ক্যাটাগরি: জাতীয়

ইতালি-চীন-পাকিস্তান-তুরস্ক থেকে যুদ্ধবিমান-হেলিকপ্টার কিনছে বাংলাদেশ

দেশের বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নে গভীর মনোযোগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে চীনের কাছ থেকে জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার খবর, ইতালির কাছ থেকে কেনা হচ্ছে ইউরোফাইটার টাইফুন। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান এবং তুরস্কের তৈরি টি-১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টারও যোগ হতে যাচ্ছে দেশের বিমানবাহিনীর বহরে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ইতালি থেকে ১০টি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টি-রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট ইউরোফাইটার টাইফুন এবং তুরস্ক থেকে ছয়টি টি-১২৯ অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশের। এ উদ্যোগের নীতিগত অনুমোদন ও দুই দেশের সরকারের সম্মতিতে চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ইতালি ও তুরস্কের পক্ষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার।

আর এ পরিকল্পনায় একজন এয়ার ভাইস মার্শালকে সভাপতি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ১২ সদস্যের একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে। এতে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বিমান সদরের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এসব সংস্থাকে চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে প্রতিনিধি মনোনয়ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে ইতালি ও তুরস্কের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে এই যৌথ কমিটি এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, যৌথ কমিটি খসড়া চুক্তিপত্র পর্যালোচনা, দর-কষাকষি, চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ, অর্থপরিশোধ পদ্ধতি ও আনুষঙ্গিক বিষয় নির্ধারণ করবে। চুক্তিতে থাকবে যুদ্ধবিমান সংরক্ষণ, প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি শর্তাবলি। ক্রয় প্রক্রিয়া জিটুজি (সরকার-টু-গভর্নমেন্ট) পদ্ধতিতেই যাচাই-বাছাই করে করা হবে।

এর আগে, চীনের কাছ থেকে ২০টি জে-১০সি ক্রয়ের ব্যাপারে আলোচনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অত্যাধুনিক এ যুদ্ধবিমানগুলো কেনার জন্য প্রায় ২২০ কোটি ডলারের এক প্রস্তাব রাখে সরকার। তাছাড়া, পাকিস্তানের কাছ থেকে ১৬টি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জন্য আরও প্রায় ৭২০ মিলিয়ন ডলার খরচ ধরা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাক-ভারত ও চীন-ভারত সীমান্তে চলমান উত্তেজনা, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও মায়ানমারের সংকট বিবেচনায় দেশের বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন জরুরি। সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার।

ইউরোফাইটার টাইফুনের বিশেষত্ব:
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউরোফাইটার টাইফুন। ফ্রান্সের তৈরি রাফালের সঙ্গে অনেকটাই মিল আছে এর। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের সম্মিলিত উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে একটি কনসোর্টিয়াম। আকাশে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ভাঙন, স্থল আক্রমণ, বৈদ্যুতিক যুদ্ধ—সব ক্ষেত্রে টাইফুন দক্ষতার স্বাক্ষর রাখে। ন্যাটো মানসম্পন্ন টাইফুনে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি ও নমনীয় মডুলার কাঠামো। এর দুটি ইউরোজেট ইজে২০০ টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। রিফুয়েলিং ছাড়া একটানা দুই হাজার ৯০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এই টাইফুন।

ডেল্টা-ডানা ও কানার্ড নকশা যুদ্ধবিমানটিকে দেয় অতুলনীয় গতিশীলতা। এক আসনের হলেও রয়েছে দুই আসনের সংস্করণ। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ মিটার, ডানার প্রস্থ ১১ মিটার, খালি অবস্থায় ওজন ১১ টন এবং সর্বোচ্চ টেক-অফ ওজন ২৩.৫ টন। এ ছাড়া প্রযুক্তি, রাডার ও সেন্সর সুবিধা, অস্ত্র বহনের সক্ষমতা, স্টেলথ প্রযুক্তি থাকায় শত্রুর রাডারে সহজে ধরা পড়ে না এবং উচ্চতাপ সহনশীল হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ লড়াইয়ের সক্ষমতা আছে এই বিমানের।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার