বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশে হিন্দুবিদ্বেষী কোনো সহিংসতা নেই।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদী হাসানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম জেটিও-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
হিন্দুদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগগুলোকে ‘ভুল তথ্য’ আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে ভারতের বিশেষত্বগুলোর একটি হলো ভুয়া খবর।’
২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হয়েছিলাম যখন মানুষ আমাকে অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে ঘোষণা করল। প্রথমে রাজি হইনি, কিন্তু তাদের ত্যাগ দেখে বলেছিলাম, যদি তোমরা এত কিছু ত্যাগ করতে পারো, তবে আমিও মত বদলাই।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কী বলেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, তাকে (শেখ হাসিনা) ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি দুটি কথা বলেছেন। প্রথমত, তারা তাকে (শেখ হাসিনা) রাখতে চান। আমি বলেছি, আমরা আপনাকে বলতে পারব না কী করবেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের নিয়ে কিছু না বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে কিছু না বলেন। তিনি (নরেন্দ্র মোদি) বললেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (ভারত) বরাবরই তাকে (শেখ হাসিনা) সমর্থন করেছে। এখনও তারা আশা করছে, তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফিরে আসবেন পূর্ণ গৌরবে, বিজয়ী নেত্রী হিসেবে।’
সাক্ষাৎকারে মেহেদী হাসান প্রশ্ন করেন, কেন বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজন করতে ১৮ মাস সময় লাগছে? জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের মানুষের বিভিন্ন ধরনের দাবির কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘কেউ এখনই নির্বাচন চায়, আবার কেউ চায় অন্তর্বর্তী সরকার আরও পাঁচ বছর থাকুক। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান দায়িত্ব রয়েছে: সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন।’ ড. ইউনূস আরও উল্লেখ করেন, অন্য দুই দায়িত্ব সময়সাপেক্ষ হওয়ায় নির্বাচন আয়োজন করতে ১৮ মাস লাগছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান স্পষ্ট করে বলেন, আমরা শুধু নির্বাচন করতে আসিনি। আমাদের কাজ হলো- ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলা, যাতে আর কেউ গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে। এ সময় সাংবাদিক মেহেদি হাসান জানতে চান- আপনারা তো একটি অস্থায়ী সরকার। বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব কি নির্বাচিত সরকারের নয়?
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা বলেছি তিনটি কাজ করব। সেটা করেই আমরা সরে যাব। কেউ এ কথা অস্বীকার করছে না যে নির্বাচিত সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এখন যেটুকু করা দরকার, সেটা আমদেরই করতে হবে। সুতরাং এ সময়টুকু কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্যই লাগছে।