সেই ভিডিওকাণ্ডে ক্ষমা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন ইবি ছাত্রশিবির কর্মীদের

সম্প্রতি ডাকসুর ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের জুলাই আন্দোলনে বলা ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ অংশটি নিয়ে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছে তারা।

তারা হলেন- ওমর ফারুক (ইইই ২০-২১ সেশন), নাহিদ হাসান (আল কুরআন ২০-২১), নাইমুর রহমান (অর্থনীতি ২১-২২), সোহান (সমাজ কল্যাণ ১৭-১৮), রোকনুজ্জামান রোকন (মার্কেটিং ১৯-২০), মোজাম্মেল (দাওয়াহ ২১-২২), আবদুল্লাহ নুর মিনহাজ (আল হাদিস ২০-২১)।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষের ১২ সেকেন্ড কেটে অনলাইনে অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা এবং আমাদের জুলাইয়ের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে বলে দাবি করেন ছাত্রশিবির কর্মীরা। একই সাথে ‘এটা শুধু আবিদ কিংবা সাদিককে দুঃখ দেয়নি বরং সকল জুলাই যোদ্ধাকে ব্যথিত করেছে’ মর্মে স্বীকারোক্তি দিয়ে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায় আমরা নিজেদের বন্ধুদের মাঝে ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে নিজেদের রুমে মজার ছলে আলোচনা করছিলাম। এতে সাদিক কায়েম ভাই এবং আবিদুল ভাই উভয়কেই নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে ডাকসু নির্বাচনের সময় সাদিক কায়েম ভাইকে নিয়ে ব্যবহৃত বাক্য “তুমিও জানো, আমিও জানি-সাদিক কায়েম পাকিস্তানি” এবং ডাকসু প্রচারণায় ব্যবহৃত আবিদ ভাইয়ের বাক্য “প্লিজ, আপনারা কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না” বলা হয়। আমাদের কথা চলাকালীন আমাদের মধ্য থেকেই একজন মজার ছলে ভিডিও ধারণ করে এবং ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বে অনলাইনে প্রকাশ করে ফেলে।

তবে আমরা দেখতে পাই- ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওর শেষের ১২ সেকেন্ড কেটে অনলাইনে অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে এবং আমাদের জুলাইয়ের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। অথচ এটি নিয়ে ভিডিও তৈরি করা এবং জুলাইয়ে আবিদ ভাইয়ের কৃতিত্বকে হেয় করা বা জুলাই আন্দোলনের স্লোগানকে অবজ্ঞা করা আমাদের কোনো উদ্দেশ্যই ছিল না। বরং আমরা ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণাকালীন কিছু বক্তব্য নিয়ে বন্ধুদের মাঝে কথা বলছিলাম।

এছাড়াও আমরা সবাই জুলাইয়ের আন্দোলনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছি। আর আবিদ ভাইয়ের জুলাইয়ের অবদান এবং তার আর্তনাদ “প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না” সেই কঠিন মুহূর্তে অসংখ্য শিক্ষার্থীর আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও আন্দোলনে প্রাণ-সঞ্চার করেছিল বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পূর্ণাঙ্গ ভিডিওটি প্রকাশ না করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিডিওর কিছু অংশ প্রকাশ করাই বিভ্রান্তির মূল কারণ।

তারা আরও বলেন, মজার ছলে করা আমাদের এই বিষয়টি এভাবে আমাদের জুলাই সহযোদ্ধাদের ব্যথিত করবে- তা আমরা ভাবতে পারিনি, যেহেতু জুলাইয়ের কৃতিত্ব নিয়ে আমরা কোনো রকম কটাক্ষ করিনি। এরপরও বিভ্রান্তির কারণে, বিষয়টি আমাদের যেসব জুলাই যোদ্ধাদের ব্যথিত করেছে, তাদের কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

সংবাদ সম্মেলনে শিবির কর্মীরা বলেন, এখানে কোনো ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে আমরা ভিডিও তৈরি করিনি। পুরো ভিডিও পাবলিশ না করে কেন ১২ সেকেন্ড পাবলিশ করা হলো এতে বোঝা যায় এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে। দুঃখ প্রকাশ করেছি কারণ যেহেতু আমাদের কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না কিন্তু তারপরও একটা ঘটনা ঘটেছে বলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আমরা জুলাইকে ধারণ করি। আমরা কোনোভাবে জুলাইকে কটাক্ষ করতে পারি না। আবিদ ভাই এর স্লোগান তখন সবার মাঝে প্রাণের সঞ্চার করেছিল। আমরা তাকে কোনোভাবে হেয় করতে পারি না। এখানে আবিদ ভাইকে নিয়ে মক করা হয়নি। আমাদের সেই উদ্দেশ্যও ছিলো না। কাউকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ব্যঙ্গ করা হয়নি।

আবিদ ভাইকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য মেসেজ করেছি, মেসেজ ডেলিভারি হয়েছে কিন্তু এখনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি আমরা জুলাইকে ব্যঙ্গ করে ভিডিও তৈরি করিনি বরং ডাকসু নির্বাচনের সময় তাদের কথার এপ্রোচকে মজার ছলে উপস্থাপন করেছি। যেহেতু এটা অপ্রত্যাশিত ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে আমাদের ইচ্ছে ছিলো না কাউকে ইঙ্গিত করে ভিডিও করা, আমরা সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

এটা শুধু আবিদ ভাই কিংবা সাদিক ভাইকে দুঃখ দেয়নি বরং সকল জুলাই যোদ্ধাকে ব্যথিত করেছে। সেজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার সময় মেঘমল্লার বসু এবং আবিদ ভাই যে এপ্রোচে কথা বলেছিলেন আমরা শুধু সেটা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। জুলাই আন্দোলনে কারো ন্যূনতম অবদান থাকলে তাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। সবার অবদানকে স্বীকার করতে হবে। কিন্তু আমাদের কেন জুলাই আন্দোলনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে এটা আমাদের মনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ডাকসুর ফল ঘোষণার রাতে অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নাইমুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করেন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সেটি ভাইরাল হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সোহান হাসান সাকিব নামে এক শিক্ষার্থী ও ওমর ফারুক নামে আরেক শিক্ষার্থী ক্ষমা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন।

অর্থসংবাদ/সাকিব/কাফি

শেয়ার করুন:-
শেয়ার