চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত বাজেটে বিস্কুট ও পাউরুটির ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে এই ভ্যাট প্রত্যাহার করা না হলে বিস্কুট-পাউরুটির দাম বাড়ানোসহ প্যাকেট আরও ছোট করার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
শনিবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বিস্কুট-পাউরুটির কাঁচামাল গম, তেল ও চিনির দাম বাড়লেও আমরা পণ্যের দাম বাড়াইনি। কিন্তু সরকার ভ্যাট বাড়িয়ে আমাদের ওপর বোঝা চাপিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিস্কুট-পাউরুটি দিয়ে নাশতা করে। এগুলোকে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করে ভ্যাট শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে কোম্পানির ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি করা হোক, কিন্তু বিস্কুট-পাউরুটির ওপর নয়।
তিনি বলেন, আমাদের লজ্জা লাগে আরও কত প্যাকেট ছোট করবো। ভ্যাটের কারণে একদিন দেখা যাবে, শুধু প্যাকেট থাকবে কিন্তু বিস্কুট ও পাউরুটি থাকবে না।
শফিকুর রহমান বলেন, আগে যাকে আমরা ফ্যাসিস্ট বলতাম, তারাও পাউরুটি-বিস্কুটের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট রেখে গেছে। তাহলে এখন কেন ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট করা হলো? আমার প্রশ্ন তাহলে ফ্যাসিস্ট কারা? ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে দাম বাড়বে তখন আমাদের দায়ী করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবাদ-সমালোচনা উপেক্ষা করে শ্রমজীবী, ছাত্র ও সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের খাবার রুটি-বিস্কুটে বাড়তি ভ্যাট চাপিয়ে সরকার প্রমাণ করছে, তারা পূর্ববর্তী সরকারের চেয়েও বৈষম্যমূলক ও পশ্চাৎপদ করনীতির দিকে যাচ্ছে, যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার সরাসরি পরিপন্থি।
শফিকুর রহমান বলেন, সরকার সুপারশপগুলো থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে, অথচ গরিবের নিত্যখাদ্যে ভ্যাট বাড়িয়েছে। ধনীদের জন্য ছাড়, আর গরিবের খাবারে কর কেন? এটা কেবল বৈষম্যমূলক নয়, বরং অনৈতিক এবং জাতিকে অপমান করার শামিল।
অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন মামুন বলেন, গবেষণা প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, শ্রমজীবী মানুষ ও ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন রুটি ও বিস্কুট খেয়ে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করে। আবার বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে বাংলাদেশ ‘রেড জোনে’। এ পরিস্থিতির মধ্যে গরিবকে শোষণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের অনৈতিক ও পশ্চাৎপদ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
তিনি বলেন, আমরা অনেকবার বলেছি, যদি রাজস্ব সংগ্রহ করতে চান, তাহলে আমাদের শিল্পের চেয়ারম্যান ও ধনী ব্যবসায়ীদের ওপর ট্যাক্স আরোপ করুন। কিন্তু ভ্যাট কেন? সরকার আসলে বিস্কুট-রুটি কোম্পানিকে ব্যবহার করছে গরিব শোষণের হাতিয়ার হিসেবে। আমরা এই ভূমিকায় যেতে চাই না। এ ভ্যাট পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে।
শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা মনে করি চাল-ডালের মতোই বিস্কুট রুটি নিত্যপ্রয়োজনীয়। তাহলে রুটি বিস্কুটে ভ্যাট কেন থাকবে?
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড মেনুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্দ্রজিৎ সরকার, কিষওয়ান ফুড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আবদুর রহমান প্রমুখ।