সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানায় থাকা যুক্তরাজ্যে শতাধিক সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসক প্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ট থর্নটন। বাংলাদেশ সরকার ও দুদকের অনুরোধে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) তাঁর এসব সম্পদ জব্দ করে আদেশ জারি করে।
গত সোমবার টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বিক্রি হওয়া সম্পত্তির অর্থ দিয়ে মূলত দুবাই ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ শোধ করা হবে। ঋণদাতাদের তালিকায় রয়েছে সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংক এবং ব্রিটিশ আরব কমার্শিয়াল ব্যাংক।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গতকাল বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের কোম্পানিজ হাউসে তারা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ কোটি ডলার পাউন্ড (প্রায় ৩৫ কোটি ডলার) দাবি করেছে। টেলিগ্রাফের খবরেও তার উল্লেখ আছে। ইউসিবি থেকে পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ও দুবাইতে সম্পদ কেনা হয়েছে বলে ব্যাংকটি দাবি করেছে। ব্যাংকের অডিটে এ সম্পর্কিত প্রমাণ রয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী গত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার আগে ইউসিবির চেয়ারম্যান ছিলেন। বিতর্কের মুখে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সময় তাঁর স্ত্রী রুকমিলা জামান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। স্ত্রী রুকমিলা চেয়ারম্যান হলেও আদতে নেপথ্যে থেকে ব্যাংকটি চালাতেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ড। যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন কোম্পানির অধীনে তিন শতাধিক ফ্ল্যাট ও হাউজিং ব্লক রয়েছে। এসব সম্পদ বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হবে।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ইউসিবি, দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে সাবেক পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার, বেনামি কোম্পানির মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন এবং আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। সেই অর্থ দেশের বাইরে পাচার করে লন্ডন ও দুবাইয়ে বিলাসবহুল সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউসিবি জানিয়েছে, ব্যাংকটির নিজস্ব ফরেনসিক অডিট, দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে সাবেক পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেনামি, কাগুজে কোম্পানির মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন করিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে টাকা সরানোর প্রমাণ মিলেছে। বেনামি এসব ঋণের অর্থ দেশের বাইরে পাচার করে লন্ডন-দুবাইয়ে বাড়ি কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ইউসিবি সেই অর্থই ফেরত চেয়ে আবেদন করেছে।
এরই মধ্যে গত জুলাই মাসে দুদকের দায়ের করা মামলায় আদালতের নির্দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও সাবেক ইউসিবি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ সাত সাবেক পরিচালকের মোট ৫৭০ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। এ তালিকায় বশির আহমেদ, আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এম এ সবুর, বজল আহমেদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী এবং রুকমিলা জামানও রয়েছেন।
ইউসিবি আরও জানিয়েছে, শেয়ার বাজেয়াপ্ত হওয়া ও ব্যাংকটিকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করা কয়েকজন সাবেক পরিচালক আদালতে আবেদন করে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বন্ধের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। অবশ্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এজিএম স্থগিত করতে চাওয়া সাবেক পরিচালকদের মধ্যে আছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বশির আহমেদ, শওকত আজিজ রাসেল এবং এম এ সবুর। ইউসিবি জানায়, বশির আহমেদ একাধিক অর্থ পাচার মামলায় অভিযুক্ত, তাঁর বিদেশ ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে। এ ছাড়া শওকত আজিজ রাসেলের ঋণের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা এবং আরও প্রায় এক হাজার ৯০০ কোটি টাকার ঋণ আদালতের স্থগিতাশের কারণে ‘খেলাপি’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যাচ্ছে না।