পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠান সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. এম এ কাসেমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, নির্বাচিত ভূমি কেনাকাটায় ৩০৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার, বিলাসবহুল গাড়ি বাজেট ব্যবহার, অতিরিক্ত সিটিং ভাতা গ্রহণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল সাউথইস্ট ব্যাংকে এফডিআর করার মতো গঠনমূলক কেন্দ্র নিয়ে অনিয়মের অনুসন্ধান ও তদন্ত চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুদক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এম এ কাসেমের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি অনুসন্ধানে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে দুদক। অনুসন্ধান টিমের সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক আজিজুল হক, সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী মুসা জেবিন ও সহকারী পরিচালক আল-আমিন।
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এ কাসেম ক্যাম্পাসের উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা হস্তন্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কাসেম কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয় দেখানো, ডেভেলপার কোম্পানি থেকে কমিশন নেওয়া, ছাত্রদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, লাখ টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ অ্যালাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও অজ্ঞাত কারণে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি পূর্বাচল সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ২৫০ বিঘা নিচু জমি কিনে প্রায় ৪২০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন। তারা ২০১৪ সালে আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভলপার্স লিমিটেডের কাছ থেকে ৮০ কোটি টাকার জমি ৫০০ কোটি দেখিয়ে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। এরপর নিচু জমি ভরাটের নামে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা লোপাট করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির অর্থ থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের ৯ জন সদস্যের জন্য ২৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিলাসবহুল আটটি রেঞ্জ রোভার ও একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি কেনা হয়। এ গাড়ির চালকদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং তেলের খরচও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে বহন করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অমান্য করে আটটি কমিটির বিপরীতে ২৫টি কমিটি গঠন করে অতিরিক্ত সিটিং অ্যালাউন্স আদায় করেন। এসব কমিটির মাধ্যমে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সম্পত্তির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য ২০২১ সালের ৩১ আগস্টের হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট অর্থের ৪৩ শতাংশেরও বেশি ৪০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা নিজেদের মালিকানাধীন সাউথইস্ট ব্যাংকে জমা রেখেছেন। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে এম এ কাসেমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।