চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগে বড় ধরনের একটি কর জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নগরের দুটি কনটেইনার ডিপোর বার্ষিক কর মূল্যায়ন থেকে কৌশলে প্রথম অঙ্ক ‘২’ মুছে ফেলে প্রায় ৪০ কোটি টাকা কর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি তদন্তে বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশনে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ করে প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
সূত্রে জানা গেছে, কর কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান দুটিও সুবিধাভোগী। ঘটনাটিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক সায়েদ আলম বলেন, ‘নথি ঘষামাজা করে ‘২’ সংখ্যাটি বাদ দেওয়া হয়। এতে দুই প্রতিষ্ঠানের ২০ কোটি টাকা করে গৃহকর কমে যায়। আমরা প্রমাণ পেয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট নথি জব্দ করেছি। এখন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান হলো মধ্যম হালিশহরে অবস্থিত এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও পতেঙ্গার লালদিয়া চরের ইনকনট্রেড লিমিটেড। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে এই দুই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক কর মূল্যায়ন নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ও ২৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। কিন্তু রিভিউ বোর্ডে শুনানির সময় ফরম থেকে প্রথম অঙ্ক ‘২’ মুছে ফেলা হয়। ফলে কর দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ও ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তদন্তেও অনিয়মের প্রমাণ মেলে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তা- কর কর্মকর্তা নুরুল আলম ও উপকর কর্মকর্তা জয় প্রকাশ সেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগে তিন হিসাব সহকারী- মঞ্জুর মোর্শেদ, রূপসী রাণী দে ও আহসান উল্লাহকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সচিবালয় বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইনকনট্রেড লিমিটেডের শুনানি হয়েছিল ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর, আর এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ১৩ জুন।
সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, ‘গৃহকর নির্ধারণে অনিয়মের বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ধরা পড়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেয়েই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুদক আমাদের কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়েছে।’
দুদকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি সিটি করপোরেশনের রাজস্ব ব্যবস্থার জবাবদিহি ঘাটতির একটি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হতে পারে।