ক্যাটাগরি: রাজনীতি

পিআর পদ্ধতিতে ভোট না হলে জনগণ ফের রাজপথে নামবে: ড. হেলাল উদ্দিন

পিআর পদ্ধতির দাবি আদায় না হলেও আবারও জনগণ রাজপথে নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন।

তিনি বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে আবার জুলাই আসবে। জুলাই চেতনাই হচ্ছে, ক্ষমতা নয় জনতা। জনতা যেভাবে চায় রাষ্ট্র সেভাবেই পরিচালিত হবে। দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন চায় কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কার স্বার্থে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিচ্ছে না জনগন সেটি জানতে চায়। সরকারের ভূমিকায় ইতোমধ্যেই জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। নির্বাচিত রাজৈনৈতিক সরকার জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সেই সনদ বাস্তবায়ন করবে এটি জাতি বিশ্বাস করে না। কারণ নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দ্বারাই রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস হয়েছে।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহবাগ থানার দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শাহবাগ পূর্ব থানা আমীর আহসান হাবীবের সভাপতিত্বে ও শাহবাগ পশ্চিম থানা আমীর এডভোকেট শাহ মাহফুজুল হক চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত দায়িত্বশীল সমাবেশে শাহবাগ পূর্ব ও পশ্চিম থানা নায়েবে আমীর, সেক্রেটারিবৃন্দ এবং মজলিসে শুরা ও কর্মপরিষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় তিনি আরো বলেন, পুরোনো ব্যবস্থা বাংলাদেশ আর চলতে পারে না। যেই ব্যবস্থায় শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়েছে সেই ব্যবস্থা পরবর্তীতে যারাই ক্ষমতায় আসবে তারাও ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে। বরং কারো কারো দলীয় কর্মকান্ডে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, তারা কোনমতে একবার ক্ষমতায় বসতে পারলে শেখ হাসিনার চেয়েও বেশি স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট হবে। শেখ হাসিনার তৈরি সংবিধান জনগণ মানে না বলেই জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। যেই সংবিধান জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে সেই সংবিধান জনগণ মানে না, মানবে না। তাই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সংবিধান সংস্কার করে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং তার পরবর্তীতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে জনগণের সংসদ ও জনগণের সরকার গঠন করে সেই সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সম্মানের সাথে বিদায় নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করার ফলে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যারা রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে তাদের দ্বারা কখনোই রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। অতীতের রাজনৈতিক সরকার গুলো কেউ দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান করেছে, কেউ লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে বেগম পাড়া গড়ে তুলেছে। এসব দলের দ্বারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী পুরো জাতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর যেই আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল হবে। জনগণ কোনো বিশ্বাসঘাতককে ছেড়ে দেয় না, দিবে না।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে, সেই সময়ের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব। কারণ সরকারের নির্বাচনি রোডম্যাপ মোতাবেক এখনো ০৬ মাস সময় হাতে রয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণহত্যার বিচার নিশ্চিত ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের আয়োজন করতে সর্বোচ্চ ১ মাস হলেই যথেষ্ট। জনগণের দাবি পূরণে সময়ের চেয়ে আন্তরিকতা বেশি জরুরী। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই চেতনা ধারণ করে দেশপ্রেমের প্রমাণ দেওয়ার আহ্বান জানান।

ভুয়া ও হয়রানিমূলক রিটকারীর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরী মন্তব্য করে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ডাকসু নির্বাচন বানচাল করতে যেভাবে ভুয়া ও হয়রানিমূলক রিট দায়ের হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতেও এমন আরও ভুয়া রিট দায়ের হতে পারে। ভুয়া ও হয়রানিমূলক রিট বন্ধে আদালতের উচিত ভুয়া রিটকারীর শাস্তি নিশ্চিত করা। ভুয়া ও হয়রানিমূলক রিট দায়ের হলে একদিকে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট হয় অপরদিকে মানুষ হয়রানির শিকার হয়। তাই ভূয়া ও হয়রানিমূলক রিটকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে তিনি আদালতের বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন:-
শেয়ার