অনেকে দেশ থেকে টাকা নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। কবে নাগাদ তারা দেশে ফেরত আসতে পারবেন তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ।
এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, লেবাননে বসবাসকারী বৈধ কাগজপত্রবিহীন প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য নাম নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দূতাবাস। আগ্রহীদের ২৫ থেকে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে। তবে এজন্য ফি অথবা জরিমানা বাবদ ১ লাখ ৪০ হাজার লেবানিজ লিরা এবং উড়োজাহাজের টিকিট বাবদ ৪০০ মার্কিন ডলার জমা করতে হবে। সব মিলিয়ে এ অর্থের পরিমাণ একজন পূর্ণবয়স্কের জন্য প্রায় ৪২ হাজার টাকা। তবে যেসব প্রবাসীর নামে ফৌজদারি বা অন্য কোনো জটিল মামলা কিংবা কোর্টের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, তারা কেবল কোর্টের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর দেশে ফিরে যেতে পারবেন।
দূতাবাসের তথ্য বলছে, লেবাননে বর্তমানে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশী রয়েছেন। এসব বাংলাদেশীর সিংহভাগই নারী কর্মী, যারা দেশটির বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। যদিও অবৈধ বাংলাদেশীর সঠিক সংখ্যার কোনো হিসাব নেই দূতাবাসে। তবে লেবাননে সক্রিয় প্রবাসী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, কাগজপত্রহীন ৪০ হাজারের মতো বাংলাদেশী দেশটিতে বসবাস করছেন। মূলত দেশে ফেরার তাড়া তাদের মধ্যেই বেশি।
গত বছরের শেষের দিক থেকেই মূলত লেবাননে অর্থসংকট চলছে। বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্ধেকেরই কোনো কাজ নেই। যাদের কাজ আছে, তাদেরও বেতন কমে গেছে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। পাশাপাশি বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যও। ফলে সেখানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটি বড় অংশ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। এসব কারণেই বৈধভাবে অবস্থান করা কর্মীরাও দেশে ফিরতে চান।
প্রবাসী কল্যাণ তথ্য বলছে, আউট পাস ছাড়াও বৈধভাবে থাকা প্রবাসীরা লেবানন থেকে দেশে ফিরছেন। গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত লেবানন থেকে ফিরে এসেছেন মোট ৭ হাজার ৭৩৪ জন প্রবাসী বাংলাদেশী। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১ জন পুরুষ এবং ২ হাজার ৬৭৩ জন নারী কর্মী। ফিরে আসা কর্মীদের মধ্যে আউট পাস নিয়ে ফিরেছেন মোট ৪ হাজার ৭৬ জন।
এদিকে নজিরবিহীনভাবে লেবাননের মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ডলারের বিপরীতে লেবানিজ পাউন্ডের ভয়াবহ দরপতন অব্যাহত রয়েছে। ডলারের আন্ত:প্রবাহ কমে যাওয়ায় লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জ্বালানি, গম এবং ওষুধ এবং কিছু প্রাথমিক পণ্য আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের জন্য অবনতিশীল রিজার্ভ ব্যবহার করেছে।
ভর্তুকি শেষ হওয়ার এই খবরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ সংকট দেশটির অর্ধেক মানুষকে দরিদ্র করে দিয়েছে। গভর্নর মঙ্গলবার বলেন, দুই মাসের ভর্তুকি দেয়ার মতো অর্থ আমাদের রয়েছে। দেশটিতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে সরকারের দেয়া ভর্তুকিও শেষ হতে চলেছে।
মহামারি করোনা এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সংকটে বেসামাল লেবাননের শ্রমবাজার। দেশটিতে তাই কাজ করে পর্যাপ্ত আয় করতে পারছেন না প্রবাসী বাংলাদেশিরা। খেয়েপড়ে থাকাই যেখানে দুরূহ, সেখানে দেশে টাকা পাঠানোর কোনো সুযোগই নেই তাদের। এতে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় এক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, একদিকে তারা প্রায় সাত-আট মাস ধরে কোনো কাজ করতে পারছেন না, অন্যদিকে টাকার মূল্য কমে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বলে জানান। তাই সরকারের কাছে দেশে ফেরার আকুতি তাদের।