কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আবাসন, একাডেমিকসহ নানা সমস্যার সমাধান ও বিভিন্ন সংস্কারের জন্য উপাচার্য বরাবর ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন’ নামে একটি প্লাটফর্মের ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বরাবর এ দাবিগুলো উত্থাপন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হক এবং ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সামাজিক ও প্রশাসনিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে উপস্থাপিত দাবিসমূহ হলো: সেশন জট নিরসন, সাজিদ হত্যার বিচার, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ছাত্র সংসদ গঠন, ডিজিটালাইজেশন, আবাসন সংকট নিরসন, চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন, হলের খাবারের মান বৃদ্ধি, ফ্যাসিবাদের বিচার, পরিবহন সংকট, সর্প নিয়ন্ত্রণ, প্রতি বিভাগে ছাত্রীদের কমনরুম নিশ্চিতকরণ, প্রতিটি হল ও বিভাগে ফার্স্ট এইড বক্স রাখা, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু এবং সাইবার বুলিং বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার আবু সায়েম বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের সার্বিক সংস্কার নিয়ে উপাচার্য কাছে ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলাম। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে এগুলো সংস্কার করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে পনেরো দফা পেশ করেছি। তিনি আমাদের দফাগুলো শুনেছেন এবং আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আমরা একটা সময়সীমা দিতে চাই যে আগামীকাল তারা যে আমাদের এ দাবিসমূহ আমালে নিয়ে রোডম্যাপ বা কোনো কার্যক্রম করেছে সেটা সম্পর্কে তাদের কাছে খোঁজখবর নেয়ার জন্য চব্বিশঘণ্টা পরে আবারও তাদের কাছে আসবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি এখানেই শেষ না। আমাদের দাবি চলমান। আমাদের দাবি ততদিন চলবে যতদিন না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিপূর্ণরূপে সংস্কার হচ্ছে। সে দাবিটা থেকেই যারা এখানে উপস্থিত আছি তাদের সবার অনুমতিক্রমে একটা প্লাটফর্ম দাড় করাচ্ছি। সে প্লাটফর্মের নাম হচ্ছে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন’ বা ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি রিফর্ম মুভমেন্ট’ (আইইউআরএম)। এরপর থেকে এ ব্যানারে উপাচার্যের কাছে যাবো। বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের জন্য কি পদক্ষেপ তারা নিচ্ছেন তার জবাবদিহি নিতে আমরা যাবো। এবং সে জবাবদিহিতার ভিত্তিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যেটা করা লাগে তা আমরা করবো। আমাদের দাবিগুলোকে আরও বেগবান করার জন্য এবং ছাত্রদের কাছে আরও বেশি পৌছানোর জন্য আমরা আগামীকাল বেলা এগারোটা বা বারোটার দিকে একটি মানববন্ধন করবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা এর আগে দেখেছি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছাড়া কোনো পরিবর্তন আসে না। আমরা যখন কন্ঠ উচু করি তখনই কাজ হয়। কন্ঠ স্বাভাবিক রাখলে কোনো কাজই হয় না। তখন আমরা কোনোকিছুই পাইনা। এটা একটা চিরন্তন বাস্তবতা। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখেই আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো এবং সংস্কার না করা অব্দি থামবো না। আজ উপাচার্য আমাদের যে আশ্বাসগুলো দিয়েছেন সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হোক যেন সংস্কার আন্দোলনটা এখানেই থেমে যায়। আমাদের যেন আর আন্দোলন করা না লাগে।
‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন’ এর কার্যক্রম পরিচালনা কিভাবে হবে এসম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সেভাবে কোনো কমিটি রাখবো না। কারণ এতে বিষয়টা দলীয় হয়ে যায়। অনেক সময় পদ-পদবির লোভ এসে যায়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীই এ প্লাটফর্মের সদস্য। কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য হয়তো একটা আহ্বায়ক কমিটি রাখতে পারি যেখানে ১ জন আহ্বায়ক ও ৩৬ টি বিভাগ থেকে ৩৬ জন প্রতিনিধি থাকতে পারে।
উপাচার্যের কার্যালয়ে তাদের দাবি পেশ করার পর ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ তাদের দাবিগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
অর্থসংবাদ/সাকিব/কাফি