কয়েক কার্যদিবস দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বাড়ার পর এখন আবার কমতে দেখা যাচ্ছে। শেষ পাঁচ কার্যদিবসেই বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে পাঁচশোর বেশি। সেই সঙ্গে মাত্র পাঁচ কার্যদিবসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৪ হাজার ১২৯টি।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছিল। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে শেয়ারবাজার ছাড়তে থাকেন। যা অব্যাহত থাকে চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাবে কমে ৯ হাজার ১৭৬টি।
তবে ২০ মে থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বাড়তে দেখা যায়। এই সময়ের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বাড়ে ৭৪টি। এখন মাত্র পাঁচ কার্যদিবসেই ৫০০-এর বেশি বিও হিসাব কমে গেলো। শুধু বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারী নয়- এই পাঁচ কার্যদিবসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবও বড় অঙ্কে কমেছে।
বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।
এই সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে (৩ জুলাই পর্যন্ত) শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৭টি। যা গত ২৬ জুন ছিল ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭০২টি। এ হিসাবে মাত্র পাঁচ কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব কমেছে ৪ হাজার ৭০৫টি।
বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ৪৫ হাজার ৯০৩টি। গত ২৬ জুন বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৪৬ হাজার ৪১০টি। অর্থাৎ পাঁচ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৫০৭টি।
বিদেশিদের বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ছাড়ার প্রবণতা শুরু হয় ২০২৩ নভেম্বর থেকে। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি। এ হিসাবে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবরের পর দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব কমেছে ৯ হাজার ৬০৯টি।
এদিকে হাসিনা সরকার পতনের পর স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে দেখা যায়। তবে শেষ পাঁচ কার্যদিবসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবও কমেছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ২০ হাজার ৩৮৬টি, যা গত ২৬ জুন ছিল ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৫১৫টি। অর্থাৎ শেষ পাঁচ কার্যদিবসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৪ হাজার ১২৯টি।
অন্যদিকে হাসিনা সরকার পতনের সময় স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৩ হাজার ৮২২টি। এ হিসাবে সরকার পতনের পর দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব এখনো ১৬ হাজার ৫৬৪টি বেশি আছে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়লেও তার আগে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়েছেন। ২০২৪ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। আর বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৭টি। অর্থাৎ ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিও হিসাব কমেছে ৮৯ হাজার ৫৫৪টি।
এদিকে বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগকারীরা আছেন, তার মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫১টি। গত ২৬ জুন এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৪টি। অর্থাৎ পাঁচ কার্যদিবসে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব কমেছে ৩ হাজার ৫৩৩টি।
অপরদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িছে ৪ লাখ ২ হাজার ৩৩৮টি। গত ২৬ জুন এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৪৪১টি। এ হিসাবে শেষ পাঁচ কার্যদিবসে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ১০৩টি।
নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি শেষ পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানির বিও হিসাবও কমছে। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৭০৮টি। গত ২৬ জুন এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৭৭৭টি। এ হিসাবে পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানি বিও হিসাব কমেছে ৬৯টি।
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১২ লাখ ৫ হাজার ৩৪৭টি, যা গত ২৬ জুন ছিল ১২ লাখ ৮ হাজার ৫৩১টি। অর্থাৎ পাঁচ কার্যদিবসে একক নামে বিও হিসাবে কমেছে ৩ হজার ১৮৪টি।
এছাড়া বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৪২টি। গত ২৬ জুন যৌথ বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৪টি। অর্থাৎ শেষ পাঁচ কার্যদিবসে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৪৫২টি।
এসএম