‘ইকসু গঠন আন্দোলন’ আত্মপ্রকাশ ইবি শিক্ষার্থীদের, ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠন ও রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে ‘ইকসু গঠন আন্দোলন’ নামে নতুন প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত ৯টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসিতে (ক্যাফেটেরিয়া) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা আরম্ভ করে তারা। সংবাদ সম্মেলনে আগামী শনিবার (২৩ আগস্ট) অবস্থান কর্মসূচি ও ইকসু গঠনের পক্ষে শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর গ্রহণের কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্লাটফর্মটি।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের দাবি-২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আমরা যখন বারংবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছাত্র সংগঠন গুলোকে ইকসু গঠনের দাবি নিয়ে যেতে দেখেছি, তখন আমরা বারবার আশায় বুক বাবলেও প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন না থাকার দোহাই দিয়ে ইকসু গঠনে অনাগ্রহ দেখিয়েছে।

আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, আইনে না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে ইকসু গঠন করা সম্ভব। কিন্তু অজানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার ইকসু গঠনে অনীহা দেখিয়েছে। অথচ আমাদের চব্বিশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নয় দফার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিলো–প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তারা আরও বলেন, আমাদের বারবার ভাবিয়েছে সেটা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য নিবেদিত ও নির্ভরযোগ্য কোন প্লাটফর্ম এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠেনি। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি নিয়ে প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করলেও তার বাস্তবায়ন খুবই কম এবং তার অগ্রগতি খুব একটা হয়নি বললেই চলে।

প্রতিটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন শিক্ষার্থীদের। জন্য বা ক্যাম্পাস সংস্কারের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করলেও রাজনৈতিক এজেন্ডা সমূহও এর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে যেয়ে নিরেট শিক্ষার্থীদের জন্য যে সবসময় দাবি-দাওয়া উপস্থাপন এবং প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে কার্যকরী সমাধান করতে পারে সেরকম এমন একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ছাত্র সংসদ। কিন্তু অত্যন্ত হতাশা ও দুর্ভাগ্যের বিষয় যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫০ বছরের কাছাকাছি হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ছাত্র সংসদ গঠন করা হয়নি।

অভিযোগ তুলে তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কথা বলা, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত বাবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা, হলে সিট বণ্টনে প্রভোস্টকে সহযোগিতাসহ শিক্ষা ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট জাতীয় ইস্যুতে কথা বলার মাধ্যমে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের সুযোগ করে দেয় ছাত্র সংসদ। কিন্তু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের কোন অস্তিত্বই নেই। বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের নিজেদের স্বার্থে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে দেয় না।

অথচ শিক্ষক সমিতির নিয়মিত নির্বাচন হয়, কর্মকর্তা সমিতির নির্বাচন হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ও নির্বাচন হয়; কিন্তু ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়াতে যেমন ছাত্ররা অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি দেশ কোনো মেধাবী নেতৃত্ব পাচ্ছে না। অপরদিকে নব্বই দশকের পর থেকে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য, হল দখল, গেস্টরুম কালচার থামছেই না।

তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমরা দেখেছি বিভিন্ন নাবিদাওয়া উপস্থাপনের পাশাপাশি গুরুত্ব সহকারে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ইকসু গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি সিতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইকসু গঠনের জন্য কোন পদক্ষেপ তো নেয় ই নি বরং বারবার আইনের দোহাই দেখিয়ে ইকসু গঠনকে থামিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের অচলায়তন ভেঙে যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং রাকসু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গঠন এবং নির্বাচন অত্যন্ত জরুরী।

স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং কোনমতেই এই অধিকার থেকে কোন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা চলবে না। হুকযু কোন একক বাক্তির বা একক সংগঠনের না, ইকসু আমার, আপনার এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর। ইকসুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছিলেন তাদের উদাত্তকণ্ঠে আমাদের এই ইকসু গঠন আন্দোলন-এর সাথে একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানাই।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইকসু গঠনের স্বার্থে প্রয়োজনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেকোনো ব্যানার বা কর্মসূচিতে মাঠে থাকবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্লাটফর্মটি। তবে ৮ জনের নাম উল্লেখ করা সংবাদ সম্মেলনটি সবার প্রতিনিধিত্ব করে কিনা প্রশ্ন উঠেছে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দাবি- ইকসু গঠনের জন্য নারী শিক্ষার্থী, সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।

অর্থসংবাদ/কাফি/সাকিব

শেয়ার করুন:-
শেয়ার