিক যোগ্যতাসম্পন্ন বিনিয়োগকারী অফার (কিউআইও) অধীনে পরিশোধিত মূলধন সংগ্রহের আমাদের আগ্রহ অনুসারে, আমরা কার্যকরী মূলধন ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে এবং আইকিউআইও ব্যয়ের জন্য আমাদের তহবিলের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য ১০ টাকা মূল্যের ৭০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করার জন্য আবেদন করছি। কিউআইওর মাধ্যমে শেয়ার ইস্যু করার পরে মোট পরিশোধিত মূলধন ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার