সাজিদের রহস্যময় মৃত্যুর নিয়ে ইবিতে সংবাদ সম্মেলন

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ। বিভাগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দাবি আদায় ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নিহত সাজিদের বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মিঝি।

বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মিঝির সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ.ব.ম. ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফি, বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাংবাদিক সংগঠনের সাংবাদিকবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসিরউদ্দিন মিঝি বলেন, “সাজিদ যেহেতু আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী তাই আমাদের দায়বদ্ধতা একটু বেশি। আমরা সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ইতিমধ্যেই আমাদের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি এই ছাত্র অবস্থান করতো শহিদ জিয়াউর রহমান হলে। সেই হলের প্রভোস্ট এবং হলবডির পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিও তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে। সরকারিভাবে পুলিশ প্রশাসন সাজিদ আব্দুল্লাহ যে জায়গায় মারা গিয়েছে সে জায়গা এবং হলসহ প্রয়োজনীয় জায়গা পরিদর্শন করেছে এবং কাজ অব্যাহত রেখেছে।”

তদন্তের সার্বিক বিষয়ে তিনি জানান, “এই লাশ যখন মর্গ থেকে বের করে কবরস্থ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন ছাত্রদের দাবির মুখে এবং শিক্ষার্থীদের ইমোশনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের প্রশাসনের সাথে তাদের এগ্রিমেন্ট হয়েছিল যে দশ কার্যদিবসের মধ্যে, যা পরবর্তীতে ছয় কার্যদিবসে উপনীত করা হয়েছিল সেই কাজও অব্যাহত আছে। সেই কাজটা কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তার ফলোআপ জানার জন্য সাজিদ আব্দুল্লাহর বাবা এবং চাচাসহ কয়েকজন লোক গতকাল আমাদের ক্যাম্পাসে এসেছেন। তারা বিভাগের সাথে মতবিনিময় করেছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সাথেও বৈঠক করেছেন। সংশ্লিষ্ট হলের গঠিত তদন্ত কমিটির সাথে বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ তারা পুলিশ প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে বিদায় নিয়েছেন।

সাজিদের পরিবারের দাবি সম্পর্কে তিনি জানান, আমার সন্তান মারা গেছে। আমার সন্তানের যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয় এবং তদন্তের মাধ্যমে যদি এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়, আমার কোনো কথা নাই। কিন্তু যদি আমার সন্তানের কোনো অপঘাত অথবা কোনো অন্তর্ঘাতমূলক কোনো কার্যক্রমের ফলে মৃত্যু হয় তাহলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার চাই। অর্থাৎ সুষ্ঠু তদন্তের সাপেক্ষে তিনি তারা মৃত সন্তানের বিচার চেয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম, আইন-শৃঙ্খলা ও একাডেমিক কার্যক্রম ব্যহত হয় এমন অথবা সাজিদ আব্দুল্লাহর লাশ যেন কোনো অপব্যবহার বা অপরাজনীতির শিকার না হয় সে ব্যাপারে তিনি অনুরোধ করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, আমার সন্তানের বিচার হচ্ছে আমার প্রধান মুখ্য বিষয়। কিন্তু আমার সন্তানকে কাজে লাগিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি বা অন্তর্ঘাতমূলক কিছু আমি চাই না। আমার মাধ্যমে উনার কথা আপনাদের কাছে পৌছে দিলাম। আপনাদের মাধ্যমে দেশ ও জাতি জানুক যে তিনি কী চাচ্ছেন।”

তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি সাজিদের মৃত্যু এবং আন্দোলন কেন্দ্রিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে, সকল কিছুর প্রচারণা গুলো হতে হবে সঠিক। আপনাদের কাছে এই সহযোগিতা আমি কামনা করছি। সাজিদের রহস্যময় মৃত্যু আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল। আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ হলো মুখ্য বিষয় যেন হারিয়ে না যায়।

এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন বিভাগ, সকল সচেতন ছাত্রজনতা, ছাত্র-সংগঠন ও সাংবাদিকদের সঠিক ও সহায়ক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এটা দুর্ঘটনা না-কি হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাজিদ শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন। অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মৃত্যুর কারণ ও পেছনের সম্ভাব্য রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

কাফি/সাকিব

শেয়ার করুন:-
শেয়ার