ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম বলেছেন, আমাদের (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) দিকে পুরো জাতি তাকিয়ে আছে। আমরা যেন আমাদের আগামীর বাংলাদেশের জন্য গড়ে উঠতে পারি। বিগত সময়ে ফ্যাসিস্টরা বড় বড় জায়গায় বসে দুর্নীতি, রাহাজানিসহ নানা ধরনের অপরাধ করেছে অর্থাৎ মানুষের ক্ষতির কারণ হয়েছে যার ফলাফল আজ পালিয়ে যেতে হয়েছে। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন ফ্যাসিস্ট হতে না পারে, কেউ যেনো মানুষের উপর জুলুম করতে না পারে পাশাপাশি আমরা যেন নৈতিকভাবে নিজেদেরকে শক্তিশালী করি এবং আধ্যাত্মিক জায়গায় সবচেয়ে বেশি হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় স্থানে শাখা ছাত্রশিবিরের ‘চায়ের আড্ডায় ডাকসু ভিপি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, আমাদের ইনসাফের পক্ষে অবস্থান ও ঐক্যবদ্ধতা নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। ঐক্যবদ্ধের মাধ্যমে জুলাইয়ের শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অখন্ডত্বের প্রশ্নে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে একসাথে লড়াই জারি রাখতে পারি। নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের ও আধিপত্যবাদের কোন ঠিকানা হবে না। বৈষম্যহীন ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার জন্য শহীদ ভাই-বোনেরা জীবন দিয়েছে। সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণ না হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেকে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক রক্তাক্ত ইতিহাস আছে। অনেক মজলুমের কান্না ও হাজারো স্মৃতি আছে। খুনি হাসিনা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে ক্যাম্পাসগুলোকে টার্গেট করেছিল তার মধ্যে ছিল ইবি। আমাদের অসংখ্য ভাই বোনদেরকে রাতের আধারে নির্মম নির্যাতন করেছে। তাদেরকে মেরে মামলা দিয়ে থানায় দেওয়া হয়েছে, পরিবারকে হেনস্তা করা-সহ শিক্ষাজীবনকে বিনষ্ট করার জন্য শত আয়োজন করেছিল। আমাদের সকলের প্রিয় ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাস ভাই এখনো আমাদের মাঝে ফেরেনি। খুনি হাসিনার পেটোয়া বাহিনী তাদেরকে গুম করেছে। আমাদের মজলুম মা-বাবারা তাদেরকে খুঁজছে।
জুলাই ও ইনসাফের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার অহ্বান করে সাদিক কায়েম বলেন, আমরা প্রত্যেকে আবু সাইদ, শহীদ ওয়াসিম, শহীদ তাহের, শান্ত, আলী রায়হানের উত্তরসূরি হয়ে সবসময় জাগ্রত থাকবো। এখানকার ভাই বোনরা সেই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ইনসাফের পক্ষে লড়াই করে জুলাই যোদ্ধারা সবাইকে নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা দেখেছি। জুলাই বিপ্লবের অংশীদার প্রজন্ম বাংলাদেশের যে প্রান্তে অবস্থান করুক আমাদের সকলের লক্ষ্য ও চিন্তা একই সূতায় গাঁথা, মতাদর্শের ভিন্নতা বা রাজনৈতিক দল আলাদা হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ প্রশ্নে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অখন্ডত্বের প্রশ্নে, জুলাইয়ের প্রশ্নে, শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতের প্রশ্নে, ইনসাফের প্রশ্নে আমরা সবাই এক আছি। এই প্রজন্ম যতদিন বেঁচে থাকবে, বাংলাদেশ কখনো পথ হারাবে না। এবং আমাদের শহীদরা যে জন্য জীবন দিয়েছে, যে বিপ্লবের জন্য জীবন দিয়েছে সেই বিপ্লব পূর্ণাঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত থামবো না।
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয় উল্লেখ করে সাদিক কায়েম বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা। বিগত সময় আমাদের পড়াশোনার পরিবেশ দেওয়া হয়নি। প্রতিটা হলগুলোতে গণরুম, গেস্টরুম, র্যাগিং কালচারের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে। শিক্ষাখাতে যে বাজেট পরিমাণ বাজেট দেওয়া দরকার ওই পরিমাণ বাজেট দেওয়া হয়নি। আমাদের গবেষণায় বাজেট ছিল না, লাইব্রেরি সুবিধা ছিল না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এক একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। আমাদের আবাসন সংকট, খাদ্যের অনিরাপত্তা, স্বাস্থ্যের অনিরাপত্তা এভাবে বহু সংকট তৈরি করে রাখা হয়েছিল। আমরা শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সংকটগুলো দূর করবো, ইন’শাল্লাহ। প্রতিটি ক্যাম্পাস হবে জ্ঞান অর্জনের এক একটি হ্যাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান উৎপাদন করা এবং সেই জ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরি করতে কাজ করব। সে স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয় সেই সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের মাধ্যমে আমরা নতুন এক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করব।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ডাকসু কার্যনির্বাহী সদস্য রায়হান উদ্দিন, ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি রেজাউল করিম শাকিল, শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সেক্রেটারি ইউসুব আলীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম