ইবিতে ত্রুটিপূর্ণ বাস উদ্বোধন, ১ মাসে নতুন সংযোজনের আশ্বাস

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পরিবহন পুলে শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্ত হয়েছে নতুন চারটি ভাড়াকৃত ডাবল ডেকার বাস। পাবনা বাস ডিপো থেকে ভাড়া করা হয়েছে এসব বাস। তবে এসব বাস ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার অভিযোগ এসেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। তবে ১ মাসের মধ্যে নতুন সংযোজন হবে বলে আশ্বাস দেন পরিবহন প্রশাসক ও বিআরটিসি পাবনা ডিপোর ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবু।

রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় এসব বাস উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মনজুরুল হক, পরিবহণ প্রশাসন অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ, পাবনা বাস ডিপোর ডেপুটি জেনারের ম্যানেজার (ডিজিএম) মনিরুজ্জামান বাবু সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে সবাই বাসে চড়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন।

জানা গেছে, এই বাসগুলো ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলেছিলেন। যার ফলে দুর্ঘটনা-সহ বিভিন্ন কারণে বাসগুলোতে ত্রুটি রয়েছে।

জানা গেছে, পরিবহন পুলে মোট বাস রয়েছে ৫৬টি। নতুন ডাবল ডেকার চারটি ভাড়া বাস যুক্ত হয়ে এই সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০টি। তার মধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ৮টি এসি বাসসহ নিজস্ব বাস ২৪টি এবং ভাড়াকৃত ৩৬টি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ৬টি বাস। বাকি নিজস্ব বাসগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব ডাবল ডেকার বাস আছে একটি এবং সর্বশেষ সংযোজনসহ ভাড়াকৃত ডাবল ডেকারের সংখ্যা ১৩টি। বাকিসবই ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, উদ্বোধন হওয়া বাসগুলোর বডির যেখানে সেখানে ভাঙ্গা, সামনের গ্লাস ও একাধিক জানালায় জোড়া-তালি দেওয়া। তাছাড়াও বাসগুলোতে ছোটবড় অনেক ত্রুটি রয়েছে। চালকরা জানিয়েছে, বাসগুলো ঢাকায় চলাচল করার কারণে এমন হয়েছে। তবে ইঞ্জিন ঠিক আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ভাড়া করা ত্রুটিপূর্ণ বাস উদ্বোধন করতে দেখিনি। আমরা আশা করেছিলাম নতুন বাস, পরে শুনলাম ভাড়া করা পুরোনো বাস উদ্বোধন করেছে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজমিন বলেন, শিক্ষার্থীর দুর্ভোগ কমানোর জন্যে যদি তারা বাস আনে তাহলে নতুন বাস কেন আনলো না। ফিটনেসহীন গাড়ী শিক্ষার্থীদের আরো দূর্ভোগ বাঁড়াবে। কেননা বর্তমান যে ডাবল ডেকার সহ অন্যান্য বাস যে গুলো আছে যেগুলো মাঝরাস্তায় হুটহাট বন্ধ হয়ে যায়, অটো ইঞ্জিনে আগুন লাগে, এগুলোর কারণ যদি খুজতে যাই অনেক গুলো আসবে তার মাঝে প্রধান হলো ফিটনেসহীন লক্কর-ঝক্কর গাড়ি। একে রাস্তা খারাপ তার উপর এমন পুরাতন গাড়ি শিক্ষার্থীর জীবনের কতটুকু নিরাপত্তা দিবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের, শিক্ষকদের কোন ফিটনেসবিহীন গাড়ি বরাদ্দ হয় না কিন্তু শিক্ষার্থীর জন্যে কেন বারবার পুরাতন গাড়িগুলো বরাদ্দ হয়। প্রতিবছর বাজেট হয় এবং শিক্ষার্থীরা পরিবহন ফি জমা প্রদান করে কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্যে ভালো পরিবহনের ব্যবস্থা হয় না।

এবিষয়ে পাবনা ডিপোর ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবু বলেন, উপাচার্যের অনুরোধের ভিত্তিতে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে বিআরটিসির চারটি বাস দিতে পেরেছি। ২০১৯ সালের পর বিআরটিসিতে কোনো দ্বিতল বাস আসেনি। বিআরটিসির প্রত্যেক বাসের লাইফটাইম হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ বছর। সেই হিসেবে আজকে সংযুক্ত বাসগুলো ২০১৯ সালের তৈরি হলেও এখনো চলাচলের উপযুক্ত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বাসগুলোর আরও সংস্কার করা হবে যেন বোঝা না যায় বাসগুলো পুরাতন। চালকদের ট্রেনিং, বাসের মধ্যে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা, ফ্যান লাইট এবং ডেকোরেশনের জন্য এক মাস সময় নিয়েছি এবং আশাকরি এই সময়ের মধ্যে বাসগুলো রিফর্ম করতে পারবো।’

ইবির পরিবহণ প্রশাসন অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ বলেন, ইউজিসির কিছু কন্ডিশন থাকায় আমরা বাস কিনতে পারছি না। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকায় বাস কেনা এখন সম্ভব না। বিআরটিসি হলো সরকারি পরিবহন সার্ভিস। ২০১৯ সালে ৯টি বাস এবং আজকে চারটি বাস সহ পরিবহন পুলে বিআরটিসির ১৩ টি বাস সংযুক্ত হলো। বিআরটিসির চেয়ারম্যান উপাচার্যের সাথে কথা বলেছেন। উনি জানিয়েছেন, আপতত বিআরটিসির রিফাইন্ড বাস দেয়া হয়েছে যা পরবর্তীতে নতুন বাস যুক্ত করার সুযোগ আসলে পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ রুটে চলাচল করে সেহেতু আগামীকাল থেকে বাসের সময় এবং পরবর্তীতে নামকরণ করা হবে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকেশনগত সমস্যার কারণে যানবাহনের উপর নির্ভর করতে হয়। আজকের এই চারটি দ্বিতল বাস শিক্ষার্থীদের জন্য নিবেদিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণমাত্রায় আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা উত্তরোত্তর যানবাহন ব্যবস্থা উন্নত করে যাবো। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা হয়েছে। তারা নতুন সংযোজন আসলে আমাদের বাসগুলো পরিবর্তন করে দিবে।

অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার