কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার পর গাফিলতি ও নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা, অভিযোগ, মানববন্ধন ও আন্দোলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা, সার্চ লাইট ও স্ট্রিট লাইট স্থাপন-সহ নিরাপত্তা জোরদারে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২০ জুলাই) উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। ভিসি কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিংয়ে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহীনুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ওবায়দুল ইসলাম-সহ ইবি সাংবাদিক সমিতি, প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ভিসির রুটিন দায়িত্বে থাকা প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ ছিলেন সজ্জন ও সংস্কৃতিমনা। তার মৃত্যুতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো গাফিলতি নেই। ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত), প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টাসহ সকলেই দিন-রাত আন্তরিকতার সঙ্গে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা সাজিদ আব্দুল্লাহকে হারিয়েছি। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।
তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের মনে যেন দ্বিধা তৈরি না হয় সেজন্য আমরা সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সাজিদ আব্দুল্লাহ’র মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছি। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি জানাচ্ছে তা যৌক্তিক। দাবিগুলো পূরণে তাদেরকে ধৈর্যধারণের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি জানান, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। একজন হাউস টিউটর এবং একজন সহকারী প্রক্টর প্রতিরাতে দায়িত্ব পালন করবেন। ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করা, শান্তিপূর্ণভাবে চলা এবং উন্নয়নের পথে নেওয়ার কাজটি শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি আরও জানান, আমাদের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা- ঘটনা প্রবাহের তথ্য উদঘাটন করা। তবে কাউকে বিচার করা, ফাঁসি দেওয়া আমাদের ক্ষমতা নেই। এটা সম্পূর্ণ পুলিশবাদী কেস। আমরা সর্বোচ্চ পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারি।
সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এতো দিন বিগত প্রশাসনের জবাবদিহিতা না থাকার কারণে আমাদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তৃতা-সহ নানা মাধ্যমে জিজ্ঞেসা করা হয়- ‘প্রশাসন এতো এতো টাকা কী করে?’ আমরা জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার মধ্যে থাকার চেষ্টা করি। দুঃখের বিষয় হলো- হল প্রশাসন থেকে জানানো হয় না তাদের কী প্রয়োজন। প্রশাসনের কোথাও আর্থিক দৈন্যতা নেই। দৈন্যতা আছে ইউজারের, জিনিসগুলো প্রপারলি ইউজ করলে আর কোন ঝামেলা থাকবে না। সাজিদের মৃত্যুর খবর শুনে সাথে সাথে কুষ্টিয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদারে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যেই সার্চলাইট এবং স্ট্রিট লাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। রোববার থেকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। লালন শাহ হল ও শাহ আজিজুর রহমান হল পকেট গেইটে ২৪ ঘণ্টার জন্য দু’জন আনসার সদস্য দেওয়া হয়েছে। থানা গেইটেও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে পুকুর পাড় ও জিমনেসিয়ামসহ বিভিন্ন পয়েন্টে লাইট লাগানো হয়েছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া, আজকেও কিছু স্থানে লাইট স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন চলমান ছিল; আজকে ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ান আসছিল তারা জরিপ করছে কোথায় কোথায় ক্যামেরা স্থাপন করা যায়।
গতকাল (শনিবার) শহিদ জিয়াউর রহমান হলে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজী বলেন, শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। সাজিদ এই হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতো। হলে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। একে একে অন্যান্য সমস্যাগুলোও সমাধান করা হবে৷ সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তে হল প্রশাসন থেকে কমিটি করা হয়েছে এবং তদন্তের কাজ চলছে।
এর আগে গত ১৭ জুলাই বিকেলে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সাজিদ আব্দুল্লাহর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এটা নিছক দুর্ঘটনা না-কি হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাজিদ শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন।
অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মৃত্যুর কারণ ও পেছনের সম্ভাব্য রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
অর্থসংবাদ/সাকিব/কাফি