কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভে সমাবেশ ও দিনব্যাপী প্রশাসন ভবন অবরোধ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থী রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শাখা ছাত্রদল।
অপরদিকে, ইবি পুকুর থেকে শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করতে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শহিদ জিয়াউর রহমান হলে এবং ক্যাম্পাসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভে করতে থাকেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন। তবে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন শেষে র্যালি নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে আসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, এসময়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের লিখিত আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর প্রশাসন ভবনের অবরোধ তুলে নিলেও প্রকৃতপক্ষে দাবিসমূহ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর প্রধান ফটকের তালা খোলা হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা, ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখা ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দাবি জানান।
মানববন্ধনে শাখা ছাত্রদল আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ বলেন, আমার ভাই সাজিদের মৃত্যর ঘটনায় আমরা শোকাহত। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই। কোষাধ্যক্ষকে হুশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে। অর্থের কোন অভাব নেই। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে যা কিছু প্রয়োজন তার সবই আপনাদের করতে হবে। আপনাদের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিনি, আমাদের জন্য আপনারা এখানে এসেছেন।
আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মুহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। প্রশাসনের কাছে জানতে চাই, আমার ছেলে কেন এভাবে মৃত্যুবরণ করলো? এর সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সাথে আমরা থাকবো। যে ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে সাজিদের মত ছেলেরা জীবন দেয়, এই জীবন দেয়ার ব্যবস্থা কে ভেঙ্গে দিতে হবে। সুরক্ষিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে, দুপুরেতদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেনের নেতৃত্বে মরদেহ উদ্ধারের তথ্য ও সাজিদের কক্ষ পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এসময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, রবিবার তার রুমমেট, বন্ধু সার্কেল এবং শিক্ষকদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলা হবে। এ ঘটনার ব্যপারে সাংবাদিকদের নিকট যদি কোন তথ্য থাকে তা প্রদানের জন্য কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, সুরতহাল রিপোর্ট রেজিস্ট্রারের (ভারপ্রাপ্ত) কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে। সাজিদের ব্যবহৃত মোবাইলের এক সপ্তাহের কল রেকর্ডও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)-এর মাধ্যমে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে চাওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাজিদের যোগাযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কমিটির দুজন সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে শহিদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজী বলেন, নির্ধারিত দিনের পূর্বে ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছি এবং প্রশাসনে সাথে মিটিং হয়েছে পরবর্তীতে আরও পর্যাপ্ত ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, তদন্ত কার্যক্রম কীভাবে দ্রুত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোও মেনে নেওয়া হয়েছে। আজকে থেকেই সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। আমরা এখন যত পদক্ষেপ ই নেই না কেন, সাজিদকে তো আর ফিরে পাব না। তবে তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদের আকস্মিক মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। দেশের বাইরে থাকায় সরাসরি আমি উপস্থিত থাকতে না পারা আমার জন্য দুঃখজনক। বিষয়টি জানার পরপরই আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আমি বলেছি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে যতদ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো করছে সেগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। আমরা তাদের দাবির সাথে একমত। শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।
উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা, ছাত্রশিবির’সহ ক্রিয়াশীল সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করেন এবং তাদের সাথে সহাবস্থান করেন।
অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম