রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কহার ইস্যুতে দর কষাকষি করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে দেশটি যেসব শর্ত দিয়েছে, মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত নিয়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বুধবার (১৬ জুলাই) আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আমাদের যে আলোচনা চলছে সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো রয়েছে। ফলে মন্ত্রণালয়গুলোর মতামতগুলো আমাদের নিতে হচ্ছে। মতামত নেওয়ার পর একটা প্রস্তাব ফাইনাল করে আবার যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা হবে।
তবে তৃতীয় দফার আলোচনা বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট কোনো সময় দেয়নি জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘আমরা যোগাযোগ করছি।’
শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় তিনদিনের আলোচনা শেষে গত রোববার দেশে ফিরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অর্থ, কৃষি, খাদ্য, পরিবেশ, জ্বালানিসহ ১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন বৈঠকে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শুল্কহার কমানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত বাংলাদেশকে দিতে চায়, সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আগামী কয়েকদিন পর্যায়ক্রমে এ বৈঠক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনায় দেশটির দেওয়া শর্তগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মতামত দিতে হবে। তার আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।
আজ বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে আমাদের যে আলোচনা চলছে সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিষয়গুলো রয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতগুলো আমাদের নিতে হচ্ছে। এটি প্রসেস।’
তিনি বলেন, ‘এমন বৈঠক এখন চলতে থাকবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে একটা প্রস্তাব ফাইনাল করে আবার আলোচনা হবে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠকের জন্য সময় পাওয়া গেছে কি না- এ প্রশ্নে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘তারা এখনো নির্দিষ্ট সময় দেয়নি। আমরা যোগাযোগ করছি।’
আজ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যসহ বেশকিছু পণ্য আমদানি করি। সেগুলোর বিষয়ে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে কিছু আইন-কানুন রয়েছে। সেসব বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি (শুল্ক ইস্যু) গ্লোবাল বিষয়। সারাবিশ্ব যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে, আমরাও সেটিই করছি।’
জানা গেছে, বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে অনেকাংশে একমত হলেও বাণিজ্যের বাইরের অনেক বিষয় এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দর কষাকষি পর্যায়ে আটকে আছে। আজ বৈঠকে সেরকম কোনো ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব কিছু জানাননি।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের (গোপনীয়তার চুক্তি) কারণে দর কষাকষি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তারা।
গত ৭ জুলাই বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাতে বাংলাদেশি পণ্যে বাড়তি শুল্ক নির্ধারণ করা হয় ৩৫ শতাংশ।
এর আগে ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এসময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে দর কষাকষি করতে পারলে শুল্কহার কমতে পারে, অন্যথায় ঘোষিত হার কার্যকর হবে।