Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দায়, দুর্নীতি ও আত্মসমালোচনার অনুপস্থিতি

Published

on

লভ্যাংশ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এক অদ্ভুত রীতি গড়ে উঠেছে— দেশের যেকোনো ব্যর্থতা, দুর্নীতি বা অন্যায়ের দায় যেন সবসময় এক দলের ঘাড়েই পড়ে। যেন এ দেশের অন্য কারও কোনো পাপ নেই, কোনো অপরাধ নেই, কোনো দায় নেই। দেশে একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে— “সব মাছে গু খায়, ঘাউরা মাছের দোষ হয়।” এই প্রবাদটাই যেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার খোলামেলা প্রতিচ্ছবি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গত পাঁচ দশকের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ক্ষমতার মসনদে বসা প্রতিটি নেতা— শেখ মুজিব থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনা— সবাই কখনও না কখনও ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অন্যায় আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থেকেছেন। তবু আজ যখন ইতিহাসের বোঝা তোলা হয়, তখন সেই সব দোষের ভার যেন একচেটিয়াভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে— সব অপরাধ কি এক দলের?
দেশে যে রাজনৈতিক দুর্নীতি, নৈতিক অবক্ষয়, প্রশাসনিক অনাচার আর জনগণের প্রতি অবিচার চলেছে, তার মূল শেকড় তো বহু গভীরে — সব দলের শাসনকালেই এর জন্ম, বিকাশ, আর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। তাহলে কেন আজও এই জাতি সেই একই “ঘাউরা মাছের দোষ” সংস্কৃতির শিকার? বাংলাদেশের রাজনীতি যেন এক রসাতলে নেমে গেছে, যেখানে ক্ষমতার লোভ, দুর্নীতির প্রলোভন, এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অদৃশ্য কিন্তু প্রাণঘাতী চক্র। আর সেই চক্রের ভেতরে থেকে সব দলই যেমন অপরাধে জড়িত, তেমনি নিজেদের দায় এড়াতে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ব্যস্ত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আসুন, একটু জানি দেশের প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রীদের কুকর্ম ও তার ফলাফল সম্পর্কে
শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৭২–১৯৭৫)
কুকর্ম: একদলীয় শাসনব্যবস্থা (BAKSAL) প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে প্রশাসনিক ব্যর্থতা, জাতীয় রক্ষী বাহিনীর (Jatiya Rakkhi Bahini) মাধ্যমে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যা। তিনি এক নায়কতন্ত্র শাসন কায়েম করেন — শতভাগ ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারতন্ত্রের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
ফলাফল: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল অফিসারের হাতে নিহত হন।

জিয়াউর রহমান (১৯৭৭–১৯৮১)
কুকর্ম: সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল, সরকারি তহবিলের অপব্যবহার, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহার। দলীয় স্বার্থে সামরিক প্রশাসনকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করেন।
ফলাফল: ১৯৮১ সালের ৩০ মে সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (১৯৮২–১৯৯০)
কুকর্ম: সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল, সংবিধান স্থগিত, নির্বাচনী প্রহসন, বিরোধী আন্দোলন দমন, ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অবক্ষয়। জনগণের কণ্ঠরোধ করে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করেন।
ফলাফল: তীব্র গণআন্দোলনের চাপে ক্ষমতা হারান; মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সমালোচনার মুখোমুখি থাকেন।

খালেদা জিয়া (১৯৯১–১৯৯৬, ২০০১–২০০৬)
কুকর্ম: দুর্নীতি মামলা (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, গ্যাটকো), রাজনৈতিক সহিংসতা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার নেপথ্য অভিযোগ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, প্রশাসনিক দুর্নীতি ও দলীয় সন্ত্রাস।
ফলাফল: দেশে ব্যাপক অস্থিরতা বৃদ্ধি; সেনা হস্তক্ষেপের পর ক্ষমতা হারান ও দীর্ঘদিন রাজনৈতিকভাবে অচল অবস্থায় থাকেন।
উৎস: আমার নিজের দেখা।

শেখ হাসিনা (২০০৯ – ২০২৪)
কুকর্ম: ছাত্র আন্দোলন দমন (১৪০০+ নিহত), গুম, নির্যাতন ও রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক মামলা, দুর্নীতি (পদ্মা সেতু, মেঘনা–গোমতি সেতু, পূর্বাচল প্লট বরাদ্দসহ), সংবাদমাধ্যম ও বিচার বিভাগের উপর দমননীতি। তিনি একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতীক হয়ে ওঠেন— যেখানে দেশ, দল ও পরিবার একাকার হয়ে গেছে।
ফলাফল: আইনি অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখেও ক্ষমতা ত্যাগ করেননি; শেষপর্যন্ত ‘সেফ একজিট’ চুক্তিতে ভারতে আশ্রয় নেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই নেতাদের কুকর্মের প্রতিফলন আজও সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে রক্তক্ষরণের মতো দৃশ্যমান। কেউ ক্ষমতার নেশায় মানুষ হত্যা করেছে, কেউ জাতির সম্পদ লুটেছে, কেউ স্বাধীনতার নামে স্বাধীনতাকে বন্দি করেছে। অনেকে তাদের অপরাধের ফল ভোগ করেছে—কেউ গুলিতে নিহত, কেউ জনগণের রোষে অপদস্থ, কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে বিদেশে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছে। কিন্তু বিস্ময়কর সত্য হলো—একজনও স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেননি। যেন ক্ষমতা তাদের কাছে এক ঈশ্বরত্ব, যার জন্য জীবন, নীতি, এমনকি দেশকেও উৎসর্গ করা যায়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলোর আচরণে তাই এক ধরনের বেহায়া নির্লজ্জতা ও নৈতিক দেউলিয়াত্ব স্পষ্ট। জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ নেই, লজ্জা নেই, আত্মসমালোচনার ক্ষমতাও নেই। রাজনীতি এখন আর সেবা নয়, এক নির্মম প্রতিযোগিতা— কে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত, কে বেশি নিষ্ঠুর, কে ক্ষমতার চাবিকাঠি বেশি শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি, এবং প্রশাসনিক অপব্যবহারের এক অন্ধকার যুগ সৃষ্টি করেছে, যেখানে রাষ্ট্রের শান্তি, ন্যায় ও স্থিতিশীলতা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে।

উপরে তো কেবল সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে টপ লেভেলের কিছু নেতার নাম, কিন্তু ভাবুন—যে অসংখ্য নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অপরাধ, দুর্নীতি, হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে, তারা দিব্যি বিদেশে বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছে। কেউ লন্ডনে, কেউ দুবাইয়ে, কেউ কানাডায়—সবাই নিরাপদ, অথচ দেশের আইন তাদের নাগাল পায় না।

প্রশ্ন জাগে—বিশ্বজুড়ে যখন আইনের এক জাল আছে, ইন্টারপোল নামের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে, তখন গত ৫৪ বছরে তারা কি একজনকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে? না, একটিও না। কেন? কারণ, বাংলাদেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা এতটাই দুর্বল, দলনির্ভর ও দুর্নীতিগ্রস্ত যে বিশ্বের কোনো দেশই আজ বাংলাদেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে চায় না।

যখনই কোনো সরকার ক্ষমতা হারায়, তখনই হাজারো মিথ্যা মামলা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রশাসনিক নিপীড়নের শিকার হয় পরাজিত পক্ষ। ফলে সত্য-মিথ্যা, অপরাধ-অভিযোগ— সবই মিশে গেছে এক অনিশ্চিত ধোঁয়াশায়। এই বাস্তবতাই প্রমাণ করে—আমরা জাতি হিসেবে কতটা দুরবস্থার শিকার, আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।

আমরা এখন এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার বন্দি, যেখানে অপরাধীরা পালিয়ে যায়, কিন্তু ন্যায়বিচার পালানোর পথ খুঁজে পায় না। এখন যেমন সব দোষ শুধু আওয়ামী লীগের ওপর চাপানো হচ্ছে, তার কারণ যেমন;
১. দীর্ঘকাল ক্ষমতাসীন থাকা: দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে জনগণের প্রত্যাশা বাড়ে, হতাশাও বাড়ে। তাই সরকারের প্রতিটি ব্যর্থতা, প্রতিটি ক্ষোভ সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের দিকেই ধাবিত হয়।

২. মিডিয়া ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা:বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ও বিরোধী দলগুলোর একাংশ রাজনৈতিক হিসাবেই সব দোষ একপাক্ষিকভাবে প্রচার করে। তথ্যের চেয়ে আবেগ, যুক্তির চেয়ে প্রতিশোধ প্রবল।

৩. জনমতের মনস্তত্ত্ব: জনগণ প্রায়ই ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্নভাবে বিচার করতে চায় না; বরং বৃহত্তম ও দৃশ্যমান শক্তিকে দোষারোপ করাই সহজ। আওয়ামী লীগ সেই দৃশ্যমান শক্তি—তাই দোষারোপের ভার তার ঘাড়েই পড়ে।

৪. প্রবাদের বাস্তব প্রতিফলন: বাংলাদেশ আজ সেই প্রবাদটির এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি— “সব মাছে গু খায়, ঘাউরা মাছের দোষ হয়।” সবাই অপরাধ করেছে, সবাই কুকর্মে জড়িত, কিন্তু দৃশ্যমান ও ক্ষমতাধর ঘাউরা মাছের ঘাড়েই এখন দোষের সমস্ত ভার চাপানো হচ্ছে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি কোনো একক ব্যক্তি বা দলের সমস্যা নয়—এটি পুরো রাজনৈতিক সংস্কৃতির মজ্জাগত রোগে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা, সুবিধা, আর ব্যক্তিগত স্বার্থের অন্ধ নেশায় আজ রাজনীতি নীতিহীন, প্রশাসন জবাবদিহিহীন, আর জনগণ নিরুপায়।

•রাজনৈতিক স্বার্থ: ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে বিরোধী দল—সকলেই নিজেদের সুবিধার জন্য দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রশাসনিক জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছে। একে অপরকে দোষারোপ করলেও বাস্তবে তারা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
•আইনি দুর্বলতা: বিচারব্যবস্থা পক্ষপাতদুষ্ট, তদন্ত সংস্থা ভীত, আর আইনের প্রয়োগ বেছে বেছে করা হয়। ফলে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা রাষ্ট্রদুর্বৃত্তি—সবই পার পেয়ে যায় ক্ষমতার ছায়াতলে।
•ভয় ও রাজনৈতিক চাপ: ক্ষমতাধর নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সেটি “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” বলে আখ্যা দেওয়া হয়, আর সেই অজুহাতে আইনি নীরবতা জারি থাকে। ফল—ন্যায়বিচারের বদলে ভয়ই হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের নীতি।
•ফলাফল: শেখ হাসিনার শাসনকাল এই সংস্কৃতির চূড়ান্ত প্রতিচ্ছবি। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন ও তোষণনীতি তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে, কিন্তু সেই সুরক্ষাই দেশকে আজ দুর্নীতির এক অশেষ চক্রে বন্দি করে ফেলেছে। তবে শ্রীলঙ্কা প্রমাণ করেছে—জনগণ যদি জাগে, দুর্নীতিগ্রস্ত শাসক টিকতে পারে না। সেখানে মানুষ রাস্তায় নেমে একসময় সর্বশক্তিমান রাজাপাক্ষেকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাদের এই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক জাগ্রত জাতির গর্জন।

বাংলাদেশও ইতিহাসে এমন গণজোয়ার দেখেছে—স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কিন্তু দুর্নীতির শিকড় রয়ে গেছে অটুট। কারণ, আমরা শাসক বদলেছি, কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে পারিনি। যতদিন পর্যন্ত জনগণ সত্যিকার অর্থে নৈতিকভাবে সজাগ, ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় হবে না—ততদিন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সহিংসতা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে বন্দি রাখবে।

এখন কী করা উচিত?
১. দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত রাজনৈতিক সংস্কার: রাজনীতি হতে হবে সেবা, ক্ষমতা নয়। দলের আগে দেশ, আর দেশের আগে ন্যায়বোধ।
২. সততা ও স্বচ্ছতা: প্রশাসন ও দলীয় কাঠামোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে, কোনো সংস্কারই টেকসই নয়।
৩. আইন ও বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা: বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে—ন্যায়বিচার যেন কোনো দলের নয়, জনগণের অধিকার হয়।
৪. নাগরিক সচেতনতা: জনগণকে বুঝতে হবে, নীরবতা মানেই অপরাধের পক্ষে থাকা। প্রতিটি নাগরিককে দুর্নীতি ও অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান নিতে হবে।
৫. জনগণের অংশগ্রহণ: শুধু নির্বাচনে নয়—রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি পর্যায়ে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে গণচাপই হতে হবে দুর্নীতিবিরোধী অস্ত্র।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস আজ এক নির্মম সত্যের সামনে দাঁড়িয়ে— ক্ষমতা কখনও কাউকে ন্যায়বান করেনি, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে। এই দেশে অনেক নেতা নিহত হয়েছেন, কেউ স্বৈরাচারের পতনে অপমানিত, কেউ বিদেশে নির্বাসিত, কেউ আজও গোপনে অপরাধের দায় বহন করছে। কিন্তু একটিও ব্যতিক্রম নেই—কেউ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেননি।

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন, কিন্তু বাংলাদেশে নেতারা ব্যর্থতাকেও সাফল্য হিসেবে ঘোষণা করেন। এ যেন এক বেহায়া রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যেখানে লজ্জা নেই, নীতি নেই, কেবল ক্ষমতার প্রতি অন্ধ আসক্তি। শেখ মুজিব থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা— সবাই ক্ষমতার মোহে একই অপরাধ করেছেন, ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন নাম নিয়ে। এ যেন এক দীর্ঘ শৃঙ্খল—একটি জাতির নৈতিক পতনের জীবন্ত ইতিহাস।

পাঁচ দশকের বাংলাদেশের রাজনীতি আমাদের এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে— আমাদের নেতাদের রাজনীতি এখন নীতিহীনতা, ক্ষমতার লালসা ও জনগণের আস্থা হারানোর প্রতীক। ভোট চুরি, দুর্নীতি, রাজনৈতিক হত্যা, গণহত্যা—এসব কেবল অতীতের কাহিনি নয়; আজও এগুলো দেশের শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতা। যারা একসময় ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল, তাদের কুকর্মের ফলেই জন্ম নিয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, সমাজে বিভাজন, আর ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই অন্ধকারের মাঝেও এখনো একটি আশার আলো জ্বলছে।

বাংলাদেশ এখনো পথ হারায়নি—যদি আমরা চাই, আমরা পারি একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে। যা এখন করা জরুরি
১. গণতান্ত্রিক সংস্কার বাস্তবায়ন: দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে প্রতিটি নেতা ও দলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—প্রত্যেক শাসককে তার কর্মের দায় নিতে হবে।
২. আইনের শাসন ও বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা: বিচার যেন আর কোনো দলের বা ক্ষমতার নয়, কেবল সত্য ও জনগণের হয়। দোষী নেতা, যে দলেরই হোক, আইনের সামনে সমানভাবে দাঁড়াবে—এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।
৩. সচেতন ও সক্রিয় জনগণ: জনগণই রাষ্ট্রের মালিক—এই চেতনা ফিরিয়ে আনতে হবে। শ্রীলঙ্কার মতো গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে, যখন জনগণ জাগে, দুর্নীতি পালায়। বাংলাদেশেও সেই শক্তি আছে, শুধু ঐক্য আর সাহসের প্রয়োজন।
৪. দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি: রাজনীতিকে পুনরায় নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধে ফিরিয়ে আনতে হবে। সাংবাদিক, প্রশাসক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী—প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে সৎ থাকতে হবে। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই কেবল সরকারের নয়, সমগ্র জাতির।

বাংলাদেশের পাঁচ দশকের ইতিহাস আমাদের শেখায়— ক্ষমতার মোহ শেষ পর্যন্ত কাউকে রক্ষা করেনি। শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত সকল শাসকের কুকর্মের ফলাফল এক— মৃত্যু, নির্বাসন, অস্থিরতা ও জনগণের বিশ্বাস হারানো। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আমরা কি কিছুই শিখিনি? দেশকে শান্তির পথে ফেরাতে এখনই প্রয়োজন সততা, নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ এবং জনগণের একাগ্রতা। আমাদের ভোট, আমাদের প্রতিবাদ, আমাদের সাহস— এই তিনই পারে বাংলাদেশকে দুর্নীতি, লোভ আর স্বৈরাচারের অন্ধকার থেকে উদ্ধার করতে। কোনো অপরাধই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে একটি দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দেখিয়েছে, জনগণ চাইলে ক্ষমতার অপব্যবহার থামানো যায়।

তাহলে প্রশ্ন জাগে— আজকের বাংলাদেশে কত শতাংশ মানুষ সত্যিই দুর্নীতিমুক্ত? আমরা কি নিজেরাই দুর্নীতির অংশ হয়ে যাচ্ছি না অজান্তেই? যে জাতি নিজের নৈতিকতার কাছে সৎ, সেই জাতির পথ কেউ রোধ করতে পারে না। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন আমাদের হাতে—সৎ, সাহসী এবং ঐক্যবদ্ধ নাগরিকদের হাতে।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

ক্যাম্পাসে শুরু, কর্পোরেটে সাফল্য- চার বছরের যাত্রায় ভবিষ্যতের পথচলা

Published

on

লভ্যাংশ

ইউনিভার্সিটির চার বছরের জীবন কি ক্যারিয়ার নির্ধারণ করতে পারে? প্রশ্নটা শুনতে যতটা সাধারণ মনে হয়, উত্তরটা কিন্তু ততটা সহজ নয়। অনেকেই মনে করেন, ক্যারিয়ার নির্ভর করে ভাগ্য, পারিবারিক প্রেক্ষাপট বা প্রথম চাকরির সুযোগের ওপর। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, একজন তরুণ-তরুণীর কর্মজীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে ঠিক সেই সময়টাতেই;যখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে নিজেদের খুঁজে ফেরে, স্বপ্ন বুনে, আর পরিপক্ক হয়ে ওঠে বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুধু বইয়ের পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি হচ্ছে জীবনের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ পর্ব। এখানে একজন শিক্ষার্থী শেখে কিভাবে নিজের সময়, দক্ষতা ও সম্পর্ককে ব্যবস্থাপনা করতে হয়। ক্লাসরুমে শেখানো তত্ত্ব যেমন জ্ঞান দেয়, তেমনি ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি, স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম কিংবা উদ্যোক্তা উদ্যোগগুলো বাস্তব জগতের প্রস্তুতি গড়ে তোলে। এই চার বছরের অভিজ্ঞতাই অনেক সময় ঠিক করে দেয় একজন শিক্ষার্থীর পেশাগত পরিচয় কেমন হবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একাডেমিক জ্ঞান: প্রাথমিক ভিত্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ একজন শিক্ষার্থীকে দেয় মূল জ্ঞানের ভিত। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর গভীর ধারণা তৈরি হয় এখান থেকেই। অর্থনীতি, প্রকৌশল, ব্যবসা, সাহিত্য বা আইন;যে ক্ষেত্রেই পড়াশোনা হোক না কেন, পাঠ্যজ্ঞানই ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের প্রথম দরজা খুলে দেয়। তবে, কেবল বইয়ের জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। বাস্তব দুনিয়ার সমস্যাগুলো সমাধান করতে হলে সেই তত্ত্বকে প্রয়োগ করার দক্ষতা থাকা জরুরি; যা অর্জিত হয় অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সহশিক্ষা কার্যক্রম: নেতৃত্ব ও দলগত কাজের অনুশীলন
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের সবচেয়ে বড় উপহারগুলোর একটি হলো সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ। ক্লাব কার্যক্রম, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কালচারাল প্রোগ্রাম, উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা বা স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন; এসব কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শুধু আনন্দ দেয় না, বরং তৈরি করে বাস্তব জীবনের প্রস্তুতি।

কোনো ইভেন্ট পরিচালনা করতে গিয়ে শেখা হয় পরিকল্পনা করা, কাজ ভাগ করে দেওয়া, দল পরিচালনা করা, সমস্যা সমাধান ও সময় ব্যবস্থাপনা। এসব অভিজ্ঞতা কর্পোরেট জগতে নেতৃত্ব, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, কিংবা ক্লায়েন্ট হ্যান্ডলিংয়ে সরাসরি কাজে লাগে। তাই বলা যায়, সহশিক্ষা কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের অদৃশ্য পাঠ্যসূচির অংশ, যা পেশাগত জীবনের জন্য শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করে।

নেটওয়ার্কিং: ভবিষ্যতের দরজা খোলার চাবি
ক্যারিয়ার গঠনে ‘নেটওয়ার্ক’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তৈরি হয় অসংখ্য সম্পর্ক;সহপাঠী, শিক্ষক, সিনিয়র-জুনিয়র, প্রাক্তন শিক্ষার্থী কিংবা অতিথি বক্তা;যারা পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হতে পারেন। একজন সিনিয়রের রেফারেন্সে প্রথম ইন্টার্নশিপ, কোনো শিক্ষকের পরামর্শে ক্যারিয়ার দিকনির্দেশনা, বা সহপাঠীর উদ্যোগে স্টার্টআপ;সবই সম্ভব হয় সেই সম্পর্কের ভিত্তিতে। কর্পোরেট জগতে আজ “network is net worth” কথাটি সত্য প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিদিন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেই সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সেগুলো বজায় রাখা পেশাগত বিকাশের অন্যতম চাবিকাঠি।

কর্পোরেট রিয়েলিটি বোঝা: ইন্টার্নশিপ ও এক্সপোজারের গুরুত্ব
বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে চাকরির বাজার এখন অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক। শুধু ভালো সিজিপিএ বা ডিগ্রি দিয়ে সুযোগ পাওয়া কঠিন। এই জায়গায় ইন্টার্নশিপ, সেমিনার, কর্পোরেট ভিজিট, কিংবা গেস্ট লেকচারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে পরিচিত করে, শেখায় কিভাবে থিওরি প্রয়োগ করা যায়, কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়, কিংবা কিভাবে পেশাদার আচরণ গড়ে তুলতে হয়।

যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই এসব সুযোগ গ্রহণ করে, তাদের কর্পোরেট ট্রানজিশন তুলনামূলকভাবে মসৃণ হয়। তারা দ্রুত বুঝে ফেলে; ‘কাজের জায়গায় কেমন আচরণ করতে হয়’, ‘কীভাবে সময়সীমা রক্ষা করতে হয়’, কিংবা ‘কীভাবে নিজের পারফরম্যান্স উপস্থাপন করতে হয়।’

আত্ম-আবিষ্কার ও আত্মবিশ্বাস গঠনের সময়
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কেবল পেশাগত নয়, মানসিক ও আত্মিক পরিপক্কতার সময়ও বটে। এখানেই একজন তরুণ শেখে সে আসলে কী চায়, কোন কাজে তার আগ্রহ বেশি, এবং কোন পথে হাঁটলে সে সবচেয়ে বেশি পরিপূর্ণতা অনুভব করবে। কেউ হয়তো বুঝতে পারে সে গবেষণা বা একাডেমিক জীবনে সফল হবে, কেউ উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে, আবার কেউ দেখে তার গন্তব্য কর্পোরেট নেতৃত্বে। এই আত্ম-অন্বেষণই পরবর্তীতে একজন মানুষকে করে তোলে আত্মবিশ্বাসী, সিদ্ধান্তপ্রবণ ও লক্ষ্যভেদী।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেশাগত জীবনে রূপান্তর: প্রস্তুতির বাস্তব চিত্র
আজকের অনেক সফল পেশাজীবী তাদের ক্যারিয়ারের শুরুর গল্প বলতে গিয়ে একটি বিষয়েই একমত; ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তাদের চিন্তাধারাকে গড়ে দিয়েছে।’

একজন শিক্ষার্থী যদি ক্লাসরুমের পড়ার পাশাপাশি নিজের আগ্রহের ক্ষেত্রে কাজ করে, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে, এবং চারপাশের মানুষের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করে;তবে তার ক্যারিয়ার শুরু হয় অনেক দৃঢ় ভিত্তির ওপর। কর্পোরেট দুনিয়ার যে তিনটি মূল দক্ষতা;যোগাযোগ (communication), বিশ্লেষণক্ষমতা (analytical ability), ও পেশাগত আচরণ (professionalism);এসবের অনুশীলনের জায়গা তৈরি হয় এই চার বছরের মধ্যেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছর হয়তো কারও ক্যারিয়ারের শেষ শব্দ নয়, কিন্তু এটি নিঃসন্দেহে প্রথম অধ্যায়। এই সময়টি কেবল পরীক্ষার ফলাফলের জন্য নয়; এটি হলো নিজেকে তৈরি করার, নিজের সীমা ভাঙার, এবং ভবিষ্যতের জন্য মজবুত ভিত্তি গড়ার সুযোগ। যে শিক্ষার্থী এই সময়টিকে কেবল ডিগ্রির জন্য নয়, শেখার ও বেড়ে ওঠার জন্য ব্যবহার করে;তার ক্যারিয়ারের পথ অনেকটা আগেই উন্মুক্ত হয়ে যায়।

তাই বলা যায়, ইউনিভার্সিটির চার বছরের জীবনই পারে ক্যারিয়ারের পথ নির্দেশ করতে; প্রশ্ন শুধু একটাই, আপনি কি প্রস্তুত নিজের সেই চার বছরটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে?

মো. আশিকুর রহমান, লীড- ব্র্যান্ড, কমিউনিকেশন এন্ড মার্কেটিং বাংলাদেশ ফাইন্যান্স পিএলসি। 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

স্বৈরাচার, সংকট বা চাঁদাবাজি নয়, চাই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ

Published

on

লভ্যাংশ

বাংলাদেশ আজ এক গভীর রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকাল দেশের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দমননীতি, প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং মানবাধিকারের অবমাননা রাষ্ট্রের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশটি ধীরে ধীরে একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিণত হয়। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে, সংবাদমাধ্যম শৃঙ্খলিত হয় এবং জনগণের কণ্ঠরোধ করা হয় নির্মমভাবে। এই শাসন কেবল বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাধীনতাকেও বিপন্ন করেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মানুষের মধ্যে ক্ষমতার লালসা একটি প্রাচীন প্রবণতা, কিন্তু যখন তা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে পরিণত হয়, তখন সমাজে নৈতিকতা, ন্যায়বোধ এবং স্থিতিশীলতা ধ্বংস হয়ে যায়। শেখ হাসিনার সরকারের কর্মকাণ্ডে এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রেখে তারা জনগণের অধিকারকে দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে অবমূল্যায়ন করেছে। গুম, খুন, ভুয়া মামলা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দমন রাষ্ট্রনীতির অংশে পরিণত হয়েছিল। ক্ষমতার প্রতি শেখ পরিবারের অন্ধ আসক্তি দেশকে স্বৈরতন্ত্রের অন্ধগলিতে নিয়ে যায়। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এই শাসনব্যবস্থা জাতির মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। যখন জাতির পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যায়, তখন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনার পতন ঘটায়। সেই মুহূর্ত জাতির আত্মমর্যাদার পুনর্জন্মের প্রতীক হয়ে ওঠে এবং স্পষ্ট করে দেয় যে শেখ পরিবার বাংলাদেশের জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্পর্ক সন্দেহ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তিস্তা চুক্তি ঝুলে থাকা, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিরীহ নাগরিকদের মৃত্যু এবং বাংলাদেশের বাজারে ভারতের একচেটিয়া বাণিজ্যিক আধিপত্য জনগণের মধ্যে অসন্তোষ গভীর করেছে। ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এ অঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ দেশকে বিভক্ত করেছে এবং সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জনগণ এখন বুঝেছে এই সম্পর্ক পারস্পরিক নয়, বরং একতরফা। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থতা ও প্রতিবেশীর প্রতি অন্ধ আনুগত্যের নীতি আর টেকসই নয়। প্রয়োজন সাহসী, কূটনৈতিক ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব, যা দেশকে আত্মনির্ভর ও স্বাধীন নীতির পথে ফিরিয়ে আনবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

শেখ হাসিনার আমলে রাজনীতি পরিণত হয়েছিল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থরক্ষার যন্ত্রে। সংবিধান বিকৃত করে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এবং প্রশাসনকে দলীয়করণের মাধ্যমে তিনি একদলীয় স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সবকিছু ব্যবহার করা হয়েছিল ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে। এর ফলে গণতন্ত্র ভেঙে পড়ে, নির্বাচন জনগণের মতপ্রকাশ নয় বরং পূর্বনির্ধারিত নাটকে পরিণত হয়। দুর্নীতি ও কালোটাকার প্রবাহে অর্থনীতি দমবন্ধ হয়ে পড়ে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়, ভিন্নমত মানে নিপীড়ন, গুম ও কারাবাস। বিচার বিভাগ ন্যায়ের বদলে ক্ষমতার যন্ত্রে পরিণত হয়। এটি কেবল রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ও সাংবিধানিক সংকটও বটে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চাবিকাঠি তরুণ প্রজন্মের হাতে। তাদের মধ্যেই রয়েছে পরিবর্তনের শক্তি, উদ্ভাবনের ক্ষমতা ও ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকার। এই শক্তিকে সংগঠিত করতেই গড়ে উঠছে ফিউচার ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ—একটি আন্দোলন, একটি স্বপ্ন এবং একটি দায়িত্ববোধ। এই ফাউন্ডেশন তরুণদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ইতিহাসের সত্য শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে পারে, নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারে এবং সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে পারে। ফিউচার ফাউন্ডেশন কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি বাংলাদেশের নতুন সামাজিক চুক্তির ভিত্তি—একটি প্রজন্মের অঙ্গীকার, যে দেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যাবে।

দীর্ঘ দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ফলেই আজ গঠিত হয়েছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। এই সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নৈতিক পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ। এর লক্ষ্য স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা, মৌলিক অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্রের টেকসই ভিত্তি গঠন করা। এই সরকার কেবল একটি সংকটের প্রতিক্রিয়া নয়, বরং একটি নতুন জাতীয় দিকনির্দেশনা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতি ও মানবিক উন্নয়নের প্রতীক। এখন তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের কেন্দ্রে। তার নেতৃত্ব রাজনৈতিকের চেয়ে বেশি নৈতিক, কারণ তিনি দেশকে মানবিক ও সমতাভিত্তিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে আস্থা অর্জন করছে, তারা বিশ্বাস করছে যে একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব যেখানে মানবিক মূল্যবোধই হবে প্রশাসনের মূলে।

বাংলাদেশ আবারও এক নতুন সূচনার দ্বারপ্রান্তে। দমন ও বিভাজনের অন্ধ অধ্যায় পেরিয়ে দেশ আজ নতুন আলো দেখছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে জাতি প্রমাণ করছে যে সংকট যত গভীরই হোক, ঐক্যবদ্ধ জাতি ও সৎ নেতৃত্বের কাছে তা কখনও অজেয় নয়। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই যাত্রায় নতুন প্রজন্মই হবে নেতৃত্বের মশালবাহক। বাংলাদেশ প্রমাণ করবে, সংকট কখনও পরাজয় নয়, এটি নতুন সূর্যোদয়ের আগমনী বার্তা।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়, বর্তমানে যা ঘটছে, তা কি সত্যিই সেই প্রত্যাশিত পরিবর্তনের প্রতিফলন? ড. ইউনূস ও তার অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টারা দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে অনেকের কাছে এই ধারণা জন্মেছে যে, সেখানে এখনো ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থই প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে এই আশার পথেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। হতে পারে রাজনৈতিক দলগুলো কথা দিয়ে কথা রাখেনি, কিংবা প্রশাসনও তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারেনি।

তবে যে আলোয় আমরা নতুন সূচনা খুঁজছি, সেই আলো তখনই স্থায়ী হবে যখন আত্মসমালোচনার সাহস আমাদের থাকবে, কে কোথায় ভুল করেছে, কেন সেই ভুল পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ তরুণ, কিন্তু বেকারত্বের হারও উদ্বেগজনকভাবে বেশি। ফলে এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর এক অংশ নানা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাবে তাদের শক্তি ব্যবহার করছে ভুল পথে, দলীয় স্বার্থে, এমনকি দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবেও। এই প্রবণতা যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। একদিকে প্রতিবেশী দেশের প্রভাব ও রাজনৈতিক প্ররোচনা, অন্যদিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিভ্রান্তিকর নেতৃত্বের আহ্বান, সব মিলিয়ে তরুণ সমাজ এক জটিল দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে।

বর্তমান প্রজন্মের হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু যদি তাদের মধ্যে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের বোধ গড়ে না ওঠে, তাহলে এই প্রজন্মই হয়ে উঠতে পারে নেতৃত্বের অন্ধকার মশালবাহক, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক ভয়াবহ অধ্যায় রচনা করবে। অথচ তারাই আজ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি শিক্ষিত, প্রযুক্তিসচেতন ও ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার। তাই কেবল ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গায় দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নৈতিকতা, সততা ও দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে। দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিজেদের শক্তি ও বিবেককে কাজে লাগানোই এখন সময়ের দাবি।

বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও সুশাসনের সংগ্রাম অব্যাহত, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের জাগরণ ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। যদি তরুণরা দেশপ্রেম, সততা ও সাহসিকতার পথে এগিয়ে যায়, তবে একদিন এই দেশও হবে দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ।

দায়িত্ববান নাগরিক হওয়ার প্রথম শর্ত নৈতিকতা ও সততা। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তার বিবেক বিক্রি করে না, বরং জাতির মঙ্গলের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। ভোট মানে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া, সামান্য অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি মানে নিজের ভবিষ্যৎকে বিক্রি করা। সুবিধা পেতে তোষামোদ নয়, সত্যের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমাজের উন্নয়ন কেবল সৎ মানুষদের হাতেই সম্ভব।

আমাদের সমাজে অন্যায় ও দুর্নীতি নিত্যদিনের বাস্তবতা, কিন্তু এর বিরুদ্ধে নীরব থাকা মানে অন্যায়কে টিকিয়ে রাখা। প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব সত্যের পক্ষে কথা বলা। ভয় নয়, বিবেকের নির্দেশই হোক পথপ্রদর্শক। সৎ নাগরিক কখনও প্রলোভনে পড়ে না, নিজের নৈতিকতা ও দেশের মর্যাদা রক্ষাই তার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট নয়, প্রতিদিনের ন্যায় ও সমতার চর্চা। যেখানে অন্যায় দেখা যাবে, সেখানেই আওয়াজ তুলতে হবে। গণতন্ত্র টিকে থাকে নাগরিকের সাহসের উপর, নীরবতার উপর নয়।

আজকের যুগে সোশ্যাল মিডিয়া এক নতুন গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউব হয়ে উঠেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মাধ্যম। এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য, বিভাজন নয় ঐক্যের জন্য।

দুর্নীতি মানে শুধু অর্থের ক্ষতি নয়, এটি জাতির মর্যাদা ও জনগণের আস্থার ধ্বংস। তাই দরকার দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি, যেখানে নেতৃত্ব আসবে সততা, যোগ্যতা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে। তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটাতে।

আজকের তরুণেরা জানে, প্রকৃত শক্তি সাহস ও বিবেকের সমন্বয়ে। তাদের হাতে যদি থাকে যুক্তি, সততা ও দায়িত্ববোধ, তবে বাংলাদেশ বদলে যাবে। নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিবর্তনের জন্য এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়।

মানুষের জন্ম হয়েছে স্বাধীন বিবেক ও নৈতিক শক্তি নিয়ে বাঁচার জন্য। সামান্য প্রলোভনের কারণে যেন কেউ নিজের আত্মমর্যাদা বিক্রি না করে। দল বা নেতাকে সমর্থন করা মানে কিন্তু নিজেকে বিক্রি করা না। আমরা যেন ভুলে না যাই, পরিবর্তন শুরু হয় নিজের ভেতর থেকেই। সাহস, সততা ও দেশপ্রেম এই তিনেই গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নর্ডিক বিস্ময়, প্রকৃতি, নৈতিকতা ও মানবতার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি

Published

on

লভ্যাংশ

উত্তর ইউরোপের তিন নক্ষত্র, সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড, কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, মানবিক মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ক্রীড়া এবং সামাজিক সচেতনতার জন্যও বিশ্বে অনন্য। তাদের প্রতিটি শহর, বন, নদী এবং পর্বত যেন মানবসভ্যতার এক জীবন্ত পাঠশালা, যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক শুধুমাত্র সহাবস্থান নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। নর্ডিক সভ্যতার পাঠ যেন মানবিকতার গভীর আলো ছড়িয়ে দেয় পৃথিবীজুড়ে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

উত্তর ইউরোপের শান্ত, তুষারময় ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি দেশ, যেগুলো প্রকৃতির শীতলতা, মানুষের উষ্ণতা এবং রাষ্ট্রের মানবিক দায়িত্ববোধের মধ্যে এক অনন্য ভারসাম্য তৈরি করেছে। তাদের প্রতিটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত নৈতিকতা ও ন্যায়বোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। এই দেশগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তারা তাদের নর্দমা, নৈতিকতা, শিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধ থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির মানুষের অধিকার রক্ষা করতে নিরলসভাবে কাজ করে। এই নৈতিক কাঠামোই তাদের সমাজকে পরিচ্ছন্ন, সমতাভিত্তিক ও বিশ্বমানবতার প্রতীক।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

জীবন্ত প্রতিচ্ছবি
আমি সেই ১৯৮৫ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য সুইডেনে এসেছিলাম। তখন শুধু ভাষা শেখা নয়, লিনশোপিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু ছিল SAS (Scandinavia Area Studies) নামে একটি বিশেষ কোর্স। এই কোর্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের নর্ডিক দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করানো, যেন আমরা শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ না থাকি, বরং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতি, সমাজ ও মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিভিন্ন সময়, স্থান ও প্রেক্ষাপটে ভ্রমণের মাধ্যমে এই দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত করত, যেমন ইতিহাস, নৈতিকতা, শিক্ষা, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক ব্যবস্থা এবং মানুষের জীবনধারা। সেই অভিজ্ঞতাগুলো আজও আমার মনে জীবন্ত; আজও আমি কৌতূহলপূর্ণ মনে জানতে চাই, নর্ডিক সমাজ কিভাবে এই সমস্ত দিককে সুন্দরভাবে একত্রিত করে, মানুষের জীবনমান ও বিশ্বাস গড়ে তোলে। এই প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে, সুইডেনে রয়েছে প্রায় দুই লক্ষ সত্তর হাজারেরও বেশি দ্বীপ, যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই, এবং এই দ্বীপসমূহের শান্তি ও বিস্তৃতি যেন প্রকৃতির এক জীবন্ত পাঠ হয়ে ওঠে। নরওয়ের ফিয়র্ডগুলো এত গভীর যে বিশাল ক্রুজ জাহাজগুলো পর্বতের মাঝ দিয়ে চলাচল করতে পারে, যা প্রকৃতি ও প্রযুক্তির এক অসাধারণ সমন্বয়। ফিনল্যান্ডে রয়েছে এক লক্ষ আটাশি হাজারেরও বেশি হ্রদ, আর দেশটি টানা সাত বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই তিন নক্ষত্রে, নরওয়েতে গ্রীষ্মের দিন সূর্য অস্ত যায় না, ফিনল্যান্ডে শীতের রাতে আকাশ জ্বলে নর্দান লাইটসের রঙে, আর সুইডেনের বিস্তীর্ণ হ্রদ ও দ্বীপসমূহ যেন মানুষের হৃদয়ে প্রকৃতির এক নীরব কাব্য রচনা করে। এই বিপরীত দৃশ্যগুলোই বিস্ময় ছড়ায়।

এই দেশগুলোতে জীবনযাত্রার মান শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিমাপ নয়; এটি নৈতিকতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি এবং নাগরিক দায়িত্ববোধের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি পূর্ণাঙ্গ মানসিকতা। খাদ্যের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের ক্ষেত্রেও তারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। Livsmedel (খাদ্য) এবং Livskvalitet (জীবনমান) এখানে শুধু ধারণা নয়, বরং নাগরিক আস্থা ও নৈতিক দায়িত্বের প্রতীক।

সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রেও নর্ডিক দেশগুলোর অবদান অসাধারণ। সুইডেনের বিয়র্ন বর্গ টেনিসে বিশ্বখ্যাত কিংবদন্তি, নরওয়ের ইয়োহানেস থিংনেস বো বায়াথলনের তারকা, ফিনল্যান্ডের পাওভো নুরমি অলিম্পিক ইতিহাসে এক অবিনশ্বর নাম। আইস হকি, ঘোড়ার রেস, স্তবহোপ কিংবা শীতকালীন খেলাধুলায় তাদের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।

সংগীতের ভুবনেও এই অঞ্চল বিশ্বকে উপহার দিয়েছে ABBA, Roxette, Avicii এবং Jean Sibelius-এর মতো শিল্পীদের, যাদের সৃষ্টিতে মানবিকতার সুর ধ্বনিত হয়।

এই দেশগুলোতেই জন্মেছেন আলফ্রেড নোবেল, যার চিন্তাধারা মানবতার শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে নোবেল পুরস্কার। এই পুরস্কার কেবল অর্জনের প্রতীক নয়, বরং নৈতিকতা, জ্ঞান এবং মানবকল্যাণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ।

নর্ডিক দেশগুলো প্রমাণ করেছে, সভ্যতা তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন রাষ্ট্র ও নাগরিক একে অপরের প্রতি আস্থা ও সম্মানের বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। তাদের সমাজে উন্নয়ন মানে শুধু অর্থনীতি নয়, বরং প্রতিটি মানুষ যেন মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের আলোয় বাঁচতে পারে। এই কারণেই নর্ডিক বিস্ময় আজও বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণা, মানবতার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

হেরেছো কি মরেছো

Published

on

লভ্যাংশ

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে উঠেছে। যদি আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা অনিবার্যভাবে হার স্বীকার করতে বাধ্য হব। কিন্তু এটি কি শুধুই ব্যক্তিগত পরাজয়ের গল্প? না। এটি একটি সমষ্টিগত মনস্তাত্ত্বিক ধ্বস, যা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে, সম্পর্ক ভাঙায় এবং সমাজের অন্তর থেকে আশা শুষে নেয়। যেখানে দুর্নীতি, অত্যাচার, অবিচার এবং মিথ্যা অভিযোগ এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে মানুষ সেগুলো দেখার সুযোগ এবং সাহস খুঁজে পাচ্ছে না, সেখানে অস্থিরতা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে চলেছে হৃদয়ে। এই অস্থিরতা কাটাতে আমাদের সকলকে একযোগে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সকল ষড়যন্ত্র ভেঙে দিতে হবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

পরাজয়ের মনস্তত্ত্ব ও সমাজের ভাঙন
পরাজয়ের অনুভূতি যত গভীর হবে তত বেশি মানুষ আত্মরক্ষার পথ গ্রহণ করবে। বিচ্ছিন্নতার মধ্যে জন্ম নেয় সন্দেহ, প্রতিহিংসা এবং ভুল বোঝাবুঝি। যখন প্রত্যেকে শুধু নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াই করে, তখন সহানুভূতির জায়গা শূন্য হয়ে পড়ে। পরিবারিক দ্বন্দ্বে ভালোবাসার বদলে ঘৃণা জমে। ঠিক একইভাবে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক দ্বন্দ্বেও মিশ্র আবেগ সমাজকে ভিতরের দিকে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে পারে। আর কেউ যদি বলে আমি শুধু হেরেছি, তুমি কি একটুও হারোনি, তখন সেই প্রশ্নই আস্থা ভাঙায় এবং সবচেয়ে ভয়ানক ভূমিকা নেয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মুক্তির পথ: নীতি, কৌশল ও অনুশীলন
মুক্তির পথ কেবল স্লোগানের ইস্যু নয়। এটিকে নীতি, কৌশল এবং ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। তার জন্য তিনটি মৌলিক শর্ত অপরিহার্য।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১. স্বচ্ছতা
অভিযোগ যদি প্রকাশ্য না হয় এবং তদন্ত স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষভাবে না হয়, তাহলে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ ও গুজব আগুনের কাজ করবে। দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ তদন্ত ব্যবস্থা গড়তে হবে।

২. সহমর্মিতা
দোষীদের বিচার করতেই হবে, কিন্তু মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখার আগ্রহ হারালে পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সহমর্মিতা ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

৩. সংহত আন্দোলন
ভাগ হয়ে থাকা প্রতিবাদ ভাঙনই বাড়ায়। পরিকল্পিত, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং নীতিভিত্তিক আন্দোলনই টেকসই পরিবর্তন আনতে পারে। পাশাপাশি আইনি ও নৈতিক জবাবদিহি নিশ্চিত করে ক্ষমতার অপব্যবহার দমন করতে হবে।

রাষ্ট্র যন্ত্রের ওপর বিশ্লেষণ
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে মৌলিক কাঠামোগুলো প্রয়োজন, সেগুলো আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কেন পৌঁছেছে? কীভাবে সেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব? নির্বাচন কি একমাত্র সমাধান? বাংলাদেশ আদৌ নির্বাচন সম্পর্কে সচেতন ছিল কি? একটি দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অবকাঠামো কিভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে?

রাষ্ট্রযন্ত্র কী
রাষ্ট্রযন্ত্র বলতে আমরা বুঝি আইনপ্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান, নির্বাহী বিভাগ, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনী কাঠামো এবং তথ্যমাধ্যম। এগুলো একত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রাখে। যখন এই স্তরগুলো দুর্বল হয়, তখন রাষ্ট্র কেবল নামমাত্রই থাকে। তখন নীতি, ন্যায় ও দায়িত্ববোধ ভেঙে পড়ে এবং দুর্নীতি ও শক্তির অপব্যবহার সমাজে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বসে যায়।

নির্বাচন কি সমাধান
নির্বাচন একটি শক্তিশালী প্রক্রিয়া, কিন্তু এটি নিজে এককভাবে কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত কাঠামোকে শুধরাতে পারে না যদি পরিবেশ নিরপেক্ষ না থাকে। নির্বাচন যদি হয় কেবল ফর্মালিটি, ভোটচুরি ও প্রভাবের মাধ্যমে পরিচালিত, তাহলে তা জনগণের আস্থা হারায়। রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ন্যায্য, মুক্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে না পারলে নির্বাচন কেবল আড়ম্বর হয়ে থাকে।

নির্বাচন সম্পর্কে সচেতনতা
বাংলাদেশে নির্বাচন সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানগত শিক্ষা ও নাগরিক সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। ভোটাররা নির্বাচনকে অনেক সময় শুধু একটি ইভেন্ট মনে করেন, যেখানে কাগজে চিহ্ন দেয়া হয়। সচেতন নাগরিক হওয়ার মানে হলো প্রার্থীর নীতি যাচাই করা, তাদের অনুপ্রেরণা বোঝা, এবং ভোটের ফলাফল ধরে রাখার দায়বদ্ধতা পালন করা। এই সচেতনতা গড়ে ওঠে মিডিয়ার স্বাধীনতা, নাগরিক শিক্ষা, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিচারব্যবস্থার স্বতন্ত্রতার মাধ্যমে। যখন এগুলো দুর্বল থাকে, তখন নির্বাচনও দুর্বল হয়।

দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অবকাঠামো ও জনগণের শাসন
দুর্নীতিগ্রস্ত কাঠামো জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। বরং তা ক্ষমতাসীনদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ দেয় নিজের অবস্থান দীর্ঘায়িত করার। দুর্নীতি নীতিগত স্বার্থ বিকৃত করে এবং নাগরিকের বিশ্বাস ধ্বংস করে। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সততা, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক নীতি। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের ভেতরে স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে, তাহলেই বাহ্যিক নির্বাচনে সঠিক প্রতিনিধিত্ব সম্ভব।

রাষ্ট্রযন্ত্র রক্ষার প্রস্তাবনা
১. বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা শক্তিশালী করা, বিচারব্যবস্থা হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক চাপমুক্ত।

২. নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশাসন নিশ্চিত করা, প্রযুক্তিনির্ভর, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে উন্মুক্ত নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

৩. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, তথ্যের মুক্ত প্রবাহ, তথ্য যাচাই ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

৪. দমনমূলক আইন পর্যালোচনা, সমালোচনা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রক্ষায় আইনগুলো পুনর্গঠন করতে হবে।

৫. নাগরিক শিক্ষা ও অংশগ্রহণ, ভোটের মূল্যবোধ, নীতিগত বিচার ও জনগণের অধিকার বিষয়ে শিক্ষা বাড়াতে হবে।

৬. অডিট ও জবাবদিহি কাঠামো শক্তিশালী করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর অডিট ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নিয়ম চালু করতে হবে।

৭. সংগঠিত ও নীতিভিত্তিক অভ্যন্তরীণ আন্দোলন, বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদের বদলে কৌশলগত, শৃঙ্খলাবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে.

সমাপ্তি
হেরে যাওয়া মানে মরে যাওয়া নয় এই সমসাময়িক ভাবনাটিকে আমাদের ভাঙতে হবে। পরাজয় যদি আত্মসমর্পণ হয়, তা সমাজকে ধ্বংস করবে। কিন্তু পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, কথা বলার দরজা খোলা রাখি, এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনরুজ্জীবিত করি, তবে সেই একই পরিস্থিতিই হতে পারে মুক্তির পথ। রাষ্ট্রের যন্ত্রকে রক্ষা করা শুধু প্রশাসনিক কাজ নয় এটি সামাজিক চুক্তি রক্ষা করা। এর জন্য প্রয়োজন ন্যায়, স্বচ্ছতা এবং সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ।

রহমান মৃধা
গবেষক এবং লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

দুইবার দেশের বিজয় এনেছি, এবার কি হবে পরাজয়?

Published

on

লভ্যাংশ

১৯৭১ – বিজয়ের অন্তর্নিহিত শিক্ষা
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি রাষ্ট্রের জন্ম নয়—এটি ছিল বাঙালির আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয় ও মানবিক ন্যায়ের পুনর্জন্ম। সেই যুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয় তখন কোনো অত্যাচার, কোনো শাসক, কোনো বাহিনীই টিকে থাকতে পারে না। স্বাধীনতার অর্থ তখন কেবল পতাকা নয়, বরং মানুষের সম্মান, অধিকার এবং জীবনের নিরাপত্তা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২০২৪ – গণঅভ্যুত্থান ও রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের সূচনা
অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় পর আবারও বাংলাদেশের রাস্তায় ফুটে উঠেছে প্রতিরোধের আগুন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল একটি অগ্নিকণিকা, যা মুহূর্তেই রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। যুবসমাজের রক্ত, ছাত্রদের সাহস এবং জনতার নির্ভীক সমর্থনেই পতন ঘটে স্বৈরাচারী সরকারের। এবারের বিজয় বন্দুক নয়—মানুষের বিশ্বাস, ঐক্য ও সত্যের শক্তিতে অর্জিত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

রক্ত, সহিংসতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই অভ্যুত্থান ছিল রক্তাক্ত, তবুও তা ছিল ন্যায়ের পথে। শত শত প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে একটি নতুন ভোরের আশায়। সেনাবাহিনী শেষ মুহূর্তে সংযমের ভূমিকা নেয়, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে স্বীকৃতি জানায়। বিশ্ব এবার তাকিয়ে আছে—বাংলাদেশ কীভাবে নিজের ভবিষ্যৎ লিখবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

নতুন নেতৃত্বের আবির্ভাব: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
দেশ যখন বিশৃঙ্খলার মুখে, তখনই আবির্ভূত হন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একদিকে আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতীক, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের আশার মুখ। তার নেতৃত্বে শুরু হয় নতুন বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনা—দুর্নীতি দমন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন কাঠামো গড়ে তোলার অঙ্গীকার। তবে তাঁর সামনে আছে বড় চ্যালেঞ্জ—রাজনীতির বিষাক্ত সংস্কৃতি ও দীর্ঘদিনের পচন।

দুর্নীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের পুনর্গঠন
বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র বহু বছর ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মে আক্রান্ত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো—একটি স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, এবং সরকারি প্রশাসনে প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা। যে রাষ্ট্র নিজের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে না, সে রাষ্ট্র কোনোদিনই সত্যিকারের স্বাধীন নয়।

ভারতের ভূমিকা ও আঞ্চলিক বাস্তবতা
ভারত সবসময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে আগ্রহী এক প্রতিবেশী। ২০২৪–এর পর ভারতের অবস্থানও নীরব পর্যবেক্ষক থেকে কৌশলগত সহযাত্রীতে রূপ নিতে পারে। তবে বাংলাদেশের উচিত নিজস্ব স্বার্থ ও সার্বভৌম নীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া—বন্ধুত্ব বজায় রেখে নির্ভরশীলতা নয়, বরং পারস্পরিক সম্মান ও স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করা।

আমেরিকার ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে সমর্থন জানালেও বাস্তবতা হলো—তাদের স্বার্থও নীতির অন্তরালে লুকিয়ে থাকে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকলেও বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের অবস্থান ধরে রাখা। অন্ধ অনুকরণ নয়—দৃঢ় কূটনৈতিক ভারসাম্যই এখন সময়ের দাবি।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: নতুন রাষ্ট্রচিন্তার তিন দিক
একটি জাতি এখন মোড় ঘুরিয়েছে। সামনে তিনটি পথ—

প্রথমত, সংস্কার, ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষা করে সীমিত পরিবর্তনের বাস্তবমুখী পথ। তৃতীয়ত, বিভাজন ও অনৈক্যের কারণে আবারও অচলাবস্থায় পতন।

কোন পথ বেছে নেবে বাংলাদেশ—এটাই আজকের মূল প্রশ্ন।

রাষ্ট্রপুনর্গঠনের করণীয় ধাপ
প্রথম ৬ মাসে নাগরিক নিরাপত্তা, আইনি স্থিতি ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ছয়–আঠারো মাসে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। আঠারো–ছত্রিশ মাসে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বড় নীতি সংস্কার আনতে হবে। এই রোডম্যাপই হতে পারে একটি টেকসই রাষ্ট্রের ভিত্তি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: বাস্তববাদ ও মর্যাদা
ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেও বাংলাদেশের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশীয় অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মান ও জাতীয় স্বার্থনির্ভর। একটি ছোট রাষ্ট্রও যদি আত্মবিশ্বাসী হয়, তবে কোনো পরাশক্তিই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

মূল প্রশ্নগুলোর বাস্তব পর্যালোচনা
ড. ইউনূসকে সরানো মানে কেবল একজন ব্যক্তিকে নয়—একটি আশা ও আস্থার প্রতীককে সরানো। বাংলাদেশ কোনো পরাশক্তির অঙ্গরাজ্য হবে না, যদি সে নিজের আত্মসম্মান ও জনগণের ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস রাখে। তরুণদের নেতৃত্ব, ন্যায়ের রাজনীতি এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রই নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি গড়বে।

সমাপ্তি: দ্বিতীয় স্বাধীনতার আহ্বান
১৯৭১ ছিল স্বাধীনতার প্রথম জন্ম, ২০২৪ তার আত্মার পুনর্জন্ম। এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা কেবল সরকারের পরিবর্তন নয়—এটি এক মানসিক বিপ্লব, যেখানে নাগরিক নিজেই রাষ্ট্রের মালিক। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তার মানুষের সততা, সাহস ও ঐক্যের ওপর। আমরা যদি নিজেদের দায়িত্ব বুঝি, তবে এই দেশ আবারও মাথা তুলে দাঁড়াবে—সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলোর পথে।

স্বাধীনতার অব্যাহত যাত্রা
বাংলাদেশ এখনো জন্ম নিচ্ছে— প্রতিদিন, প্রতিটি মানুষের সিদ্ধান্তে। ৭১ আমাদের দিয়েছে ভূখণ্ড, কিন্তু ২০২৪ আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে আত্মার আয়না। “স্বাধীনতা কোনো সমাপ্তি নয়, এটি এক অবিরাম যাত্রা। আর বাংলাদেশ সেই যাত্রায় আজ নিজের নাম, ভাষা ও আত্মাকে পুনরুদ্ধার করতে চাইছে।” আজ সময় এসেছে প্রতিটি নাগরিকের ভেতরের বাংলাদেশকে জাগিয়ে তোলার—কারণ সত্যিকারের স্বাধীনতা তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন জনগণ জেগে ওঠে রাষ্ট্র হয়ে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

লভ্যাংশ লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার9 hours ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানালো ওয়াটা কেমিক্যালস

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়াটা কেমিক্যাল লিমিটেড গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি আলোচিত বছরের...

লভ্যাংশ লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার10 hours ago

নগদ লভ্যাংশ দেবে ন্যাশনাল টিউবস

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি আলোচিত বছরের...

লভ্যাংশ লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার10 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না আল-আমিন কেমিক্যাল

ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটের (ওটিসি) কোম্পানি আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা...

লভ্যাংশ লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার11 hours ago

নগদ লভ্যাংশ দেবে সামিট অ্যালায়েন্স

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি আলোচিত...

লভ্যাংশ লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার11 hours ago

মার্জিন ঋণের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির নতুন বিধিমালা জারি

পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণ কার্যক্রমের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্জিন)...

লভ্যাংশ লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার13 hours ago

ফাইন ফুডসের আয় বেড়েছে ৩১৫ শতাংশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফাইন ফুডস লিমিটেড গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত...

লভ্যাংশ লভ্যাংশ
অর্থনীতি15 hours ago

২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগের আলটিমেটাম

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। গতকাল এক সংবাদ...

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
লভ্যাংশ
আইন-আদালত8 hours ago

১৯৩ নন-ক্যাডারকে সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে নিয়োগের নির্দেশ

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার9 hours ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানালো ওয়াটা কেমিক্যালস

লভ্যাংশ
রাজধানী9 hours ago

মশার ওষুধ প্রয়োগ তদারকিতে নামছে ডিএসসিসি

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার10 hours ago

নগদ লভ্যাংশ দেবে ন্যাশনাল টিউবস

লভ্যাংশ
রাজনীতি10 hours ago

জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই নিতে চাই: হাসনাত

লভ্যাংশ
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার10 hours ago

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার10 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না আল-আমিন কেমিক্যাল

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার11 hours ago

নগদ লভ্যাংশ দেবে সামিট অ্যালায়েন্স

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার11 hours ago

মার্জিন ঋণের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির নতুন বিধিমালা জারি

লভ্যাংশ
জাতীয়11 hours ago

৬৬ দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দিলো ইসি

লভ্যাংশ
আইন-আদালত8 hours ago

১৯৩ নন-ক্যাডারকে সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে নিয়োগের নির্দেশ

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার9 hours ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানালো ওয়াটা কেমিক্যালস

লভ্যাংশ
রাজধানী9 hours ago

মশার ওষুধ প্রয়োগ তদারকিতে নামছে ডিএসসিসি

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার10 hours ago

নগদ লভ্যাংশ দেবে ন্যাশনাল টিউবস

লভ্যাংশ
রাজনীতি10 hours ago

জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই নিতে চাই: হাসনাত

লভ্যাংশ
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার10 hours ago

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার10 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না আল-আমিন কেমিক্যাল

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার11 hours ago

নগদ লভ্যাংশ দেবে সামিট অ্যালায়েন্স

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার11 hours ago

মার্জিন ঋণের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির নতুন বিধিমালা জারি

লভ্যাংশ
জাতীয়11 hours ago

৬৬ দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দিলো ইসি

লভ্যাংশ
আইন-আদালত8 hours ago

১৯৩ নন-ক্যাডারকে সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে নিয়োগের নির্দেশ

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার9 hours ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানালো ওয়াটা কেমিক্যালস

লভ্যাংশ
রাজধানী9 hours ago

মশার ওষুধ প্রয়োগ তদারকিতে নামছে ডিএসসিসি

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার10 hours ago

নগদ লভ্যাংশ দেবে ন্যাশনাল টিউবস

লভ্যাংশ
রাজনীতি10 hours ago

জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই নিতে চাই: হাসনাত

লভ্যাংশ
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার10 hours ago

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার10 hours ago

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না আল-আমিন কেমিক্যাল

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার11 hours ago

নগদ লভ্যাংশ দেবে সামিট অ্যালায়েন্স

লভ্যাংশ
পুঁজিবাজার11 hours ago

মার্জিন ঋণের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির নতুন বিধিমালা জারি

লভ্যাংশ
জাতীয়11 hours ago

৬৬ দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দিলো ইসি