ইবি সাংবাদিকদের ওপর হামলা: ছাত্র সংগঠনগুলোর নিন্দা ও প্রতিবাদ

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃসেশন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাংশ মারামারিতে জড়ান। এসময় মারামারির ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের দফায় দফায় মারধর করেন তারা।

সাংবাদিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্র মজলিস ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।

শনিবার (১২ জুলাই) রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ইবি শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিজ আহমেদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি শাখার দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন স্বাক্ষরিত দুইটি পৃথক বিবৃতিতে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়।

এদিকে রোববার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইবি শাখার দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আবসার নবী হামযা, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ইবি শাখার প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান জুনাঈদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সহ সমন্বয়ক পঙ্কজ রায়, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন তথ্য, গবেষণা ও প্রচার সম্পাদক হাবিব আল মিসবাহ স্বাক্ষরিত পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা ও বিচারের দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে ইবি ছাত্রদল নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমরা মনে করি, আজকের যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তা অনভিপ্রেত ও অনিচ্ছাকৃত ভুল মাত্র। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও সংবাদ কর্মীদের সহনশীল ও সহানুভূতিশীল আচরণের আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীরা একে অপরের পরিপূরক। ভুলত্রুটি ভুলে গিয়ে আমরা সকলেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনমূলক ভূমিকা প্রত্যাশা করি। প্রজ্ঞাপনে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানানো হয়।

ইবি ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর এই নির্মম হামলা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সকলের দায়িত্ব।

অপর এক বিবৃতিতে ইবি ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কয়েকজন সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে এবং একজন সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেয়া হয়েছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। শিক্ষাঙ্গনে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণমাধ্যম হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন সাংবাদিকতা অপরিহার্য। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের ওপর অন্যায়ভাবে হামলা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর আঘাত। আমরা অবিলম্বে এই ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা আহত সকলের আশু সুস্থতা কামনা করছি। সেই সাথে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং সকল ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

বিবৃতিতে ইবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃবৃন্দ বলেন, খেলায় সংঘটিত বিশৃঙ্খলার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত সংবাদকর্মীরা ভিডিও ফুটেজ ধারণ করতে গেলে, অর্থনীতি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী তাঁদের উপর হামলা চালায় এবং মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং সাংবাদিকদের প্রতি সহিংস আচরণের প্রতিবাদ জানায়। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়, বরং তারা একে অপরের পরিপূরক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও সৌহার্দ্য রক্ষায় সবার সম্মিলিত ভূমিকা প্রয়োজন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। আমরা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সকলের পক্ষ থেকে সচেতনতা, সহনশীলতা ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।

বিবৃতিতে ইবি খেলাফত ছাত্র মজলিস নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১২ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃসেশন ফুটবল ম্যাচ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহের সময় অর্থনীতি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থীর হাতে সাংবাদিকদের লাঞ্ছনা ও পেশাগত কাজে বাধা প্রদানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই।সাংবাদিকদের ওপর হামলা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ। এর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। ছাত্র মজলিস আহত সাংবাদিকদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতার প্রত্যাশা করে।

বিবৃতিতে ইবি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নেতৃবৃন্দ বলেন, গতকাল বিকাল ৫:০০টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কতিপয় শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন হতাহতের ঘটনা ঘটে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাই এবং এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষার্থীসহ সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয় এমন সকল কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। আমরা আহত সকলের আশু সুস্থতা কামনা করছি এবং সকল ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সবার সচেতনতা ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

অর্থসংবাদ/সাকিব/এসএম

শেয়ার করুন:-
শেয়ার