রাজনীতি
জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে এক বছরেই দেশ ঘুরে দাঁড়াবে: ড. হেলাল উদ্দিন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর, ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে এক বছরেই দেশ ঘুরে দাঁড়াবে। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ দমনের মাধ্যমে দেশেকে সমৃদ্ধশালী করে তোলা হবে। আমীরে জামায়াত ইতোমধ্যে জাতির সামনে ঘোষণা দিয়েছেন জনগণ জামায়াতে ইসলামীকে সরকার গঠনের সুযোগ দিলে জামায়াতের দলীয় কোনো এমপি-কোনো মন্ত্রী ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি নেবে না, কোনো এমপি-কোনো মন্ত্রী সরকারি প্লট বা ফ্ল্যাট নেবে না, কোনো এমপি-কোনো মন্ত্রী নিজ হাতে রাষ্ট্রীয় টাকা চালাচালি করবে না। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য যেই বরাদ্দ দেওয়া হবে কাজ শেষে বরাদ্দকৃত টাকার হিসাব জনগণের সামনে তুলে ধরবে। জনগণের হিসাব জনগণ বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী জবাবদিহি মূলক সরকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জবাবদিহি মূলক সরকার কখনো ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারে না। জামায়াতে ইসলামী বৈষ্যম্যহীন সুখি-সমৃদ্ধ একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র জাতিকে উপহার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকার রমনা থানার আলেমেদ্বীন, মসজিদের খতিব ও ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকা থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ মুক্ত করে এই এলাকাকে শান্তির নীড় হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয়দের ঐক্যবদ্ধ করতে আলেমসমাজের সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন। আলেমদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনামলে আলেমগণ কুরআন ও হাদীসের কথা বলতে পারেনি। তাদের কন্ঠরোধ করা হয়েছে। জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে কথা বলার স্বাধীনতা ও পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। কিন্তু একটি দল সেই স্বাধীনতা ও পরিবেশ নষ্ট করছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী ঐ দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের ভূমিকা আর্বিভূত হয়েছে। তারা আলেমদের কন্ঠরোধ করতে চায়, আলেমদের মসজিদ থেকে বের করে দিতে চায়। এরা ক্ষমতায় বসলে আওয়ামী লীগের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিত সৃষ্টি করবে।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জুলাই সনদ মানুষের মুক্তির সনদ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সনদ। তাই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিকল্প নেই। পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতি হচ্ছে প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন করার উত্তম পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ভোট হলে লাখ-লাখ ভোট পঁচে চাওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিটি ভোটের যথাযথ হিসাব হবে। যেখানে চলমান পদ্ধতিতে একজন প্রার্থী ১ লাখ ভোট পেলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থী যদি ১ লাখ ১ ভোট পায়। তাহলে মাত্র ১ ভোট বেশি পাওয়া প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অপর দিকে ১ লাখ ভোটারের মতামতের কোনো মূল্যায়ন হয় না। ঐ ১ লাখ ভোট বাতিল হয়ে যায়। এই ব্যবস্থায় কখনো জনগণের সরকার গঠিত হয়নি, হতে পারে না। পিআর পদ্ধতির মাধ্যমেই জনগণের সরকার গঠিত হয়, হওয়া সম্ভব। তাই জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব রেখে গণভোটের আয়োজনের দাবি জানান ড. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, গণভোটে জনগণ যেই রায় দিবে জামায়াতে ইসলামী সেই রায় মেনে নেবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’, এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ করা না হলে আবারও ফ্যাসিবাদে উত্থান ঘটবে। জামায়াতে ইসলামীর উত্থাপিত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন হলে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবে বলে জাতি বিশ্বাস করে। ঐ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়তে ইনসাফ ও ন্যায়ের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় সমর্থন দিতে তিনি ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকার আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রমনা থানা আমীর মো. আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন মতিঝিল মিসবাহুল উমুল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মহিউদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ওলামা বিভাগের সভাপতি অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী প্রচার সম্পাদক ও ঢাকা সিটি করর্পোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুস সাত্তার সুমন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফরচুন মার্কেট জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সোহায়ল জামিল, হাফেজ মাওলানা সাইদুর রহমান, মুসলিম উদ্দিন মাদরাসার পরিচালক মুফতি আবু সুফিয়ান সিরাজী, সবজি বাগান জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
রাজনীতি
জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই নিতে চাই: হাসনাত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেই নিতে চাই, অন্য কারো কাছ থেকে নয়।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে এনসিপির তিন পার্বত্য জেলার (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) নেতৃবৃন্দ নিয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এনসিপি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির হাতকে শক্তিশালী করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এনসিপির একটাই কোরাম হবে, সেটি হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোরাম।
তিনি বলেন, এখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোন কোরাম হবে না। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। পরবর্তী বাংলাদেশের নেতৃত্ব এনসিপিই দিবে। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে অনেকে লুকিয়ে কান্না করছে, আমরা জানি কিভাবে কি করতে হবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যারা বাংলাদেশ পন্থী, যারা সৎ মানুষ তাদেরকে এনসিপির দাওয়াত দিতে হবে। যারা জুলাই আন্দোলনে বিরোধিতা করেনি, যারা অপরাধী নয়, যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে তাদের সঙ্গে নিয়ে এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। এনসিপি এবং এর সহযোগী সংগঠনে যার যে সাংগঠনিক কাজ তা আন্তরিকভাবে পালন করতে হবে।
এনসিপির রাঙ্গামাটির প্রধান সমন্বয়ক বিপিন জ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সমন্বয়ক মহিবুল আলম, এনসিপি বিভাগীয় সমন্বয়ক এ এস এম সুজাউদ্দিন, এনসিপির পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক তত্ত্বাবধায়ক ইমন সোহেল, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক জুবায়ের আলম আরিফ, এনসিপি দক্ষিণাঞ্চল সমন্বয়ক ও খাগড়াছড়ির প্রধান সমন্বয়ক মনজিলা ঝুমা, এনসিপি বান্দরবান জেলার প্রধান সমন্বয়ক শহিদুর রহমান সোহেল, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাজমুল হক, কেন্দ্রীয় শ্রমিক শক্তির যুগ্ম আহ্বায়ক কলিন চাকমা প্রমুখ।
সমন্বয় সভায় তিন পার্বত্য জেলার সাংগঠনিক বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
রাজনীতি
অনশনরত তারেকের পাশে রিজভী, বিএনপির সংহতি ঘোষণা
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন থেকে ছিটকে গেছে আমজনতার দল। নিবন্ধন তালিকায় নাম না আসার পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের মূল ফটকের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন দলটির সদস্য সচিব তারেক রহমান। অনশনে বসার পর থেকেই তারেক রহমানকে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংহতি প্রকাশ করেছেন তারেকের অনশন কর্মসূচিতে। তিনি বলেছেন, আমজনতার দলের অবশ্যই নিবন্ধন প্রাপ্য।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের প্রধান ফটকে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন এ বিএনপি নেতা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
সরেজমিন তদন্তের পর নিবন্ধন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় আমনজতার দলসহ ১৯টি দল বাদ পড়ে। তার দলকে নিবন্ধন দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে অনশন করে আসছে সদস্য সচিব মো. তারেক রহমান। অনশনের ৫০ ঘণ্টায় পার যখন করছিলেন বৃহস্পতিবার বিকেলে সংহতি জানাতে যান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এ সময় বিএনপির বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমজনতার দল ইতোমধ্যে আবেদন করেছিল, সে আবেদনটি গ্রাহ্য করা হয় নি। আমি দেখেছি, আরও গুরুত্বহীন কিছু সংগঠন তারাও নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু তারেকের টা দেওয়া হল না কেন, আমি বুঝতে পারলাম না।
রুহুল কবির রিজভী জানান, আমজনতার দলের সদস্য সচিব তারেক এ দেশের স্বার্থে কথা বলেছে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে কথা বলেছে। সে (তারেক) একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে তার বৈধতার জন্য। নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিল। সে তো কোনো গোপন রাজনৈতিক দল করতে চায় নি, আইন সম্মত রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছে। যদি তার উদ্দেশ্য খারাপ থাকতো, তাহলে গোপন রাজনৈতিক দল করে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ করতো। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ তারেক করিই নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বরং রাষ্ট্রে স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, স্বাধীনতার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে এ নেতা (তারেক) কথা বলেছে। আমি দেখেছি, সে গলার মধ্যে মোবাইল ঝুলিয়ে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, স্বাধীনতার স্বপক্ষে কথা বলেছে। দেশকে যারা অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, সে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তারেক। আজ তার দলের নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে নির্বাচন কমিশন কাদের নিবন্ধন দেবে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, কাউকে আমি ছোট করতে চাই না। কিন্তু তার (তারেক) যে চিন্তা, রাজনৈতিক সংগ্রাম, কর্মসূচি অনুযায়ী যে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে, সে রাজনৈতিক দলের (আমজনতার দল) নিবন্ধন অবশ্যই সে প্রাপ্য। এ ন্যায় সংগত কারণে যে অনশন করছে, (৫০ ঘণ্টা পার) তার এ অনশন কর্মসূচির প্রতি আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছি।
মঙ্গলবার অনশন শুরুর পর নির্বাচন ভবনের সামনে আরও কয়েকটি দলের নেতাকর্মীরা সংহতি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছে। বুধবার গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁনও সংহতি প্রকাশ করেন এবং নিবন্ধন দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
রাজনীতি
দ্রুত নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করুন: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা খফরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘টালবাহানা না করে দ্রুত নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করুন। দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করুন। তা না হলে আপনারা ব্যর্থ সরকার হিসেবে চিহ্নিত হবেন। এ জন্য আপনাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে বানচাল করতে চক্রান্ত করছে। তারা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে আবারও অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিবাদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এ দেশের জনগণ কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না।
মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর টাউন হল ময়দানে এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক শিশু আর সাধারণ মানুষের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আবার সেই জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য যারা চক্রান্ত করছে তাদের মনে রাখতে হবে—বিএনপি ভেসে আসা কোনো দল না। অনেক হামলা, মামলা, কারাভোগ আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি আজকে এই অবস্থানে এসেছে।
বিএনপি জনগণের দল। দয়া করে পানি ঘোলা করবেন না। দেশকে অস্থিতিশীল করবেন না। নৈরাজ্য শুরু করবেন না। বিএনপি রাস্তায় নামলে তখন পরিস্থতি ভিন্ন রূপ নেবে।
তিনি সংস্কার কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, ‘৮৩ কোটি টাকা খরচ করে সংস্কার কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সভা করেছে। আমরা প্রতিটি সভাতে মতামত দিয়েছি। ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ প্লাজায় সব দলের স্বাক্ষরে সংস্কারের প্রস্তাব পাস হয়। পরে উপদেষ্টামণ্ডলীর সভা শেষে আসিফ নজরুল বলেছেন, এখনো যা বাকি আছে তা মীমাংসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের সময় দেওয়া হলো। মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দল তাদের হাতের পুতুল।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে তাতে স্বাক্ষর হয়েছে। বাকিগুলো সংসদে সমাধান হবে। ফলে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করুন।’
রাজনীতি
স্মারকলিপি দিতে মিছিল নিয়ে যমুনা অভিমুখে জামায়াতসহ ৮ দল
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি ইসলামি দল আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেবে।
এরই অংশ হিসেবে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানীর শাপলা চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে পুরানা পল্টনে মিলিত হয়েছে জামায়াতসহ আন্দোলনরত আটটি ইলাসমি দলের নেতাকর্মীরা। পল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে সেখান থেকে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করবেন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার পর থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে তারা শাপলা চত্বর অভিমুখে আসতে থাকেন। পরে তারা পুরানা পল্টনে অন্য দলগুলোর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন জানিয়েছেন, মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে শাপলা চত্বর থেকে পুরানা পল্টন মোড় অভিমুখে একটি মিছিল বের হবে। মিছিলটি পুরানা পল্টনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হবে।
তিনি জানান, মিছিলে পল্টন জামায়াতের বিভিন্ন শাখা ও অন্য ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিলি পেশ করতে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রায় অংশ নেবেন।
গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা লিখিতভাবে স্মারকলিপি দেবো। আমাদের দাবি আগের মতোই একেবারে সুস্পষ্ট, গণভোট যেন অবশ্যই নির্বাচনের আগে হয় এবং পৃথক দিনে হয়।
দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি হলো—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম–নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
ইসলামি আটটি দলের মধ্যে রয়েছে—জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
রাজনীতি
বিপ্লব ও সংহতি দিবস নিয়ে তারেক রহমানের বার্তা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মহিমান্বিত আত্মদানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিষ্টরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের মুক্তির পথ প্রসারিত হয়েছে। এখন চূড়ান্ত গণতন্ত্রের চর্চার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এদিন দুপুরে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তিনি এ বার্তা দেন।
দেশবাসীসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের পাশাপাশি সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব শুধু মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা নয়, এদেশে আধিপত্যবাদ বিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অভ্যুদয়ের সূচনা। সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হয়ে সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলো জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও গণতন্ত্র পুণরুজ্জীবনের অঙ্গীকার নিয়ে। তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাত্তোর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজ স্বার্থে দেশকে আধিপত্যবাদের থাবার মধ্যে ঠেলে দেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতাকে চিরদিনের জন্য ধরে রাখা। সেজন্য একদলীয় বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সংগত অধিকারগুলোকে হরণ করে। দেশমাতৃকার এই চরম সংকটকালে ৭৫ এর ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে। জাতির এই গভীর সংকটকালে ৭নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণ ঘটে এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান মুক্ত হন।
এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরী হয় এবং গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু আধিপত্যবাদী শক্তির এদেশীয় এজেন্টরা উদ্দেশ্য সাধনের পথে কাঁটা মনে করে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে। জিয়া শাহাদাত বরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনও ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ বলেও জানান তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আবারও চক্রান্তের গোপন পথে আওয়ামী ফ্যাসিষ্টরা প্রায় ১৬ বছর গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রক্ষমতাকে হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে রাখে। এদের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াকু নেতা-কর্মীদেরকে বিভৎস নির্মমতায় দমন করেছে, আয়নাঘর, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ দূর্নীতি ও অপশাসনের এক ভয়াল রাজত্ব কায়েম করেছিল।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ খালেদা জিয়াকে বন্দী করে বহু বছর মুক্তি দেয়া হয়নি। বার্তায়, সমাজে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ওপর জোর দেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিষ্টরা পরিকল্পিতভাবে দেশীয় কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালাতে সুযোগ দিয়েছিল। তাই আমি মনে করি ৭ নভেম্বরের চেতনায় সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র বিনির্মাণ করতে হবে। আর সেজন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মূহুর্তে অত্যন্ত জরুরী।



