অর্থনীতি
জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৯০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৯০ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যা এ যাবতকালের যে কোনো অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানায়, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আয়কর ও ভ্রমণ কর, স্থানীয় পর্যায়ের মূসক খাত এবং আমদানি ও রপ্তানি খাতের প্রত্যেকটিতে রাজস্ব আদায়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায়ের মোট পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৫৫৪ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায়ের মোট পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার ৬৮ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায়ের মোট পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ১৫ হাজার ২৭০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। বিগত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের রাজস্ব আদায়ের তুলনায় এ বছরের আদায়ের প্রবৃদ্ধি হার ২০ দশমিক ২১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে মূসক বা ভ্যাট আদায় বেড়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় পর্যায়ের মুসক খাত থেকে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০২৪-২০২৫, ২০২৩-২০২৪ এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল যথাক্রমে ২৬৮৩৮.৪৯, ২৮৪৪৫.৪১ এবং ২৪৫৪৬.৬৫ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় এ বছর স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধি হার ২৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
আরও বলা হয়, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা যা ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আদায় ২৪,০৮০.৮২ কোটি টাকা, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আদায় ২৩,৭৫১.৩১ কোটি টাকা এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আদায় ২১,০১৬.২০ কোটি টাকার চাইতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি। আয়কর ও ভ্রমণ করের ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছরের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ১৮ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এছাড়া আমদানি ও রপ্তানি খাতে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই’ ২৫-সেপ্টেম্বর’২৫ প্রান্তিকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা যা গত তিন অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এই খাতে আদায় ছিল ২৪,৬২৫.৪৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই খাতে রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ২,৮৯২.৫৩ কোটি টাকা। ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বিগত অর্থবছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
এনবিআর জানায়, করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন নিশ্চিতকরণ, কর ফাঁকি প্রতিরোধ এবং ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পুনরুদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমাদানের কাজে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মেধাবী এবং পরিশ্রমী কর্মীরা তাদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির এ ধারাকে আরও বেগবান করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
অর্থনীতি
পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারধারীদের ক্ষতি সরকার চাইলে দিতে পারে: বাংলাদেশ ব্যাংক
আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি আপাতত বিবেচনার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, ক্ষুদ্র শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার চাইলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এফসিডিও’র কারিগরি সহায়তা ও মতামত নিয়ে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনে রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডারসহ পাওনাদারদের অধিকার স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা আছে।
অধ্যাদেশের ধারা ১৬(২)(ট), ২৮(৫), ৩৭(২)(গ) ও ৩৮(২) অনুসারে রেজল্যুশনের আওতাধীন ব্যাংকের শেয়ারধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার–১ ও টিয়ার–২ মূলধনধারকদের ওপর লোকসান আরোপের ক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
তবে ধারা ৪০ অনুযায়ী, রেজল্যুশনের বদলে অবসায়ন হলে শেয়ারহোল্ডাররা যে ক্ষতির মুখে পড়তেন তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হলে, সেই পার্থক্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক কনসালটিং ফার্মের এ-কিউ-আর ও বিশেষ পরিদর্শনে দেখা যায়— উল্লিখিত পাঁচ ব্যাংক বিশাল লোকসানে রয়েছে এবং তাদের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) ঋণাত্মক। এসব বিবেচনায় চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠকে সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর সমগ্র লোকসানের দায়ভার শেয়ারহোল্ডারদের বহন করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের অধীনে শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি আপাতত বিবেচনার সুযোগ নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সরকার চাইলে ক্ষুদ্র শেয়ারহোল্ডারদের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
অর্থনীতি
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগের আলটিমেটাম
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্বল ৫ ব্যাংক মার্জারের ঘোষণা এবং সেসব ব্যাংকে থাকা শেয়ার শূন্য ঘোষণা করেছেন গভর্নর। এ কারণে আলটিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি।
বিনিয়োগকারীদের মতে শেয়ার শূন্য করতে গভর্নরের কোনো অধিকার নেই। শুধু এই গভর্নর নন, গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টাসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যর্থ। তাই বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গভর্নরকে পদত্যাগ করার আলটিমেটাম দিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, সমস্যাগ্রস্ত ৫ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি বৃহৎ ইসলামী ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো পরিচালনা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়োগ দেওয়া প্রশাসক।
তাদের কাজ হবে ব্যবসা পরিচালনা, আইটি নিরাপত্তা, মানবসম্পদ বিভাগ নিয়ন্ত্রণ এবং শাখার দায়িত্ব বণ্টন। ব্যাংক অকার্যকর হলেও আগের নামেই এলসি, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি জানান, মার্জারের পুরো প্রক্রিয়া শেষে নতুন ব্যাংকের নামে নতুন কার্যক্রম শুরু হবে। বুধবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন তিনি।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান, জাকির হোসেন চৌধুরী, মো. কবির হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। যেসব ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে সেই ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রশাসক হিসেবে এক্সিম ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্বে নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। ব্যাংকগুলোর পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসিসহ সব ধরনের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।
পাঁচটি ব্যাংকের মোট ৭৫০টি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে চাই। ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের অধীনে যাচ্ছে তাই আমানতকারীদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও যাদের প্রয়োজন আছে তারাই শুধু অর্থ উত্তোলন করবেন। অযথা ব্যাংকে টাকা তোলার জন্য ভিড় করবেন না।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নর জানান, বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের আমানতের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরিই একটি নির্দেশনা জারি করবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব সরকার নিলেও বেসরকারি নিয়মেই চলবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না। বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা পাবেন।
গভর্নর বলেন, ৫ ইসলামী ব্যাংক মিলেই দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হবে। নতুন এ সমন্বিত ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা বর্তমানে দেশের যেকোনো ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।
শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই শেয়ারের ভ্যালু জিরো বিবেচনা করা হবে। কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনযায়ী সব কম্পানির মালিককে লভ্যাংশের পাশাপাশি ক্ষতির ভাগও নিতে হয়। কিন্তু আমরা এসব ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডরদের জরিমানা করছি না। শুধু শেয়ারমূল্যগুলো শূন্য বিবেচনা করছি। অন্য দেশে হলে তাদের থেকে জরিমানা আদায় করা হতো। এখন ব্যাংকগুলোর নিট অ্যাসেট ভ্যালু ঋণাত্মক ৩৫০ টাকা।’
গভর্নর আহসান মনসুর জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে বলেন, ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীরা ১০০ শতাংশ টাকা তুলতে পারবেন। বড় অঙ্কের আমানতের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উত্তোলনের সুযোগ থাকবে। এর বিস্তারিত পরবর্তীতে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে তিনি সবাইকে উদ্বেগে না পড়ে শুধু প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ তোলার অনুরোধ জানান।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে কি না—জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটা দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। সরকার বদলালেও জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে।
অর্থনীতি
ই-কমার্স রপ্তানিতে ঘোষণাহীন সীমা দ্বিগুণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ই-কমার্স খাতে ঘোষণাবিহীন রপ্তানির সীমা দ্বিগুণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ১ হাজার মার্কিন ডলার (বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা) পর্যন্ত পণ্য বা সেবা রপ্তানি করতে পারবেন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই। আগে এ সীমা ছিল ৫০০ ডলার।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক নির্দেশনা জারি করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রমকে আরও সহজ ও গতিশীল করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নতুন নীতিতে আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে ঘোষণাহীন রপ্তানির আয় সরাসরি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) এর মাধ্যমে দেশে আনা যাবে। অর্থাৎ রপ্তানিকারকরা তাদের ডিজিটাল ওয়ালেট বা অ্যাকাউন্টেই রপ্তানি আয়ের অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন।
এর আগে শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি সেবা রপ্তানির আয় এমএফএস ও পিএসপি মাধ্যমে আনার সুযোগ ছিল। নতুন নির্দেশনার ফলে স্বল্পমূল্যের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই সুবিধা কার্যকর হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত সব লেনদেন অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালার আওতায় সম্পন্ন করতে হবে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদক্ষেপ ই-কমার্স ও ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকদের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে। এতে রপ্তানি প্রক্রিয়া হবে আরও আধুনিক ও স্বচ্ছ, বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার পথ হবে সহজ, এবং আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বৈদেশিক আয় প্রবাহও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থনীতি
অকার্যকর পাঁচ ব্যাংকে প্রশাসক বসালো সরকার
আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক মার্জার বা একীভূত করতে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে নিয়মিত এমডিরা বাদ পড়েছে। ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে সরকার এবং পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
অকার্যকর ঘোষণা করা ব্যাংকগুলো হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, একীভূতকরণের বিষটি এতোদিন কাগজে কলমে ছিল আজ আনুষ্ঠানিক যাত্র শুরু করলো। বাংলাদেশ ব্যাংক ৫টি ব্যাংককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তারা অকার্যকর। পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য প্রত্যেক ব্যাংকের একজন করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসকের সঙ্গে সহযোগীও দেওয়া হচ্ছে।
গভর্নর বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে সরকারি ব্যাংক হলেও এটি বেসরকারি ব্যাংকের মতই পরিচালিত হবে। ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে, গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। আগের নামেই ব্যাংকগুলোতে পেমেন্ট, আমদানি রপ্তানির এলসি খোলা যাবে, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে এবং রেমিট্যান্স কার্যক্রম আগের মতোই সচল থাকবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব সরকার নিলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না। বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা পাবেন।
সরকারি ব্যাংক হলেও এটা চলবে বেসরকারি ব্যাংকের মত জানিয়ে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক ব্যাংকিং চলবে। ব্যাংকগুলোর নামেও রেমিট্যান্স আসবে। আমদানি-রপ্তানির এলসিও খুলতে পারবে। একই সঙ্গে আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে নিজেদের নামে।
গ্রাহক কবে তুলতে পারবেন আমানত
এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর জানান, অকার্যকর ঘোষণা করা পাঁচ ব্যাংকের আমানকারীরা চলতি নভেম্বর মাস থেকেই আমানতের অর্থ তুলতে পারবে। তবে যেসব আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার নিচে তারাই প্রথমে আমানত তুলতে পারবেন। আর যাদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার উপরে তাদের অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে শিগগিরই একটি নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি জানান, পাঁচটি ব্যাংকের মোট ৭৫০টি শাখা ও ৭৫ লাখ আমানতকারী রয়েছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে চায়। ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের অধীনে যাচ্ছে তাই আমানতকারীদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও যাদের প্রয়োজন আছে তারাই শুধু অর্থ উত্তোলন করবেন। অযথা ব্যাংকে টাকা তোলার জন্য ভীড় করবেন না।
কী পাবেন শেয়ারহোল্ডাররা?
অকার্যকর ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন— একীভূত হওয়ার পর তাদের শেয়ারের মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হবে? এ বিষয়ে গভর্নর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই তাদের শেয়ারের ভ্যালু শূন্য (জিরো) হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কাউকেই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক যেমন লভ্যাংশ পান, তেমনি ক্ষতির দায়ও নিতে হয়। আমরা এখানে শেয়ারহোল্ডারদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি না, কেবল তাদের শেয়ারমূল্যকে শূন্য ধরা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অন্য দেশে হলে এই অবস্থায় শেয়ারহোল্ডারদের জরিমানা করা হতো। এখন এসব ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক, কিছু ক্ষেত্রে তা ৪২০ টাকা পর্যন্ত নেগেটিভ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে কি না— জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটা দেশের স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। প্রত্যাশা করছি সরকার বদলালেও জনগণের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রশাসক হিসেবে এক্সিম ব্যাংকে দায়িত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর বর্তমান জমা আছে এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি।
গভর্নর জানান, ৫ ইসলামী ব্যাংক মিলেই দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হবে। নতুন এ সমন্বিত ব্যাংকের পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা বর্তমানে দেশের যে কোনও ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর সরকারি মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। একীভূত করে একটি নতুন সরকারি মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠন করা হবে। যার নাম হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, তারল্য সংকট, বিশাল অঙ্কের শ্রেণিকৃত ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি এবং মূলধন ঘাটতি— এসব কারণে ব্যাংকগুলো কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছেছে। অনেকবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও এই ব্যাংকগুলোর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং তাদের শেয়ার মূল্য মারাত্মকভাবে পড়ে গেছে এবং প্রতিটি ব্যাংকের নিট সম্পদ মূল্য বা নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।
অর্থনীতি
অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮.১৭ শতাংশ
দেশে গত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
আজ বুধবার বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমায় মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে। অক্টোবরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে অক্টোবরে। সেপ্টেম্বরের ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে বেড়ে অক্টোবরে হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশে।
অর্থাৎ, খাদ্যপণ্যে কিছুটা স্বস্তি এলেও খাদ্য-বহির্ভূত পণ্য যেমন: পরিবহন, চিকিৎসা ও সেবা খাতে ব্যয় বাড়ছে।



