চাঁদাবাজি বাদ দিয়ে কাজ করুন, দেখবেন সংস্কার এমনিতেই হয়ে গেছে।
কেউ রাজনীতি করবে না বাংলাদেশে, যেদিন দেখবেন দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এই বন্ধ করার জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, সেটি হলো রাজনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা—মানে লাইসেন্স বাতিল করা। লাইসেন্সটা কী জানেন? রাজনীতি। সব চাঁদাবাজিই কোনো না কোনো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় জন্ম নেয়। তার মানে কি বুঝাতে পারলাম?
স্বপ্ন দেখছেন এবং আপনাকে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে—একজন দেশের বড় নেতা হবেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ তিনি জীবনে কোনো কাজ করেননি! মানুষ হিসেবে তো আমাদের জন্ম হয়েছে কাজ করার জন্য। এখন যদি কাজ বলতে কেবল চাঁদাবাজির সংগঠন চালানো বোঝায়, তবে বন্ধ করে দেওয়া হোক সকল সৃজনশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসহ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ এগুলোর কিছুই ডিজার্ভ করে না।
আশ্চর্য লাগে, এআই প্রযুক্তির যুগেও বাংলাদেশে দিনদুপুরে চাঁদাবাজি হয়, আর প্রতিটি রাজনৈতিক লাইসেন্সধারী সংগঠন বিদ্যমান আইন অনুযায়ী চলতে থাকে—এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! এখন সবাই উঠে পড়ে লেগেছে পুরো দেশটিই যেন চাঁদাবাজদের নেত্রাধীন হয়ে যায়। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব যাকে দেওয়া হয়েছে, তিনি আর কেউ নন—তিনি হচ্ছেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে!
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—কোথায় থামবে এই দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মহোৎসব? মানুষ কি সত্যিই রাজনীতি ছাড়া চলতে পারবে না? উত্তর হচ্ছে, পারবেই। শর্ত হচ্ছে, রাজনৈতিক লাইসেন্স বাতিল করে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে জনগণের সেবার জন্য খাঁটি পেশাগত নীতির ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে হবে। তখনই বোঝা যাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে আলোকিত মানুষ গড়তে পারে, শিল্প প্রতিষ্ঠান কীভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে সত্যিকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
আমরা ভুলে গেছি—রাষ্ট্র হলো মানুষের জন্য, মানুষের শ্রম ও মেধার বিকাশের জন্য। অথচ এখানে রাষ্ট্র যেন কেবল একদল লুটেরার সম্পত্তি। প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি বাজারে, প্রতিটি প্রশাসনিক দপ্তরে দেখা যায় চাঁদাবাজির অশুভ ছায়া। যে ছায়ার কারণে এক কৃষক তার ফসলের দাম পায় না, এক শিক্ষক তার প্রাপ্য সম্মান পায় না, এক যুবক তার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পায় না।
তাহলে পথ কী? পথ একটাই—রাজনীতির নামে চাঁদাবাজির বাজার বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রকে এমন এক নতুন সামাজিক চুক্তির পথে হাঁটতে হবে যেখানে নাগরিকের কাজই হবে রাজনীতি, কিন্তু সেটা হবে কর্ম ও সৃজনশীলতার রাজনীতি। যেখানে ভোট মানে দলবাজি নয়, বরং কাজের হিসাব। যেখানে নেতা মানে ক্ষমতার আসনে বসা ব্যক্তি নয়, বরং সেবার মানদণ্ডে দাঁড়ানো একজন প্রকৃত মানুষ।
যদি এই সংস্কার না হয়, তবে বাংলাদেশ কখনোই দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কালো খোলস ভেদ করতে পারবে না। আমরা কেবল এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের হাতে হস্তান্তর করব হতাশা, ব্যর্থতা আর অচল রাজনীতির অভিশাপ।
কিন্তু যদি হই আমরা দৃঢ়, যদি সত্যিই চাই পরিবর্তন—তাহলে নতুন প্রজন্মকেই নেতৃত্ব নিতে হবে। রাজনীতির লাইসেন্স বাতিল করে নাগরিক সমাজকে করতে হবে জবাবদিহির আসল শক্তি। তখনই চাঁদাবাজি থামবে, দুর্নীতি ভাঙবে, এবং বাংলাদেশ তার প্রকৃত সম্ভাবনায় উন্মোচিত হবে।
অন্যথায়, একদিন মানুষ বলবে— “বাংলাদেশ ছিল এক সম্ভাবনার দেশ, কিন্তু তার সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে রাজনীতির নামে চাঁদাবাজির লাইসেন্স।”
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com